নারীদের উদ্যোগে দুর্গাপূজা, আরতি-আরাধনা সবই করছেন নারীরা
শতবর্ষী মন্দিরে নারীদের উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছে শারদীয় দুর্গাপূজা। প্রতিবছর পুরুষরা আয়োজন করলেও এ বছর আয়োজন করেছেন নারীরা। 'নবারন মহিলা সংঘ' নামে নারীদের একটি সংগঠন এ উদ্যোগ নিয়েছেন। সংঘের ১০০ সদস্য ও মহল্লার বাসিন্দাদের চাঁদায় চলছে দেবী দুর্গার আরাধনা।
তবে নারীদের এমন উদ্যোগ ও আয়োজনে মহল্লার পুরুষদেরও রয়েছে পরোক্ষ সহযোগিতা। ব্যতিক্রমী এমন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছেন ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার সলেমানপুর সাহাপাড়ার নবারন মহিলা সংঘ।
মন্দির প্রাঙ্গণে গিয়ে জানা গেছে, শতবর্ষী সলেমানপুর সাহাপাড়ায় প্রতিবছর পুরুষরা দুর্গাপূজার আয়োজন করতেন। তবে গত দুই বছর মন্দিরে দুর্গাপূজার আয়োজন করতে পারেনি মহল্লার পুরুষরা। যে কারণে সাহাপাড়া মহল্লার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আত্মীয় স্বজনরাও পূজার ছুটিতে বেড়াতে আসতে চাইতো না। এবছরও দুর্গাপূজার আয়োজন নিয়ে কোনো তোড়জোড় ছিল না। পরে নবারন মহিলা সংঘ পূজার ২০ দিন আগে একটি মিটিং আহ্বান করে। ওই মিটিংয়ে মহল্লার সকল নারী উপস্থিত হয়ে পূজা আয়োজনে সম্মত হন।

এরপর নারীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাঁদা তোলেন। পূজার বাজার সদায় করা, ডেকোরেটর ভাড়া করা ও মন্দির প্রাঙ্গণ সাজানোর কাজ নারীরা মিলেমিশে সম্পন্ন করেন। পূজা আয়োজন সম্পন্ন করতে নারীরাই গঠন করেছেন একটি কমিটি। ওই কমিটির সকল সদস্য নারী।
আরও পড়ুন-
একই উঠানে শতবর্ষের সম্প্রীতি: লালমনিরহাটে মসজিদ-মন্দির
জলাবদ্ধতা-অভাব-আতঙ্ক, দুর্গাপূজার উৎসব নেই বাড়েধাপাড়ায়
দুর্গোৎসব বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্য ও মিলনমেলার প্রতীক: বিজিবি
সাহাপাড়ার বাসিন্দা সুজিত সাহা বলেন, প্রতি বছর আমরা পুরুষরা পূজার আয়োজন করতাম। এবার নারীরা উদ্যোগ নিয়েছেন। পূজার যাবতীয় খরচাদি ও অনুষ্ঠান মা-বোনেরা মিলে করছেন। আমরা পুরুষরাও তাদের সকল কাজে সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছি।
নবারন মহিলা সংঘের সাধারণ সম্পাদক পূজা সাহা বলেন, দেবী দুর্গার কাছে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনায় পূজা অর্চনা ও আরাধনা চলছে উৎসবমুখর পরিবেশে। গত বছর পুরুষেরা উদ্যোগ না নেওয়ায় আমাদের মহল্লায় পূজার আয়োজন বন্ধ হয়ে যায়। এবছর আমরা পাড়ার দিদি, বৌদি, পুত্রবধূরা মিলে পূজার আয়োজন করেছি। নারী শিশুসহ সব বয়সের মানুষ এখানে আসছে, তারা আনন্দ উপভোগ করছে।

জানা গেছে, সাহাপাড়া মন্দিরে পূজার আনুষঙ্গিক বাজার সদায়, আরতি, আরাধনা থেকে সব কিছুই করছেন নারীরা। নারীরা যেমনি শাঁখ, কাঁসর, উলুধ্বনি বাজাচ্ছেন, একইভাবে প্রসাদ বিতরণ, অতিথি আপ্যায়নের কাজও করছেন। নারীদের এমন উদ্যোগে খুশি নারী ও শিশুরা।
নবারন মহিলা সংঘ ও পূজা কমিটির সভাপতি বেবী রানী সাহা জাগো নিউজকে বলেন, দুর্গাপূজার তিন সপ্তাহ আগে প্রথমে মহল্লার ৩০ জন নারীকে নিয়ে আমরা মিটিং করি। এরপর মহল্লার বাড়ি বাড়ি গিয়ে আমরা চাঁদা তুলেছি। মহল্লার সকলেই দারুণ সহযোগিতা করেছেন। বর্তমানে নবারন মহিলা সংঘে ১০০ সদস্য রয়েছেন। আগামীতেও আমরা এই আয়োজন ধরে রাখতে পারবো বলে আশাবাদী।
তিনি আরও বলেন, এ বছর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক। উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তারা আমাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন।
শাহজাহান নবীন/এফএ/জেআইএম