মমেক হাসপাতালে পদে পদে ভোগান্তি

মো. কামরুজ্জামান মিন্টু মো. কামরুজ্জামান মিন্টু , জেলা প্রতিনিধি, ময়মনসিংহ ময়মনসিংহ
প্রকাশিত: ০৭:৪০ পিএম, ০২ নভেম্বর ২০২৫

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রোগী ও স্বজনরা। শয্যা সংকট, দালালের দৌরাত্ম্য ও প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনায় ভোগান্তি দিন দিন বেড়েই চলেছে।

হাসপাতালের আউটডোর বিভাগেও একই চিত্র। সকাল থেকে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটতে হয় রোগীদের। অনেক সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও চিকিৎসক দেখানো সম্ভব হয় না। হাসপাতালের টয়লেট ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে রোগীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ রয়েছে। অনেক ওয়ার্ডে দুর্গন্ধ ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়েছে।

মমেক হাসপাতালে পদে পদে ভোগান্তি

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের শতভাগ সরকারি ওষুধ না দেওয়া, পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য রোগীদের প্রাইভেট ক্লিনিকে পাঠানোর অভিযোগও রয়েছে।

ভোগান্তি বাড়িয়েছে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স। সরকারি এই হাসপাতাল এখন প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স চালকদের দখলে। হাসপাতালের সামনে সবসময় সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকে অগণিত অ্যাম্বুলেন্স। রোগী পরিবহনে চাহিদা যতটা, তার চেয়ে অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা অনেক বেশি। রোগী পেলেই ভাড়া হাঁকা হয় ইচ্ছেমতো।

হাসপাতালে পুরাতন ভবনের নিচতলায় বারান্দার শুয়ে ছিলেন মধ্যবয়সী শেফালি খাতুন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘শরীরের বেশ কিছু সমস্যা নিয়ে জেলার তারাকান্দা উপজেলা থেকে এসেছি। কিন্তু শত চেষ্টা করেও বেড পাওয়া যায়নি। রোগীর মাত্রাতিরিক্ত সংখ্যার কারণে বারান্দার ফ্লোরে একটু জায়গা পেয়েছি। তবে গন্ধে থাকা যাচ্ছে না।’

সাজ্জাত হোসেন ও সুরাইয়া জাহান নামের দুজন জানান, হাসপাতালে পদে পদে ভোগান্তির শেষ নেই। অসাধু কর্মচারীদের বকশিশের নামে টাকা দিলে পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ সব ধরনের আশানুরূপ সেবা পাওয়া যায়। ঘুস না দিলে জোটে ভোগান্তি।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এক হাজার শয্যার জনবল দিয়েই চলছে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম। ৪৭৪ চিকিৎসকের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৩৯০ জন। শূন্য পদের সংখ্যা ৮৪। আউটডোরে ২৫ চিকিৎসকের বিপরীতে ২৫ জন কর্মরত। জরুরি বিভাগে ১২ পদের বিপরীতে মেডিক্যাল অফিসার রয়েছেন ১১ জন। এক হাজার ৯৩ সিনিয়র স্টাফ নার্সের বিপরীতে আছেন এক হাজার ৪৭ জন। তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী ২৪২ জনের বিপরীতে আছেন ১৬৭ জন এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ৪৬১ পদের বিপরীতে কর্মরত ২২৩ জন।

মমেক হাসপাতালে পদে পদে ভোগান্তি

ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলো ছাড়াও গাজীপুর, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, রংপুর ও কুড়িগ্রাম থেকেও রোগীরা এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। এক হাজার শয্যার বিপরীতে বর্তমানে প্রতিদিন চিকিৎসা নিচ্ছেন গড়ে সাড়ে তিন হাজার রোগী। ফলে অনেক রোগীকে মেঝে, করিডোর ও বারান্দায় শুয়ে থেকে চিকিৎসাসেবা নিতে হচ্ছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ময়মনসিংহ মহানগরের সম্পাদক আলী ইউসূফ বলেন, ‘এই হাসপাতাল ময়মনসিংহ ছাড়াও আশপাশের জেলার মানুষের ভরসাস্থল। কিন্তু রোগীরা হাসপাতালে এসে নানাভাবে ভোগান্তিতে পড়ছেন। ভোগান্তি নিরসনে দালালচক্রের দমনসহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষা ও সেবা প্রক্রিয়া সহজ করা প্রয়োজন।’

হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মাইন উদ্দিন খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘সব রোগীকে বিনামূল্যে ওষুধসহ খাবার দেওয়া হয়। তবে অতিরিক্ত রোগী থাকায় সব রোগীর জন্য ওয়ার্ডে বিছানার ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। নতুন ভবন নির্মাণকাজ চলমান। কাজ শেষ হলে রোগীদের বিছানার সমস্যা অনেকটাই কেটে যাবে।’

তিনি আরও বলেন, যে‘সব বিষয়ে রোগীদের অসন্তোষ রয়েছে, সেগুলো সমাধানে আমরা কাজ করছি। যেসব কর্মচারী সেবা দেওয়ার বিনিময়ে টাকা নেন, তাদের বিষয়ে আমাদের তদারকি রয়েছে। প্রমাণ মিললে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. মো. জাকিউল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরাও চাই হাসপাতাল দালালমুক্ত থাকুক। তবে দালালরা ভদ্রবেশে ঘোরাফেরা করায় তাদের চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। আন্তরিকতার সঙ্গে চিকিৎসাসেবা দিতে চিকিৎসক ও নার্সদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।