সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলস
ফের চালুর উদ্যোগ, কর্মসংস্থান হবে হাজারো মানুষের
সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলসের ফটক/ছবি-জাগো নিউজ
সাত বছর ধরে বন্ধ থাকা সাতক্ষীরার একমাত্র ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলস নতুন করে চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই খবরে জেলার হাজার হাজার বেকার শ্রমিক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে মিলের বিশাল প্রাঙ্গণে নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান চালু হলে কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৩ সালে সাতক্ষীরার মাগুরা এলাকায় ৩০ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত হয় সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলস। একসময় এটি ছিল এই অঞ্চলের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র। হাজার হাজার শ্রমিক এখানে কাজ করতেন। মিলের দুটি ইউনিটে দৈনিক ১০ হাজার কেজি সুতা উৎপাদন হতো। মিলকে ঘিরে গড়ে উঠেছিল বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনা। কিন্তু সেই জৌলুশ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ক্রমাগত লোকসান আর অব্যবস্থাপনার কারণে ২০০৭ সালে প্রথম দফায় শ্রমিক ও কর্মচারীদের ছাঁটাই করা হয়। এরপর সার্ভিস চার্জ পদ্ধতিতে মিলটি সীমিত আকারে চালু রাখা হয়। ২০১৭ সালে নারায়ণগঞ্জের ট্রেড লিংক লিমিটেড মিলটি ভাড়া নেয়। তবে লোকসানের বোঝা সইতে না পেরে ২০১৯ সালে এটি আবারও বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি দেখভালের জন্য আটজন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োজিত রয়েছেন। মিল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নতুন করে মিল চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলসের বর্তমান ইনচার্জ মো. শফিউল বাসার জাগো নিউজকে বলেন, ‘টেকসই ও পরিবেশবান্ধব শিল্পপার্ক নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশনের (বিটিএমসি) সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে নতুন চুক্তির মাধ্যমে সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলস পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, খুব শিগগির এই প্রক্রিয়া শুরু হবে। এতে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।’

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সাত বছর ধরে বন্ধ থাকায় মিলের মূল ফটকে সিলগালা। ভেতরে কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি মরিচা ধরে নষ্ট হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
‘আম-চিংড়ির সম্ভাবনা কাজে লাগাতে দরকার প্রসেসিং জোন’
নীলফামারীতে ৯০০ কারখানায় নেই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা
আজও চালু হয়নি গাজী টায়ার কারখানা, বেকার শ্রমিকদের বোবাকান্না
সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানাকে আধুনিকায়ন করা হবে
৩ বছরে প্লট বরাদ্দ ২৩৪, উৎপাদনে মাত্র একটি
সিরাজুল ইসলাম নামের মিলটির সাবেক একজন শ্রমিক আক্ষেপ করে বলেন, ‘২০ বছর এই মিলে কাজ করেছি। নিজের জীবনের সবটুকু শ্রম দিয়েছি এই প্রতিষ্ঠানের জন্য। আজ যখন দেখি মিলটা বন্ধ হয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, তখন বুকের ভেতরটা ফেটে যায়। সরকারের কাছে আবেদন, দ্রুত মিলটা চালু করে আমাদের মতো বেকার শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করুন।’
সাবেক শ্রমিক আনোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘মিল যখন চলতো, তখন আমাদের সংসারে অভাব ছিল না। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করিয়েছি, সংসার চালিয়েছি। এখন কাজ না থাকায় দিনমজুরি করে খেতে হচ্ছে। এই বয়সে কাজ না পেলে কীভাবে বাঁচবো, সেই চিন্তায় ঘুম হয় না।’

নারী শ্রমিক জোহরা খাতুন বলেন, ‘আমার স্বামীও এই মিলে কাজ করতেন। মিল বন্ধ হওয়ার পর থেকে আমরা দুজনই বেকার। ছেলেমেয়েরা ছোট, তাদের মুখের দিকে তাকালে চোখে জল আসে। নতুন করে মিল চালু হলে অন্তত দুবেলা ডাল-ভাত খেয়ে বাঁচতে পারবো।’
সাবেক শ্রমিকনেতা হারুন অর রশিদ জানান, মিল বন্ধ হওয়ার পর হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে গেছেন। অনেকেই শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেছেন। কেউ কেউ রিকশা চালিয়ে বা দিনমজুরি করে জীবন ধারণ করছেন। দ্রুত মিলটি চালু করা হলে শ্রমিকরা আবার তাদের পরিবার নিয়ে ভালোভাবে বাঁচতে পারবেন।
সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলস পুনরায় চালু হলে সাতক্ষীরার অর্থনীতিতে নতুন গতি আসবে বলে মনে করছেন নাগরিক নেতারা। সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির নেতা আলী নূর খান বাবুল বলেন, ‘সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলস ছিল সাতক্ষীরার গর্ব। এটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্থানীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। নতুন উদ্যোক্তা ও অংশীদারত্বের মাধ্যমে মিলটি চালু হলে হাজার হাজার মানুষের নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। একইসঙ্গে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন মাত্রা যুক্ত হবে।’
এসআর/এএসএম