ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

থান কাপড়ের ব্যবসা

বেচাকেনা নেই, ব্যবসায়ীদের সময় কাটে গল্প-গুজবে

মোবাশ্বির শ্রাবণ | প্রকাশিত: ০৪:৪১ পিএম, ১৬ নভেম্বর ২০২৫

নারায়ণগঞ্জের থান কাপড় ব্যবসায়ীরা ভালো নেই। একরকম অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়েই দিন পার করতে হচ্ছে তাদের। লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেও লাভের মুখ দেখছেন না তারা। দিনে ১০০ টাকাও বেচাকেনা হচ্ছে না অনেকের।

অথচ একসময় দৈনিক ৩০-৪০ কোটি টাকার বেচাকেনা হতো এখানে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করতেন মার্কেটের ব্যবসায়ী ও সাধারণ শ্রমিকরা। বর্তমানে মালিক-শ্রমিকদের গল্প-গুজব করে অলস সময় কাটে।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সব ধরনের গেঞ্জির থান কাপড়ের অন্যতম পাইকারি ও খুচরা বিক্রির মার্কেট হলো নারায়ণগঞ্জ শহরের ২ নম্বর রেলগেট এলাকার রেলওয়ে সুপার মার্কেট। মার্কেটের পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন জায়গায় তাদের দোকান রয়েছে। আগে এই ব্যবসা অল্প পুঁজিতে করা গেলেও এখন আর সে অবস্থা নেই।

দোকানভেদে ১০ লাখ থেকে কয়েক কোটি টাকার মাল রয়েছে। এখান থেকে নারায়ণগঞ্জের শিল্প নগরী বিসিকসহ বিভিন্ন এলাকার গার্মেন্টস মালিকরা থান কাপড় সংগ্রহ করেন। এরপর এসব কাপড় নিয়ে কারখানায় গেঞ্জি, টি-শার্ট তৈরি হয়। পরে এসব পণ্য চলে যাচ্ছে সৌদি আরব, দুবাই, মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।

রপ্তানির পাশাপাশি এসব পণ্য দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হয়। কিন্তু বর্তমানে মার্কেটে ক্রেতার আনাগোনা নেই বললেই চলে। আগে ব্যবসায়ীরা যেখানে মাসে ১০-২০ টন পণ্য বিক্রি করতেন, এখন তিন টন বিক্রি করাও কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। এতে ব্যবসায়ী ও তাদের অধীনে থাকা শ্রমিকরা বিপাকে পড়েছেন। অনেক শ্রমিকের যাতায়াতের খরচও পর্যন্ত উঠছে না।

বেচাকেনা নেই, ব্যবসায়ীদের সময় কাটে গল্প-গুজবে

খোঁজ নিয়ে জানা গছে, রেলওয়ে সুপার মার্কেট ও সংশ্লিষ্ট প্রায় দেড় হাজার দোকান রয়েছে। আর এই দোকানগুলোর সঙ্গে ৮ থেকে ১০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান জড়িত। তবে বর্তমানে তারা কেউই ভালো নেই।

কথা হয় সাইদ হোসেন নামের একজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‌‘ব্যবসার পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। বেচাকেনা একেবারেই কম। সারাদিন বসে থাকতে হয়। যাদের কাছে মালামাল বিক্রি করা হয়, তারা ঠিকমতো কারখানা চালাতে পারছেন না। আগে ক্রেতাদের আনাগোনায় মার্কেট সরগরম থাকতো। এখন কোনো কাজ নেই। কর্মচারীরা বসে থাকে। এরকম হবে কেউ ধারণাও করতে পারেননি। পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। বিদেশেও বেচাকেনা খারাপ যাচ্ছে।’

মহিবুল্লাহ ট্রেডার্সের মালিক মো. লুৎফর রহমান লিটন জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিগত ২৭ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করছি। বিগত সময়ে এই সময়ে অনেক বেচাকেনা হতো। এখন কেচাকেনাই নেই। সিজন চলছে সেটা বোঝা যাচ্ছে না।’

আরও পড়ুন:
যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত হলে ইন্ডাস্ট্রিয়াল জেলা হবে রাজবাড়ী
৪২ কোটি টাকার বিসিকে কারখানা চলে ৩টি, বাকি সব আগাছা

শাকিল মাহমুদ নামের আরেকজন ব্যবসায়ীর ভাষ্য, ‘বর্তমানে অনেক ফ্যাক্টরি বন্ধ। যে কারণে আমাদের যে পরিমাণ মালের চাহিদা সে পরিমাণ মাল পাচ্ছি না। পার্টিদের মালামাল দিতে পারছি না। যাদের বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ আছে, তারা হয়তো কোনোরকম ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারছেন। বেচাকেনা একেবারেই কমে গেছে।’

বিগত প্রায় ১০ বছর ধরে ব্যবসা করে আসছেন মেসার্স তাকদীর ট্রেডার্সের মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখন ব্যবসার পরিস্থিতি ভালো যাচ্ছে না। এখন ব্যবসার সিজন চলছে কিন্তু সে অনুযায়ী ব্যবসা হচ্ছে না। আগে গাজীপুর থেকে মালামাল আসতো। এখন মালামাল আসছে না।’

বেচাকেনা নেই, ব্যবসায়ীদের সময় কাটে গল্প-গুজবে

তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক মাসেই টার্গেট থাকে ১০ থেকে ২০ টন মাল বিক্রি করবো। কিন্তু এখন তিন টন মাল বিক্রি করতে কষ্ট হয়ে যায়।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ হোসিয়ারি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. বদিউজ্জামান বদু বলেন, ‘আগের সরকার দেশ থেকে সব অর্থ নিয়ে গেছে। যে কারণে অর্থনৈতিক অবস্থা চাপে পড়েছে। এই চাপের প্রভাব পড়েছে ব্যবসা বাণিজ্যে। এই রেলওয়ে মার্কেটে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ কোটি টাকার বেচাকেনা হতো। কিন্তু বর্তমানে এমনও দিন যায়, ১০০ টাকাও বিক্রি হয় না।’

তিনি বলেন, এরকম যদি বেচাকেনা হয় তাহলে কর্মচারীর বেতন দেবো কীভাবে আর নিজেই কীভাবে চলবো, দোকানের ভাড়া দেবো কীভাবে? বাধ্য হয়ে অনেকেই ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে অন্য কোনো পেশায় চলে যাচ্ছেন।

এসআর/এমএস