টাঙ্গাইল-১
আব্দুর রাজ্জাকের আসন পেতে মরিয়া বিএনপি-জামায়াত
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ফকির মাহবুব আনাম স্বপন ও জামায়াতে ইসলামীর অধ্যক্ষ মো. মোন্তাজ আলী
মধুপুর ও ধনবাড়ী উপজেলা নিয়ে টাঙ্গাইল-১ আসন গঠিত। টানা ২৪ বছর ধরে সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের দখলে থাকা এই আসনে এরইমধ্যে লেগেছে ভোটের হাওয়া। তবে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী ছাড়া অন্য কোনো দলের প্রার্থীকে এখন পর্যন্ত প্রচারণায় দেখা যায়নি। ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণে বিভিন্ন কার্যক্রম চালাচ্ছে দুই দলই।
অতীত নির্বাচনের ফলাফল
টাঙ্গাইল-১ আসন বরাবরই আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। এ আসনে আওয়ামী লীগ ৮ বার, বিএনপি ২ বার এবং জাসদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ১ বার করে নির্বাচিত হয়েছে।
১৯৭৩ সালে দেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ২৯৩ আসন পেয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলেও এ আসনটি হাতছাড়া হয়ে যায়। সেবার জাসদের প্রার্থী আব্দুস সাত্তার বিজয়ী হন। এরপর ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী সৈয়দ হাসান আলী চৌধুরী, ১৯৮১ সালের উপনির্বাচনে বিএনপি থেকে সৈয়দা আশিকা আকবর, ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নিজামুল ইসলাম, ১৯৮৮ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী খন্দকার আনোয়ারুল হক, ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল হাসান চৌধুরী, ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আব্দুস ছালাম তালুকদার ও ৯৬ সালের জুনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল হাসান চৌধুরী বিজয়ী হন। এরপর ২০০১ সাল থেকে টানা ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই আসনের এমপি ছিলেন আওয়ামী লীগের আব্দুর রাজ্জাক।
বিএনপিতে প্রার্থীর ছড়াছড়ি
১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের পর বিএনপির কোনো প্রার্থী এ আসন থেকে জয়লাভ করতে পারেননি। তবে এবার বিএনপি এ আসন পুনরুদ্ধারে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
আরও পড়ুন
বিএনপির ঘাঁটি উদ্ধারে বাধা অনৈক্য, সুযোগ নিতে চায় জামায়াত
আ’লীগের ঘাঁটিতে বিএনপির কোন্দল, সুবিধা পেতে পারে জামায়াত
দলীয় কোন্দলে বিএনপি, সরব জামায়াতের প্রার্থী
এ আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। এর মধ্যে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফকির মাহবুব আনাম স্বপন, নির্বাহী কমিটির সদস্য মুহম্মদ আলী, লে. কর্নেল আসাদুল ইসলাম আজাদ, টাঙ্গাইল জজ কোর্টের পিপি শাহজাহান কবীর রয়েছেন। এছাড়াও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সহ-সাধারণ সম্পাদক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ রুকনুজ্জামান সুজা এবং ধনবাড়ীর নওয়াব এস্টেট মোতওয়াল্লির আফিফ উদ্দিন আহমেদের নাম শোনা যাচ্ছে।
জামায়াতের একক প্রার্থী
জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে প্রচারণা চালাচ্ছেন জেলা শাখার পেশাজীবী সম্পাদক ও মধুপুর সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মো. মোন্তাজ আলী।
নীরব অন্যান্য দল
দীর্ঘদিন আব্দুর রাজ্জাকের দখলে থাকা এই আসন পেতে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী সরব থাকলেও অন্য কোনো দলকেই এখনো মাঠে দেখা যায়নি। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রচার চালাচ্ছেন অ্যাডভোকেট ইলিয়াস হোসেন মনি।
আব্দুর রাজ্জাকের একক আধিপত্য
এ আসনে টানা ৫ বারের সংসদ সদস্য ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা সাবেক কৃষি ও খাদ্যমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। বর্তমানে তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন।
স্থানীয়রা বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের একক আধিপত্য ছিল। কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করেছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগ পর্যন্ত তার জীবনযাপন ছিল সহজ-সরল। এসময় নির্বাচনী এলাকায় কোনো বাড়িও ছিল না তার। পুরোনো মডেলের গাড়ি নিয়ে এলাকায় আসতেন। খাদ্য এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়ে তিনি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। দল ও সরকারি কাজে আধিপত্য বিস্তার করেন। এলাকার উন্নয়নের নামে হয়েছে হরিলুট।
ভোটাররা বলছেন, এবারের নির্বাচনে তারা বুঝেশুনে প্রার্থীকে ভোট দেবেন। যিনি সাধারণ মানুষের পক্ষ কাজ করবেন এবং যেকোনো বিপদ-আপদে যাকে পাওয়া যাবে তাকেই ভোট দেবেন।
টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৩১ হাজার ৬৪৩ জন। এরমধ্যে নিবন্ধিত নতুন ভোটার ২০ হাজার ২৬০ জন।
মনোনয়ন প্রত্যাশীদের বক্তব্য
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ফকির মাহবুব আনাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিগত সময়ে আমি আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছি। মধুপুর-ধনবাড়ীতে উন্নয়নের নামে অনেক লুট হয়েছে। আমাদের নামে মিথ্যা মামলা ও নির্যাতন করা হয়েছে। আমাদের এলাকায় থাকতে দেওয়া হয়নি। গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগের কোনো কার্যক্রম নেই। আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমি সাধারণ মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আশা করছি নির্বাচনে জয়ী হয়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারবো।’
জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মোন্তাজ আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিগত সময়ে এ আসন থেকে যারা সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন, তারা জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। আর বর্তমানে মধুপুর ও ধনবাড়ীতে ব্যাপকহারে চাঁদাবাজি চলছে। এসব থেকে সাধারণ মানুষ মুক্তি চায়। আশা করছি নির্বাচন হলে আমি জয়লাভ করবো। সবাইকে নিয়ে সুন্দর মধুপুর ও ধনবাড়ী উপজেলা গড়ে তুলতে চাই।’
এফএ/এমএমএআর/জিকেএস