টাঙ্গাইল-৬
জিততে মরিয়া বিএনপি, মাঠে জামায়াত, প্রতীকের অপেক্ষায় এনসিপি
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ার) আসনে জনসংযোগ করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। আসনটি উদ্ধারে প্রচারণা চালাচ্ছেন বিএনপির একাধিক প্রার্থী। মাঠে সরব রয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থী। ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি দলের একক প্রার্থী থাকলেও তাদের প্রচারণা এখনো শুরু হয়নি। এছাড়া নির্বাচনী প্রতীক পেলে প্রচারণায় নামার কথা জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রার্থী।
অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত শুধু নাগরপুর উপজেলা নিয়েই টাঙ্গাইল-৬ আসন ছিল। দেলদুয়ার উপজেলা যুক্ত ছিল টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনের সঙ্গে। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচনী আসন পুনর্বিন্যাস করে দেলদুয়ার উপজেলাকে টাঙ্গাইল-৬ আসনের সঙ্গে যুক্ত করে দেয়। বর্তমানে নাগরপুর ও দেলদুয়ার উপজেলা নিয়ে টাঙ্গাইল-৬ আসন গঠিত।
আরও পড়ুন-
আব্দুর রাজ্জাকের আসন পেতে মরিয়া বিএনপি-জামায়াত
বিএনপিতে আছে পিন্টু, চমক দেখাতে চায় জামায়াত-গণঅধিকার
টাঙ্গাইল-৬ আসনে বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫ বার আওয়ামী লীগ, ৫ বার বিএনপি ও ১ বার জাতীয় পার্টির প্রার্থী এবং একবার স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করেছেন।
১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ব্যারিস্টার শওকত আলী খান জয়লাভ করেন। এরপর ১৯৭৯ সালে বিএনপির প্রার্থী নূর মোহাম্মদ খান বিজয়ী হন। ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলে নূর মোহাম্মদ খান বিএনপি ছেড়ে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। এরপর ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির নূর মোহাম্মদ খান আওয়ামী লীগের প্রার্থী এআর খানকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন।
১৯৮৮ সালে বড় কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ না নিলেও জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচন করে। ওই নির্বাচনেও নূর মোহাম্মদ খান বিজয়ী হন। ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের আব্দুল মান্নানকে পরাজিত করে বিএনপির খন্দকার আবু তাহের জয়লাভ করেন। ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে আবু তাহের আবার জয়ী হন। ওই বছরের জুনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের খন্দকার আব্দুল বাতেনকে হারিয়ে জয়ী হন বিএনপির গৌতম চক্রবর্তী।
২০০১ সালের নির্বাচনেও বিএনপি প্রার্থী গৌতম চক্রবর্তীর কাছে হেরে যান আব্দুল বাতেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে খন্দকার আব্দুল বাতেন নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে খন্দকার আব্দুল বাতেন এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৮ ও ২০২৪ সালের সংসদ নির্বাচনে আহসানুল ইসলাম টিটু সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
আরও পড়ুন-
কারাগারে লতিফ সিদ্দিকী, ভোটের মাঠে বিএনপি-জামায়াত
আসন পুনরুদ্ধারে মরিয়া বিএনপি, চেষ্টায় জামায়াতও
তবে এবার গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের কোনো নেতা মাঠে নেই। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পলাতক থাকায় দীর্ঘ ১৬ বছর পর বিএনপি এ আসন পুনরুদ্ধারে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় বিএনপির একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন পেতে মাঠে প্রচারণা শুরু করেছেন।
বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে প্রচারণা চালাচ্ছেন সাবেক মন্ত্রী ও দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য নূর মোহাম্মদ খান, নাগরপুর উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শরিফুল ইসলাম স্বপন, সদস্য রবিউল আউয়াল লাভলু ও জাতীয়তাবাদী প্রজন্ম দলের নির্বাহী কমিটির সভাপতি মো. জুয়েল সরকার।
এছাড়াও দলের নাগরপুর উপজেলা সভাপতি এমএ সালাম, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হবি, নাগরপুর সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি শরিফ উদ্দিন আরজু, সাবেক ছাত্রদল নেতা আতিকুর রহমান আতিক এবং নাগরপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য অ্যাডভোকেট ইকবাল হোসেনও মনোনয়ন প্রত্যাশী।
এদিকে জামায়াতের একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন জেলা কমিটির সদস্য একেএম আব্দুল হামিদ। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আখিনুর মিয়া ও খেলাফত মজলিস দলের অঙ্গ সংগঠন শ্রমিক মজলিসের জেলা শাখার সভাপতি আব্দুল মান্নান শেখকে প্রার্থী ঘোষণা করলেও তাদের কার্যক্রম দেখা যায়নি।
আরও পড়ুন-
বিএনপিতে বিভক্তি, জামায়াতসহ অন্য দলে একক প্রার্থী
দলীয় কোন্দলে বিএনপি, সরব জামায়াতের প্রার্থী
এনসিপির ঢাকা মহানগর (উত্তর) সংগঠক ওয়াহেদুজ্জামান সুমন এবং গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর সদস্য ও কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার কবীর হোসেন দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। এছাড়া জাতীয় পার্টির মাহমুদুল রহিম সুমনও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন।
এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৫৪ হাজার ৪৭৮ জন। নিবন্ধিত নতুন ভোটার ২১ হাজার ৯৬১ জন।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য নূর মোহাম্মদ খান নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
নাগরপুর উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শরিফুল ইসলাম স্বপন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিগত ১৭ বছরে বিএনপির সব অনুষ্ঠানে আমি ছিলাম। আওয়ামী লীগ সারা বাংলাদেশে যেমন নির্যাতন করেছে তার চেয়ে বেশি নাগরপুরে করেছে। আমাকেও অনেক মামলা দিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। আমি আশাবাদী দল থেকে আমাকে মনোনয়ন দেবে।’
উপজেলা বিএনপির সদস্য রবিউল আউয়াল লাভলু জাগো নিউজকে বলেন, ‘দলকে সুশৃঙ্খল ও তারেক রহমানের হাতকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে আমি কাজ করে যাচ্ছি। সাধারণ মানুষ আমাকে ভালোবাসে। মানুষের যদি নৈতিকতা ও চারিত্রিক উন্নয়ন সম্ভব হয়, তাহলে মানুষের সমস্ত ক্ষেত্রেই উন্নয়ন সম্ভব। আশা করছি যোগ্য দেখে দল আমাকে মনোনয়ন দেবে। যদি মনোনয়ন না পাই তবু দলের পক্ষে সবসময় কাজ করবো।’
জাতীয়তাবাদী প্রজন্ম দলের নির্বাহী কমিটির সভাপতি মো. জুয়েল সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ‘দেলদুয়ার উপজেলা ঢাকার খুব কাছেই। কিন্তু তারপরও স্বাধীনতার পর তেমন উন্নয়ন হয়নি। টাঙ্গাইল সদরের সঙ্গে যখন দেলদুয়ার উপজেলা একত্রিত ছিল তখনও বঞ্চিত ছিল। বর্তমানে নাগরপুর উপজেলার সঙ্গে থেকেও উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত। দল থেকে আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি নির্বাচিত হয়ে দেলদুয়ার ও নাগরপুর উপজেলাকে সুসংগঠিত আসন করে গড়ে তুলবো। আশা করছি দল আমাকেই মনোনয়ন দেবে।’
জামায়াতের প্রার্থী একেএম আব্দুল হামিদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত ১৭ বছর আমরা প্রকাশ্যে কোনো কাজ করতে পারিনি। আমাদের অনেক ভাই গুম হয়েছেন। নতুন করে নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরে পাওয়ায় আমাদের প্রচারণা চলছে জোরেশোরে। প্রতিটি গ্রামে আমাদের কর্মীরা চষে বেড়াচ্ছেন। জনগণের মন্তব্য তারা নতুন কিছু দেখতে চান। জামায়াতে ইসলামীর কোনো সদস্য চাঁদাবাজি করে না। আগামী নির্বাচন যদি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়, তাহলে আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।’
এনসিপির ঢাকা মহানগর (উত্তর) সংগঠক ওয়াহেদুজ্জামান সুমন জাগো নিউজকে বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে ২৪-এর আন্দোলনে আমি সম্পৃক্ত ছিলাম। সব কিছুতেই এখনো সিন্ডিকেট রয়েছে। আমরা এই কাঠামোগত পরিবর্তন চাই। আমি প্রতি শুক্রবার এলাকায় উঠান বৈঠক করছি। আমাদের প্রতীকের সমস্যার যদি সমাধান হয়ে যায় তাহলে পুরোদমে প্রচারণা শুরু করবো।’
খেলাফত মজলিসের প্রার্থী আব্দুল মান্নান শেখ জাগো নিউজকে বলেন, ‘মাঠে এখনো প্রচারণায় নামিনি। তবে সামনে প্রচারণা চালাবো। একক প্রার্থী হিসেবেই দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে।’
এমএএএন/এফএ/এমএমএআর/এমএস