ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

নালিতাবাড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

‘ডাক্তার হঠাৎ এলেও দালাল আসে নিয়মিত’

জেলা প্রতিনিধি | শেরপুর | প্রকাশিত: ০৪:৫৩ পিএম, ২৮ অক্টোবর ২০২৫

জনবল সংকটে বিপর্যস্ত শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। প্রায় চার লাখ মানুষের সরকারি চিকিৎসার একমাত্র ভরসা এই হাসপাতাল। কিন্তু চিকিৎসক ও জনবল ঘাটতি থাকায় মাত্র ৬ জন চিকিৎসক দিয়ে চালছে চিকিৎসা সেবা। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সিন্ডিকেট ও দালালদের দৌরাত্ম্য, ফলে রোগীদের ভোগান্তি বাড়ছে।

রোববার (২৬ অক্টোবর) বিকেলে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট নালিতাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে, জরুরি বিভাগ থেকে যাদের পরীক্ষার ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হচ্ছে, তারা বাইরে কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ছুটে যাচ্ছেন। কেউ চলে যাচ্ছেন জেলা শহর শেরপুরে। আবার তাদের নিতে এসেছেন দালাল চক্রের লোকজন। আর ল্যাব, কর্মকর্তার কক্ষ সব তালা দেওয়া। ময়লা আর দুর্গন্ধে হাসপাতালে অবস্থান করায় দায়। হাসপাতাল চত্বরে অবাধে ঘুরছে গরু-ছাগল।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, নালিতাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৭ জন মেডিক্যাল অফিসারের মধ্যে আছেন চারজন। ১৩টি পদই শূন্য। আর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের ১০ জনের মধ্যে আছে ২ জন। অন্যদিকে একজন এক্স-রে টেকনিশিয়ান দিয়ে চলছে হাসপাতালটি। রয়েছে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরও সংকট।

‘ডাক্তার হঠাৎ এলেও, দালাল আসে নিয়মিত’

হাসপাতালে ২ দিন ধরে চিকিৎসাধীন কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সায়েমের মা।

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, বিশেষজ্ঞ কোনো চিকিৎসক এখনো দেখিনি। একটা স্যালাইন ছাড়া বাকি সব ওষুধ বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়। রোগ নির্ণয় করতে হাসপাতালে টেকশিয়ানকে খুঁজে পাওয়া যায় না। আর দুপুরের পরে হাসপাতালে প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ নেই। সব কক্ষ তালা দেওয়া থাকে। অভিযোগও করা যায় না, কারণ কর্মকর্তার রুমে তালা দেওয়া থাকে। মাঝেমধ্যে নার্সরা এসে খোঁজখবর নিয়ে যায়।

নয়াবিল ইউনিয়নের ধাওদারা পাহাড়ি এলাকা হতে সেবা নিতে আসা সুফিয়া বেগমের স্বজন ইদ্রিস আলী বলেন, ‘বাবারে এটা হাসপাতাল না, কসাইপট্টি। ডাক্তার হঠাৎ-হঠাৎ এলেও দালাল নিয়মিত আসে। রোগী ভাগিয়ে নিতে শেরপুর সদরের বিভিন্ন ক্লিনিক হাসপাতালের দালাল এখানে আসে।’

‘ডাক্তার হঠাৎ এলেও, দালাল আসে নিয়মিত’

বুরজ্ঞা পাহাড়ি গ্রামের বাসিন্দা জুমরা রিসিল বলেন, মাকে নিয়ে এসেছি। জরুরি বিভাগ থেকে একটা কাগজে কয়েকটি ওষুদের নাম ও টেস্ট লিখে দিলো, একজন নারী আমাকে সঙ্গে নিয়ে বাইরের একটি ক্লিনিকে পরীক্ষা করিয়ে আনলেন। সবকিছু কিনে আনতে হলো। এখানে ঠিকমতো বিদ্যুৎ থাকে না, আবার মশার উৎপাতে সন্ধ্যার পর থাকা মুশকিল।

আরও পড়ুন:
চার ডাক্তার দিয়ে চলছে ২ লাখ মানুষের হাসপাতাল!
৬ মাস বন্ধ এক্সরে, মাঝেমধ্যে আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন চেক করেন আরএমও

স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নানা অব্যবস্থাপনা, হাসপাতালে ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের সংকট, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব, রোগীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং বহিরাগত দালালদের দৌরাত্ম্যে নাজেহাল হয়ে পড়েন সেবা প্রত্যাশীরা। হাসপাতালের সেবা ও চিকিৎসকদের কার্যক্রম নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। দ্রুত আমরা এর সমাধান চাই।

‘ডাক্তার হঠাৎ এলেও, দালাল আসে নিয়মিত’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌফিক আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের জনবল সংকট রয়েছে। প্রায় ৪ লাখ জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা সেবা দেয়া আমাদের ৬ জন ডাক্তারের পক্ষে খুবই কঠিন। প্রতিদিন আউটডোরে ২৫০ থেকে ৩শ’ রোগী আসেন। আমাদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব চালিয়ে নিচ্ছি, চিকিৎসাসেবা দিচ্ছি।

দুপুরের পরে টেকনেশিয়ানদের কাউকে পাওয়া যায় না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ওই সময়টা অফিস টাইম নয়। তাই কক্ষে তালা দেওয়া থাকে।

মো. নাঈম ইসলাম/এনএইচআর/এমএস