কথা রাখেনি কেউ
গাভির দুধ বিক্রি করে সংসার চলছে মাগুরার সেই আছিয়ার পরিবারের
নিহত আছিয়ার বাড়ি।
এক সময় যাদের আশ্বাসে ভরসা পেয়েছিল মাগুরার শিশু আছিয়ার পরিবার, আজ তারা সবাই নির্বিকার। খাঁ খাঁ করছে শিশু আছিয়ার বসতবাড়ি, না আছে মানুষের আনাগোনা, না আছে কারো খোঁজখবর।
আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় এক সময় উত্তাল হয়েছিল মাগুরাসহ সারাদেশ। ধর্ষকের বিচার দাবিতে সোচ্চার হয়েছিল সারাদেশের মানুষ। সেসময় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সামাজিক সংগঠন ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ পরিবারটির পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই আগ্রহ আর কারো নেই। ঘটনার ৬ মাস না যেতেই চরম অসহায় অবস্থায় পড়েছে আছিয়ার পরিবার। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের শঙ্কায় দিন কাটছে তাদের।
সরেজমিনে দেখা যায়, আছিয়ার বাবা ফেরদৌস শেখ মানসিক প্রতিবন্ধী। দুই মেয়ে এক ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে তার সংসার। একসময় ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করলেও এখন পুরোপুরি অক্ষম হয়ে পড়েছেন তিনি। সারাদিন শুয়ে থাকেন বাড়িতে। বিভিন্ন এনজিও থেকে নেওয়া ঋণের বোঝায় জর্জরিত পরিবারটি। সাত শতক জমি তাদের একমাত্র সম্বল, বসবাসের একমাত্র ঘরটিও সরকারের দেওয়া।
ঘটনার পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়ন আছিয়ার চিকিৎসার ব্যয় বহন করেন। পরে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান আছিয়ার বাড়িতে গিয়ে আর্থিক সহায়তা দেন। একটি গোয়ালঘর নির্মাণ করে দুটি গাভি দেন। কিন্তু এখন আর কেউ খোঁজ রাখে না তাদের। অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটছে পরিবারের সদস্যদের।
আরও পড়ুন-
মাগুরায় আছিয়া ধর্ষণ-হত্যা মামলায় হিটু শেখের মৃত্যুদণ্ড
হিটু শেখের মৃত্যুদণ্ড হতে খালাস চেয়ে আপিল
শিশু আছিয়ার গ্রামের বাড়িতে শোকের ছায়া
আছিয়ার মা আয়েশা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার বড় কষ্ট লাগে, এখন আর কেউ পাশে নেই। খোঁজই নেয় না, বেঁচে আছি না মরে গেছি। জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা একটা গোয়ালঘর করে দিয়েছে ও গরু কিনে দিয়েছে। সেই গরুর দুধ বিক্রি করে কোনোমতে সংসার চলে। যারা খোঁজ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল তারা আর কেউ খবর নেয় না।’
আছিয়ার মা ও প্রতিবেশী
তিনি আরও বলেন, ‘আছিয়া মরার পর অনেকেই পাশে দাঁড়িয়েছিল। তখন যতটুকু সহযোগিতা করার করেছিল। আছিয়ার বাবার চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু পরে কেউ আর খবর নেয়নি। আমি আছিয়ার হত্যার বিচার চেয়েছিলাম, কিন্তু আজও বিচার পাইনি।’
চলতি বছরের এক মার্চ জারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী ৮ বছরের আছিয়া বড় বোনের বাড়িতে বেড়াতে যায়। ৫ মার্চ রাতে মাগুরা শহরের নিজনান্দুয়ালী এলাকায় সে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়।
পরদিন সকালে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। পরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও পরে সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৩ মার্চ দুপুরে আছিয়ার মৃত্যু হয়। এতে সারাদেশে শোকের ছায়া নেমে আসে।
ঘটনায় আছিয়ার বড় বোনের শ্বশুর হিটু শেখ, দেবর রাতুল শেখ ও শাশুড়ি জাহেদা বেগমকে আসামি করে মাগুরা সদর থানায় মামলা করে আছিয়ার মা আয়েশা বেগম। মামলার রায়ে আদালত হিটু শেখের ফাঁসির আদেশ দিলেও অন্য ৩ আসামিকে বেকসুর খালাস দেন।
মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মিরাজুল ইসলাম জানান, ‘আছিয়া হত্যা মামলায় তখন তদন্ত কর্মকর্তা ছিলাম। মামলার রায় হওয়ার পর মামলাটি উচ্চ আদালতে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। শুনেছি ফাঁসির আসামির পক্ষে উচ্চ আদালতে আপিল করেছে।’
মো. মিনারুল ইসলাম জুয়েল/এফএ/এএসএম