ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ঠাকুরগাঁও হাসপাতাল যেন নিজেই ‘রোগী’

জেলা প্রতিনিধি | ঠাকুরগাঁও | প্রকাশিত: ০৭:২৭ পিএম, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

ঠাকুরগাঁওয়ের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল উত্তরাঞ্চলের ঠাকুরগাঁওসহ আশেপাশে দুই জেলার প্রায় ৪০ লাখ মানুষের চিকিৎসার প্রধান ভরসাস্থল। কিন্তু যে স্থানে মানুষ আসে সুস্থতার আশায়, সেই স্থানই এখন যেন রোগ উৎপত্তির কেন্দ্রস্থল। নোংরা পরিবেশ, অস্বাস্থ্যকর অবস্থা আর অব্যবস্থাপনায় ভরে গেছে হাসপাতালটি।

রোগীরা জানান, এখন এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে মানুষ সুস্থ নয় বরং আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন।

অন্যদিকে ধারণক্ষমতার দুই থেকে তিনগুণ বেশি রোগী ভর্তি থাকায় চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ঠাকুরগাঁও হাসপাতাল যেনো নিজেই ‘রোগী’

আর স্থানীয় সচেতন নাগরিক ও সেবাগ্রহীতারা মনে করছেন, ঠাকুরগাঁওয়ে দ্রুত একটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন ছাড়া স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নের বিকল্প নেই।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালের ধারণ ক্ষমতা ২৫০ শয্যা হলেও প্রতিদিন ভর্তি থাকে প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ রোগী। রোগীর চাপে বেড তো পাওয়া যায় না, অনেক সময় ফ্লোরেও জায়গা মেলে না। চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় ডাক্তার ও নার্সদের। অন্যদিকে হাসপাতালের করিডোর, বাথরুম এমনকি রোগী ওয়ার্ড- সবখানেই নোংরা পরিবেশ। নোংরা অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সুস্থ মানুষও সেখানে প্রবেশ করলে অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে।

ঠাকুরগাঁও হাসপাতাল যেনো নিজেই ‘রোগী’

এছাড়া দুটি লিফটের মধ্যে একটি নষ্ট হয়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। ফলে গুরুতর রোগী বা বয়স্কদের সিঁড়ি বেয়ে উপরের তলাগুলোতে উঠতে দেখা গেছে। বালতি ও পাত্রে জমে আছে নোংরা পানি। যেখান থেকে জন্ম নিতে পারে এডিস মশাসহ বিভিন্ন ধরণের রোগ। এছাড়া হাসপাতালে আইসিইউ, ডায়ালাইসিস ইউনিট এবং পিসিআর ল্যাবের জন্য নির্ধারিত ভবন ও স্থান থাকলেও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও জনবল না থাকায় দীর্ঘদিন ধরেই সেগুলো চালু হয়নি।

রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, এই হাসপাতালে অধিকাংশ পরীক্ষা বাইরে থেকে করতে হয়। যেসব ওষুধ হাসপাতাল থেকে দেওয়ার কথা সেসব ওষুধও নিতে ছুটতে হয় বাইরের ফার্মেসিতে। আর অনেক রোগীকে দিনাজপুর, রংপুর বা ঢাকায় রের্ফাড করা হয়। এতে অনেক রোগীর সড়কেই মৃত্যু হচ্ছে। এছাড়া এখানে ডাক্তার পাওয়া যায় না। ওয়াশরুমগুলো ব্যবহার করা যায়, বেসিনে হাত ধোয়ার অবস্থা নেই। রোগী নিয়ে আসলে সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে যায়।

রোগীর স্বজন মো. মুজাহিদ বলেন, এখানকার পরিবেশ এতটাই নোংরা যা বলার মতো না। যেখানে সেখানে পানি ও ময়লা আবর্জনা পড়ে থাকে। আর হাসপাতালে অনেকগুলো টেস্ট হয় না। রোগী নিয়ে টেস্ট করাতে বাইরে যেতে হয়। এভাবে আমরা চরম ভোগান্তিতে পরি। এছাড়া এখানে রোগীর সংখ্যা অনুযায়ী সেবা দেওয়া মতো জনবল দেখছি না। জনবল বৃদ্ধি করলে হয়তো কিছুটা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাওয়া যাবে।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা থেকে মাকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন মেহেদী হাসান। তিনি বলেন, যে ওষুধ হাসপাতাল থেকে দেওয়ার কথা ওই ওষুধগুলো বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। তাহলে সরকার যে ওষুধ দিচ্ছে সেই ওষুধগুলো যাচ্ছে কোথায়।

ঠাকুরগাঁও হাসপাতাল যেনো নিজেই ‘রোগী’

শহীদুল ইসলাম উজ্জল তার ছেলেকে নিয়ে ভর্তি আছেন হাসপাতালে তিনি বলেন, ধরতে গেলে এই হাসপাতালে চিকিৎসা বলতে তেমন কিছুই হয় না। সময় মত ডাক্তার পাওয়া যায় না। নার্সরা ঠিক মত কথা শুনেন না। তাদের কোনো কিছু বলতে গেলে বিরক্ত বোধ করেন। এছাড়া দীর্ঘদিন থেকে এখানকার লিফট নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এদিকে কেউ নজর দিচ্ছেন না। তাই আমি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এ বিষয়গুলো দেখার জন্য অনুরোধ করছি।

বাধন নামে এক যুবক বলেন, এখানে রোগী নিয়ে আসলেই অধিকাংশ রোগীকেই শুধু রেফার করে দেওয়া হয় দিনাজপুর, রংপুরসহ ঢাকায়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, দীর্ঘ সময়ের রাস্তা হওয়ায় রোগীকে নিয়ে যেতে যেতেই অনেকের মৃত্যু হয়। এজন্য ঠাকুরগাঁওয়ে একটি ভালো মানের মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল জরুরি।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে, এই হাসপাতালে প্রথম শ্রেণির চিকিৎসক ৫৯ জনের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ৪০ জন। দ্বিতীয় শ্রেণির ৩টি পদেই শূন্য। দ্বিতীয় শ্রেণির নার্সের পদ সংখ্যা মাত্র ৯১ জন। তার বিপরীতে কর্মরত আছেন ৮৮ জন। তৃতীয় শ্রেণির পদ সংখ্যা ৪২ জন হলেও আছেন মাত্র ২০ জন। এখনও শূন্য পদ ২২টি। চতুর্থ শ্রেণির লোকবল ২৫ জনের বিপরীতে আছেন ১৭ জন। ২৫০ শয্যার হাসপাতালে মঞ্জুরীকৃত মোট পদের সংখ্যা মাত্র ২২১ টি। এর মধ্যে আবার এখনো শূন্য হয়ে পরে আছে ৫৬ জনের পদ।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. রকিবুল আলম (চয়ন) বলেন, রোগীর চাপ আমাদের সক্ষমতার অনেক বেশি। জনবল কম, আবার প্রায় তিনটি জেলার মানুষ চিকিৎসার জন্য আসেন। ২৫০ শয্যার অন্যান্য হাসপাতালের তুলনায় এই হাসপাতালে নার্সের সংখ্যা কম। তাই এক শিফটে ২০ থেকে ২৫ জন নার্স দিয়ে ৬০০ থেকে ৭০০ রোগীর জন্য সেবা দেওয়া অসম্ভব হয়ে পরে। তারপরেও সীমিত সম্পদে যতটা পারি সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি।

তিনি আরও বলেন, এছাড়া এখানে আইসিইউ, সিসিইউ, ডায়ালাইসিস ইউনিট এবং পিসিআর ল্যাবের মতো কিছু বিভাগ চালু নেই তাই রোগীদের রেফার করতে হয়। ভবিষ্যতে যদি এই বিভাগগুলো এখানে চালু হয় তাহলে রোগী রেফারের সংখ্যা কমে আসবে।

তানভীর হাসান তানু/এনএইচআর/জেআইএম