পোকার আক্রমণে দিশাহারা মেহেরপুরের ধানচাষিরা
ধানের বিভিন্ন পোকা ও গোড়া পচা রোগে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন মেহেরপুরের কৃষকরা
ধানের মাজরা পোকা, কারেন্ট পোকা ও গোড়া পচা রোগে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন মেহেরপুরের কৃষকরা। নানা ধরনের বালাইনাশক প্রয়োগ করেও কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ধানের ফলনে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এদিকে কৃষি বিভাগের সঠিক ও সময়োপযোগী পরামর্শ না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা।
আরও পড়ুন:
চারা গাছেই শীষ, ধান না পেয়ে দিশাহারা শতাধিক কৃষক
ঝিনাইদহে রোপা আমন ক্ষেতে পচন সংক্রমণ, দিশাহারা কৃষক
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছর মেহেরপুর জেলায় ২৬ হাজার ৮৬০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আবহাওয়ার তারতম্য ও অতিরিক্ত আর্দ্রতার কারণে ধানের মাজরা পোকা, কারেন্ট পোকা এবং গোড়া পচা রোগের প্রকোপ বেড়ে গেছে। বিশেষ করে মেহেরপুর সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে এ সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করেছে।
গোভিপুর গ্রামের কৃষক নাসির হোসেন বলেন, চলতি মৌসুমে দুই বিঘা জমিতে ব্রি ধান-৫১ চাষ করেছি। প্রথম দিকে গাছ ভালোই ছিল, কিন্তু হঠাৎ মাজরা পোকার আক্রমণে জমির একাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। নানান কোম্পানির বালাইনাশক ব্যবহার করেছি, কিন্তু কোনোটাই কাজ করছে না। এখন বাকি জমিটা বাঁচাতে শেষ চেষ্টা চালাচ্ছি।

একই গ্রামের কৃষক আমিরুল ইসলাম বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতি বিঘায় ২০ থেকে ২৫ মণ ধান হওয়ার কথা ছিল, এখন ১০ মণও হবে না। শুধু মাজরা পোকা নয়, কারেন্ট পোকা আর গোড়া পচা রোগে গাছগুলো মরে যাচ্ছে। কৃষি অফিসে পরামর্শ নিতে গিয়েও তেমন সাহায্য পাইনি।
‘ধানের জমিতে মাজরা পোকার আক্রমণ ঠেকাতে আমরা হাতজাল ব্যবহার করছি, কিন্তু তারপরও পোকার প্রকোপ কমছে না। কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে তেমন আসছেন না। এখন যদি সঠিক দিকনির্দেশনা না পাই তাহলে আমরা বড় লোকসানে পড়বো।’
মেহেরপুর সদর উপজেলার কৃষক আজিজুল ইসলাম জানান, তিনি এ বছর হরিরামপুর মাঠে দেড় বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করেছেন। ধানের ক্ষেতে বালাইনাশক দিতে গিয়ে খরচ বেড়ে গেছে তিনগুণ। আগে যেখানে এক বিঘায় ৮০০ টাকায় কাজ হতো, এখন সেখানে ২ হাজার টাকারও বেশি খরচ হচ্ছে। কিন্তু ফল তেমন পাচ্ছেন না। মাঠে প্রতিদিনই পোকার আক্রমণ বাড়ছে।
আরও পড়ুন:
আরও ৩ জাত উদ্ভাবন করলো ধান গবেষণা ইনস্টটিউিট
এক মণ ধানেও মিলছে না একজন শ্রমিক

অন্যদিকে মুজিবনগর উপজেলার কৃষক আলমগীর হোসেন বলেন, ধানের জমিতে মাজরা পোকার আক্রমণ ঠেকাতে আমরা হাতজাল ব্যবহার করছি, কিন্তু তারপরও পোকার প্রকোপ কমছে না। কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে তেমন আসছেন না। এখন যদি সঠিক দিকনির্দেশনা না পাই তাহলে আমরা বড় লোকসানে পড়বো।
‘ধানের পোকার আক্রমণ প্রতিরোধে কৃষকদের সচেতনতা বাড়ানো দরকার। লাইন ও গ্রুপিং পদ্ধতিতে ধান রোপণ করলে পোকার আক্রমণ অনেকাংশে কমে যায়। এছাড়া জমিতে হাতজাল ও অনুমোদিত বালাইনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। নিয়মিত সেচ এবং পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমানে মাঠপর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তারা নজরদারি করছেন, ফলে বড় কোনো ক্ষতির আশঙ্কা নেই।’
এ বিষয়ে মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সনজীব মৃধা বলেন, ধানের পোকার আক্রমণ প্রতিরোধে কৃষকদের সচেতনতা বাড়ানো দরকার। লাইন ও গ্রুপিং পদ্ধতিতে ধান রোপণ করলে পোকার আক্রমণ অনেকাংশে কমে যায়। এছাড়া জমিতে হাতজাল ও অনুমোদিত বালাইনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। নিয়মিত সেচ এবং পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমানে মাঠপর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তারা নজরদারি করছেন, ফলে বড় কোনো ক্ষতির আশঙ্কা নেই।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বলছেন, যত দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া না হবে, ততই বাড়বে ধানের ক্ষতি ও কৃষকের আর্থিক চাপ। সময়মতো সঠিক বালাইনাশক ও সরকারি পরামর্শ না পেলে অনেকেই আগামী মৌসুমে ধান চাষে নিরুৎসাহিত হবেন বলে আশঙ্কা স্থানীয় কৃষকদের।
আসিফ ইকবাল/এমএন /এমএস