ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ডিজিটাল ধাক্কা

মোবাইল-মেইলের যুগে ডাকঘরের করুণ চিত্র

এম এ মালেক | প্রকাশিত: ০৪:২০ পিএম, ০৯ অক্টোবর ২০২৫

বাইসাইকেল চালিয়ে পিয়ন ছুটে যেতেন শহর কিংবা গ্রামের বাসাবাড়িতে। কর্মস্থল থেকে স্বামী কখন চিঠি পাঠাবেন—সেই অপেক্ষায় থাকতেন পল্লিবধূ। বাবা-মা আর সন্তানের যোগাযোগ হতো ডাকে পাঠানো চিঠিতেই। প্রবাসীরা চিঠি আদান-প্রদানের মাধ্যমে রাখতেন পরিবার-পরিজনের খবর। কারও চিঠি এলে খাম ছিঁড়ে কয়েকবার পড়া, তারপর শুরু হতো উত্তর লেখার প্রস্তুতি। ডাকঘরে গিয়ে হলুদ রঙের খামের ভেতর ভাঁজ করে চিঠি দেওয়া, আঠা লাগিয়ে খামের মুখ আটকে ডাকবাক্সে ফেলার পর মিলতো স্বস্তি। এরপর চলতো আবার প্রতিউত্তরের অপেক্ষা।

তবে বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে মোবাইলফোন, ইন্টারনেট ও ই-মেইলের মতো উন্নত প্রযুক্তির কারণে হারিয়ে গেছে সেই চিত্র। হারিয়ে যাচ্ছে বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে লেখার অভ্যাসও।

বুধবার (৮ অক্টোবর) দুপুরে সিরাজগঞ্জ শহরের প্রধান ডাকঘরে গিয়ে দেখা যায়, ব্যক্তিগত চিঠিপত্র আদান-প্রদানের জন্য তেমন কোনো আনাগোনা নেই। সেবা নিতে ডাকঘরে এসেছেন ১০-১৫ জন নারী-পুরুষ।

কথা হয় ডাকঘরের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি পোস্টমাস্টার জাহিদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‌‘সিরাজগঞ্জ শহরের মুখ্য ডাকঘর এটি। সারাদেশের ন্যায় এ ডাকঘরে ব্যক্তিগত চিঠি কমলেও বেড়েছে দাপ্তরিক চিঠি। প্রতিদিন গড়ে দুইশ থেকে আড়াইশ মানুষ সেবা নেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘সারাবিশ্বেই ব্যক্তিগত চিঠির আদান-প্রদান কমেছে। মূলত ডিজিটাল সুবিধার কারণেই এটা কমছে। মানুষ এখন ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ ও ই-মেইলে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ করছেন। তবে চাকরির আবেদন, আদালত, ভূমি, পাসপোর্ট ও বিআরটিএ অফিসের দাপ্তরিক চিঠির আদান-প্রদান ডাকঘরে বেড়েছে।’

ডাকবিভাগ সূত্র জানায়, সিরাজগঞ্জ প্রধান ডাকঘরে আটজন কর্মকর্তার বিপরীতে তিনজন ও ৬৮ জন কর্মচারীর বিপরীতে ৪৬ জন দায়িত্ব পালন করছেন। এ ডাকঘরে গত সেপ্টেম্বরজুড়ে সাধারণ চিঠি পাঁচ হাজার ৫০০, রেজিস্ট্রি চিঠি আট হাজার ৮৪০, পার্সেল তিন হাজার ৪০০ ও জিইপি (বিশেষ ধরনের অভ্যন্তরীণ ডাক সার্ভিস) ছয় হাজার চিঠি আদান-প্রদান করা হয়েছে।

পার্সেল বুকিং দিতে এসেছেন রেজাউল করিম। জানালেন বাধ্য হয়ে ডাকঘরে এসেছেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘ডাকবিভাগের প্রতি মানুষের আগ্রহে ভাটা পড়েছে। কুরিয়ারে অনেক দ্রুত চিঠি পাঠানো যায়। কিন্তু সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের সরবরাহ করা চিঠি গ্রহণ করতে চায় না। তাই ডাকঘরে এসেছি।’

আরও পড়ুন:
প্রেমের চিঠি এখন অতীত, যা আসে আইনি-তালাক নোটিশ
প্রেমে সফল হতে চিঠির ১০ উপকার
চিঠি লিখলে কি মানসিক শান্তি পাওয়া যায়

ডাকঘরে সেবা নিতে আসা কলেজছাত্রী মেরিনা আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, ‘ব্যাংকের চেয়ে ডাকঘরে আর্থিক লেনদেন অনেকটাই নিরাপদ। আমার মায়ের সঞ্চয়পত্র এ পোস্ট অফিসে করা হয়েছে। মায়ের সঙ্গে মাঝে মধ্যেই আমি এখানে আসি।’

মোবাইল-মেইলের যুগে ডাকঘরের করুণ চিত্র

হেড পোস্টম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন আইয়ুব আলী সরকার। ১৯৯৬ সালে পোস্টম্যান পদে যোগদান করেন। পরবর্তী ২০০০ সাল থেকে হেড পোস্টম্যান পদে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি৷

আইয়ুব আলী বলেন, ‘আগে প্রতিদিন গড়ে এক হাজার ৭০০ থেকে দুই হাজার চিঠি বিলি করতাম। তবে এখন আগের মতো ব্যক্তিগত চিঠি নেই। তবে ভূমি অফিস, আদালত, ব্যাংক, পারিবারিক, পার্সেল ও বিমার চিঠি ছাড়াও তালাকনামাপত্র বেড়েছে।’

আগে প্রতিদিনই মানি অর্ডার থাকতো। এখন মোবাইলফোনে আর্থিক সেবা, অনলাইন ব্যাংকিংয়ের সুযোগ থাকায় মানি অর্ডার তেমন নেই বলে জানান ডাকঘরের এই কর্মকর্তা।

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার ৭০ বছরের বৃদ্ধ খোরশেদ আলম। স্মৃতিচারণ করে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার বড় ছেলে ২০০১ সালের দিকে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতো। তখন চিঠির মাধ্যমে ছেলের পড়াশোনার খোঁজ নিতাম। ছেলের কিছু প্রয়োজন হলেই চিঠি পাঠাতো। পরে সেই চিঠির উত্তর লিখে ডাকঘরে গিয়ে জমা দিতাম। পিয়নের অপেক্ষায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতাম। তবে সেই চিঠি আদান-প্রদানের দিন আর নেই।’

তিনি বলেন, ‘ছেলেটা এখন সরকারি চাকরির সুবাদে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দূরে রয়েছে। তবে এখন আর চিঠির মাধ্যমে খোঁজ নিতে হয় না। প্রতিদিনই মোবাইলফোন ও ভিডিও কলে কথা হয়।’

বর্তমানে ডাকঘর দেশি-বিদেশি পার্সেল, বৈদেশিক আর্টিকেল, ডাক জীবনবিমার জমা কার্যক্রম, স্বল্প খরচে চিঠিপত্র আদান-প্রদান, জিইপি, ইএমএস, পার্সেল সার্ভিস, ভিপিপি, ভিপিএল, ডাকটিকিট বিক্রয়, ডাকদ্রব্য গ্রহণ, প্রেরণ, বিলি, সঞ্চয় ব্যাংক, সঞ্চয়পত্র বিক্রয়-ভাঙানো, প্রাইজবন্ড, পোস্টাল অর্ডার বিক্রয় ও ভাঙানোর মতো এজেন্সিভিত্তিক সার্ভিস দিচ্ছে বলে জানান সহকারী পোস্টমাস্টার আশরাফুল ইসলাম।

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ডাকঘরে একেকজন একেক ধরনের সেবা নিতে আসেন। আমরা গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি।

এসআর/এএসএম