ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

নড়াইলের ২৫০ শয্যা হাসপাতালের কাজ শেষ হয়নি ৮ বছরেও

জেলা প্রতিনিধি | নড়াইল | প্রকাশিত: ১১:৩৫ এএম, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫

দীর্ঘ আট বছরে ৬১ কোটি টাকা খরচ করেও নড়াইলে চালু হয়নি ২৫০ শয্যার আধুনিক হাসপাতাল। চরম স্বাস্থ্য সংকটে পুরোনো ১০০ শয্যার হাসপাতালটি এখন মুমূর্ষু। যেখানে ধারণ ক্ষমতার চারগুণ রোগীকে মেঝেতে সেবা নিতে হচ্ছে। অথচ নতুন ঝকঝকে ভবনটি প্রস্তুত, কিন্তু লিফটের নকশা জটিলতা ও আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রিতার ফাঁদে আটকে আছে হস্তান্তর প্রক্রিয়া। এই অব্যবস্থার জেরে উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছেন না জেলার মানুষ, বাধ্য হচ্ছেন অন্যত্র স্থানান্তরিত হতে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সিঁড়ি থেকে বারান্দা কোথাও পা ফেলার জায়গা ফাঁকা নেই। রোগী ও স্বজনদের এমন ভিড়ের এ দৃশ্য যেন নিত্যদিনের। গড়ে প্রতিদিন ধারণ ক্ষমতার তিন থেকে চারগুণ রোগীর চাপ সামলাতে গিয়ে নাজেহাল অবস্থা হাসপাতালটির।

হাসপাতালটিতে সেবা নিতে আসা রোগীর স্বজনরা জানান, হাসপাতালের ফ্লোর, করিডোর, সিঁড়ি তলায় মাদুর আর চাদর মেলে রোগী নিয়ে অবস্থান করছেন অন্তত ২৫০ জন রোগীর স্বজনরা। একদিকে শীতের প্রকোপ অন্যদিকে রোগীদের সংক্রমণের শঙ্কা নিয়ে অনেকটা নিরুপায় হয়েই উন্নত চিকিৎসার আশায় মানবেতরভাবে হাসপাতালে অবস্থান করছেন তারা। সব ধরনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, অস্ত্রোপচারের সুবিধা না থাকাসহ হাসপাতালটির নাজেহাল অবস্থায় এক থেকে দুই দিনের মধ্যে সদর হাসপাতাল ছেড়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল, খুলনা মেডিকেলসহ ঢাকায় রোগী স্থানান্তর করতে বাধ্য হচ্ছেন রোগীর স্বজনরা। আশ্বাসে সীমাবদ্ধ না থেকে দ্রুত ২৫০ শয্যা হাসপাতালের বাস্তবায়ন চান সেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা।

আরও পড়ুন:
মমেক হাসপাতালে পদে পদে ভোগান্তি
ঠান্ডা-জ্বরে আক্রান্ত শিশুতে ঠাসা চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতাল

জেলা গণপূর্ত বিভাগের তথ্য বলছে, ২০১৭ সালে নড়াইলে ২৫০ শয্যা হাসপাতালের মূল ভবন, সার্ভিস ভবন ও চিকিৎসকদের জন্য ডরমেটরি ভবন নির্মাণে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) অনুমোদন পায়। ২০১৮ সালের জুন মাসে ৮টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের ৮ তলা ভবনসহ প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শুরু করেন। যার প্রস্তাবিত মূল্য ধরা হয় ৬১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। আর বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ৯ম তলায় ১০ শয্যা বিশিষ্ট আইসিইউ নির্মাণের কাজে প্রস্তাবিত মূল্য ধরা হয় ৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। তিন দফা মেয়াদ বাড়িয়ে গত বছরের জুনে কাজের মেয়াদ শেষে হস্তান্তরের কথা থাকলেও নকশা জটিলতায় লিফটের বাটনে ঝুলে আছে হস্তান্তর প্রক্রিয়া।

নড়াইল সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. আব্দুল গফ্ফার বলেন, সীমিত জনবলসহ নানা সংকটের মাঝে ধারণ ক্ষমতার প্রায় চারগুণ রোগীর সেবা দিচ্ছে নড়াইল সদর হাসপাতাল। ২৫০ শয্যা হাসপাতালের ভবনের কাজ শেষ হয়েছে। এটি একটি বহুমুখী হাসপাতাল। রোগী রাখার স্থান চতুর্থ তলার ওপরে। যে কারণে লিফটের কাজ সম্পন্ন না করে কোনোভাবে হাসপাতালটির সেবা কার্যক্রম চালু করা সম্ভব নয়। লিফটের সমস্যা সমাধান করে কবে নাগাদ হস্তান্তর করবে, সেটা গণপূর্ত বিভাগ বলতে পারবে।

হস্তান্তরের পর কতদিন নাগাদ সেবা কার্যক্রম চালু করা সম্ভব এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য বিভাগের এ কর্মকর্তা বলেন, ভবন প্রস্তুত হলে লোকবল নিয়োগসহ আনুষঙ্গিক অনেক বিষয় বাকি থেকে যায়। মন্ত্রণালয়ের আন্তরিকতায় সেটা হস্তান্তর পরবর্তী আর এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে চালু হতে পারে।

আরও পড়ুন:
‘ডাক্তার হঠাৎ এলেও দালাল আসে নিয়মিত’
চার ডাক্তার দিয়ে চলছে ২ লাখ মানুষের হাসপাতাল!

এদিকে জেলা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মু. সারোয়ার হোসেইন বলেন, লিফটের কাজ শেষ না হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে ২৫০ শয্যা হাসপাতালটি হস্তান্তর করা সম্ভব হয়নি। ১২৫০ কেজির চারটি লিফট (প্যাসেনঞ্জার কাম বেড লিফট) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরিকল্পনা কমিশনে ডিপিপি অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। আশা করা যায় আগামী তিন থেকে চার মাসের মধ্যে অনুমোদন সাপেক্ষে লিফটের কাজ শেষ করে হস্তান্তর করতে পারবো।

২০০৭ সালে জেলা শহরের ৫০ শয্যার হাসপাতালটিকে ১০০ শয্যায় রূপান্তরিত করা হয়।

হাফিজুল নিলু/এমএন/জেআইএম