ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় বরেন্দ্র অঞ্চলে ফসল উৎপাদন ব্যাহত

মনির হোসেন মাহিন | প্রকাশিত: ০১:০০ পিএম, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় বরেন্দ্র অঞ্চলে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে পানির মান। বিশেষ করে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর, রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া ও পাবনার কিছু বেশকিছু এলাকায় অনেক ফসল চাষ করা যাচ্ছে না। এতে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা।

সাম্প্রতিক বরেন্দ্র অঞ্চল নিয়ে করা এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. বিধান চন্দ্র দাস।

ড. বিধান চন্দ্র দাস বলেন, জানুয়ারিতে পূর্বোল্লিখিত এলসিভিয়ার গ্রুপের ক্লাইমেট সার্ভিসেস জার্নালে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে খরার নানা ধরনের নেতিবাচক অভিঘাত তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, এ অঞ্চলে শস্য উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। ভূ-উপরিস্থ পানির মান নষ্ট হয়েছে। অনেক ফসল চাষ করা যাচ্ছে না। মাটির আর্দ্রতা হ্রাস পেয়েছে। এ অঞ্চলের মানুষের আয় কমে গেছে। খাবার ও গৃহে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় বিশুদ্ধ পানির সংকট তৈরি হয়েছে। স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিয়েছে। গবাদি পশু পালনে অসুবিধা হচ্ছে কৃষকদের।

প্রবন্ধে আরও উঠে এসেছে, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সৃষ্ট খরার তীব্রতার জন্য শুধু বৃষ্টি দায়ী নয়। এ অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির ঘাটতি, খাল ও নদীতে স্রোতের অভাব, উচ্চ জনসংখ্যা ঘনত্ব, বন উজাড় ইত্যাদি কারণও দায়ী। বলার অপেক্ষা রাখে না যে এগুলো মূলত মানবসৃষ্ট কারণে ঘটেছে।

আরও পড়ুন
তীব্র পানি সংকটে বরেন্দ্র অঞ্চলে কমবে ধান চাষ
পরিবেশ বিপর্যয়ে পেশা বদলাচ্ছেন কৃষক
পানিশূন্য হচ্ছে বরেন্দ্র অঞ্চল

তিনি বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের সিনিয়র অধ্যাপক ড. চৌধুরী সারওয়ার জাহান বরেন্দ্র অঞ্চলের পানি সংকটের জন্য বিবিসির কাছে কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেন। এগুলোর সারমর্ম হচ্ছে, আগে এ অঞ্চলে শুধু আমন ধান চাষ করা হতো। কিন্তু নব্বইয়ের দশক থেকে এ এলাকায় তিনটি ফসল চাষ হচ্ছে। আগের মতো বৃষ্টিপাতও হচ্ছে না। আশি-নব্বইয়ের দশকের তুলনায় পরের দুই দশকে প্রায় ৪০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। এখানকার ভূমির উচ্চতা নদীর তুলনায় বেশি হওয়ায় যেটুকু বৃষ্টি হয়। সেটি দ্রুত গড়িয়ে নদীতে চলে যায়।

এ অধ্যাপক আরও বলেন, ২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক দুটি জার্নালে প্রকাশিত দুটি গবেষণা প্রবন্ধ থেকে জানা যায়, পাঁচ দশকে বাংলাদেশ ১৩ বার ব্যতিক্রমী খরায় আক্রান্ত হয়েছে। এগুলো দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ, বিশেষ করে বন, মৎস্য, কৃষি এবং এসবের ওপর নির্ভরশীল অন্যান্য খাতকেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের মতো কৃষিপ্রধান দেশে খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেশের অর্থনীতিতে গভীর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশে খরার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

এ অধ্যাপক বলেন, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (প্রতিষ্ঠাকাল ১৯৯২) এ অঞ্চলের খরা সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্য সেচ ব্যবস্থাপনা, কৃষি উন্নয়ন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে অনেকগুলো প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রকল্প শেষও হয়েছে। কিছু প্রকল্প চলমান। তৈরি করা হয়েছে বেশ কিছু রাবার ড্যাম ও ক্রস ড্যাম। ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমানোর জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।

যদিও ২০১৯ সালে ইউনিসেফ থেকে বলা হয়েছিল, আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে পৃথিবীর প্রতি চারটি শিশুর মধ্যে একটি শিশু তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী খরার মুখোমুখি হবে। ডব্লিউএমওর (ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন: ২০২১) প্রতিবেদন অনুযায়ী পৃথিবীতে খরাজনিত কারণে মোট মৃত্যুর প্রায় ৯০ শতাংশ মৃত্যু ঘটে থাকে উন্নয়নশীল ও দরিদ্র দেশগুলোতে। বাংলাদেশে খরা প্রায়ই সংঘটিত হয়, বিশেষ করে বরেন্দ্র অঞ্চল তথা দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে। তবে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও খরার বিস্তৃতি ঘটছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে বলে জানান তিনি।

আরএইচ/এএসএম