ফরিদপুর
সাবমেরিন ক্যাবল ছিঁড়ে চরবাসীর নতুন জীবনে পুরোনো দুর্ভোগ
ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার পদ্মা নদীবেষ্টিত দিয়ারা নারিকেলবাড়িয়া ও চর নাছিরপুর ইউনিয়ন। সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়ে নতুন করে জীবন সাজিয়ে তোলেন চরের বাসিন্দারা। কিন্তু সাবমেরিন ক্যাবল ছিঁড়ে যাওয়ার পর থেকে অন্তত দুই হাজার পরিবার দীর্ঘ প্রায় এক বছর ধরে বিদ্যুৎবিহীন জীবনযাপন করছে। এতে চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন শিক্ষার্থী, কৃষক, ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার সদরপুর উপজলার পদ্মা নদীর দুর্গম চরাঞ্চলের নারিকেলবাড়িয়া ও চর নাছিরপুর ইউনিয়নে ২০২০ সালে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়। এতে চরের অধিকাংশ বাসিন্দাই বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ নেন। বিদ্যুৎ পৌঁছে যাওয়ায় বদলে যায় চরের বাসিন্দাদের জীবনযাত্রাও।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বছর পদ্মা নদীর তীব্র স্রোতের কারণে চরাঞ্চলে বসানো সাবমেরিন ক্যাবল ছিঁড়ে যায়। এরপর থেকে এলাকাবাসী বিদ্যুৎবিহীন জীবনযাপন করছেন। বারবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ ও দাবি জানানো হলেও কাজের কাজ হয়নি কিছুই। এখন পর্যন্ত স্থায়ী বা বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, গত প্রায় বছর খানেক আগে পদ্মা নদীর তলদেশে সাবমেরিন ক্যাবলটিতে ত্রুটি দেখা দেওয়ায় পুরোপুরি বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় বছর খানেক হতে চললেও মেরামত হয়নি। ফলে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎবিহীন জীবন কাটাচ্ছেন দুই চরের হাজারো মানুষ। দুই চরে যখন বিদ্যুৎ এসেছিল তখন চর আলাকিত হয়। কিন্তু বর্তমানে অবস্থা খুবই করুণ। এখন দুইটি চরের পুরো এলাকা রাতে অন্ধকার থাকে। এতে করে বিদ্যুৎ পেয়ে টিভি-ফ্রিজসহ যেসব পণ্য বাসিন্দারা কিনেছিলেন, এখন সবকিছুই প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে। এতে তারা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের মোজাফফরপুর গ্রামের বাসিন্দা জাকির হোসেন আক্ষেপ করে বলেন, আমরা চরের মানুষ। বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার পর বিদ্যুতের আলোসহ জীবনযাত্রার মান বেড়ে যায়। কিন্তু সাবমেরিন কেবল ছিঁড়ে এক বছর ধরে বিদ্যুৎসেবা থেকে বঞ্চিত। এখন আবার আমরা অন্ধকারে আছি। রাতে শিশুদের পড়াশোনা করানো যায় না। হারিকেন, কুপির বাতিই ভরসা। মোবাইল চার্জ দিতে নদী পাড়ি দিয়ে অন্য ইউনিয়নে যেতে হয়। এককথায় বিদ্যুৎ বন্ধ থাকায় জীবনযাপন চরম কষ্টকর হয়ে গেছে।

মো. রাজা মল্লিক নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, বিদ্যুৎ পেয়ে চরাঞ্চলের মানুষের মাঝে আনন্দ ও উৎসব সৃষ্টি হয়। অনেকেই বিদ্যুৎ পেয়ে কিস্তিতে টাকা তুলে ফ্রিজ, পাখা, টেলিভিশনসহ নানা ধরনের জিনিসপত্র কেনেন। এখন দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় সব অকেজো হয়ে পড়ে আছে।
দিয়ারা নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নাসির উদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎ বন্ধ থাকায় শুধু সাধারণ মানুষ নয়, এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন। দোকানে ফ্রিজ, লাইট কিংবা ফ্যান চালানো যায় না। ফলে তাদের ব্যবসা প্রায় অচল হয়ে গেছে। নিয়মিত বিদ্যুৎ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করে যাচ্ছি। আশা করি খুব দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে।

ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার মো. সাখাওয়াত হোসেন জানান, ইউনিয়ন দুটি পদ্মাবেষ্টিত হওয়ায় এখানকার বিদ্যুৎ লাইন রক্ষণাবেক্ষণ কঠিন। ক্যাবল মেরামত এবং নতুন করে বিদ্যুৎ লাইন স্থাপনে সময় ও বাজেটের প্রয়োজন রয়েছে। সদর দপ্তর, ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। সাবমেরিন ক্যাবল ছিঁড়ে গেছে। মেরামতে বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন। দ্রুত সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে কথা হয় সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকিয়া সুলতানার সঙ্গে। তিনি বলেন, চরাঞ্চলে বিদ্যুৎসেবা বন্ধের বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি। চরাঞ্চলেরর মানুষের চরম ভোগান্তির কথা চিন্তা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে মৌখিক ও লিখিতভাবে জানানো হলেও এখনো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। তবে তারা জানিয়েছেন, ক্যাবলটি মেরামতের কাজ দ্রুত শুরু করা হবে।
এফএ/জেআইএম