ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

সংগ্রামী কন্যা ভিক্টোরিয়া

প্রকাশিত: ১১:৫৭ এএম, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৬

মিষ্টির প্যাকেট তৈরি করে লেখাপড়ার খরচসহ সংসারের হাল ধরেছেন ভিক্টোরিয়া আক্তার (২৩)। পাশাপাশি টিউশনি ও শিশু-কিশোরদের গান শেখান তিনি। এসব থেকে যা আয় হয় তা দিয়েই বাবা-মা ও তিনবোনের সংসার চালান তিনি।

ভিক্টোরিয়া জানান, প্রায় দুই বছর আগে তার বাবা মহব্বত বিশ্বাস ব্রেইনস্ট্রোক করে স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। এরপর শুরু হয় ভিক্টোরিয়ার জীবনযুদ্ধ।

প্রথমে ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি শুরু করলেও দুইমাসের মধ্যে এক প্রতারকের খপ্পরে পড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন ভিক্টোরিয়া।

পরবর্তীতে মিষ্টির প্যাকেট তৈরি, গান শিখিয়ে এবং টিউশনি করে লেখাপড়ার খরচসহ সংসার চালান ভিক্টোরিয়া আক্তার।

Victoria

সম্প্রতি দুই লাখ টাকা ঋণ নিয়ে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া এলাকায় বসতবাড়িতে (টিনের ঘর) প্যাকেট তৈরির ছোট কারখানা গড়ে তুলেছে ভিক্টোরিয়া। এই কাজে ভিক্টোরিয়াকে সহযোগিতা করেন তার বাবা-মাসহ দুই বোন।

খুলনা থেকে উপকরণ ক্রয় করেন। এরপর প্যাকেট তৈরি করেন তারা। প্যাকেট তৈরির পর ভিক্টোরিয়ার বাবা দিঘলিয়াসহ স্থানীয় বাজারগুলোতে ভ্যানযোগে সেগুলো সরবরাহ করেন। প্রতিদিন প্রায় দুইশত মিষ্টির প্যাকেট তৈরি করেন তারা।

তারা জানায়, একটি মিষ্টির প্যাকেট তৈরিতে খরচ হয় পাঁচ টাকা। সেটি বিক্রি হয় ছয় টাকায়। এই আয় দিয়েই চলছে তাদের সংসার।

ভিক্টোরিয়া আক্তার নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের বিএ শেষবর্ষের শিক্ষার্থী। গানের পাশাপাশি পারদর্শী আবৃত্তি ও উপস্থাপনায়। এসব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ২০১৬ সালের ১ এপ্রিলে বাড়ির বারান্দায় ‘ভিক্টোরিয়া সংগীত নিকেতন’ প্রতিষ্ঠা করেছেন।

বর্তমানে ১২ জন শিশু-কিশোরকে প্রতি শুক্রবার গান, আবৃত্তি, হাতের সুন্দর লেখা ও উপস্থাপনা শেখানোর পাশাপাশি আদর্শ মানুষ করে গড়ে তোলার নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তবে, স্থান সংকুলান না হওয়ায় বাড়িতে প্রাইভেট পড়ানোসহ গানের স্কুল পরিচালনার ক্ষেত্রে অসুবিধা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

গানের স্কুলটিকে সমাজসেবার অধীনে নিবন্ধনও করতে চান ভিক্টোরিয়া। এ ছাড়া ভিক্টোরিয়া আক্তার গোপালগঞ্জের শেখ ফজিলাতুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে পড়াকালীন বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের (বিএনসিসি) অধীনে অর্জন করেন ক্যাডেট আন্ডার কর্মকর্তা (সিইউও) পদমর্যাদা।

Victoria

এদিকে, ভিক্টোরিয়া আক্তারের উদ্যোগেই ২০১৪ সালের প্রথম দিকে নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজে বিএনসিসির মহিলা প্লাটুন খোলা হয়। রোভার স্কাউটসহ বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গেও জড়িত তিনি।

মেঝ বোন নাইগেরিয়া খানম বলেন, এতোদিন স্থানীয় (দিঘলিয়া) স্কুল ও কলেজে পড়ালেখা করলেও উচ্চশিক্ষার জন্য গোপালগঞ্জের সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে সম্মান শ্রেণিতে (প্রথম বর্ষ) ভর্তি হয়েছি। অচ্ছলতার কারণে এ মুহূর্তে মেসে বা বাসা-বাড়িতেও উঠতে পারছি না।

ছোট বোন এলিজাবেথ পড়ছে স্থানীয় আকড়াবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে।  

ভিক্টোরিয়ার বাবা মহব্বত বিশ্বাস জানান, বসতভিটার (নড়াইলের দিঘলিয়া) পাঁচ শতাংশ জমি ছাড়া তাদের আর কোনো সম্পত্তি নেই।

স্থানীয় প্রগতি প্রি-ক্যাডেট স্কুলের শিক্ষক কানন পাল বলেন, ভিক্টোরিয়া খুব কষ্ট করে এগিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা পেলে আরো ভালো করতে পারবে।

প্রতিবেশি বিউটি রানী সাহা বলেন, প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বে এগিয়ে যাচ্ছে ভিক্টোরিয়া। ওর জীবনযুদ্ধে আমরা অনুপ্রাণিত হই, গর্ববোধ করি।

অপর প্রতিবেশি অনিতা সাহা জানান, ভিক্টোরিয়ার বাবার আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। তবুও পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে তিনবোন।

ভিক্টোরিয়ার মা নাজমা জানান, ব্রিটেনের রানী ‘ভিক্টোরিয়া’র নামানুসারে তার শাশুড়ি বড় মেয়ের নাম রাখেন ‘ভিক্টোরিয়া’। এভাবে কানাডার ‘নায়াগ্রা জলপ্রপাত’ এর নামানুসারে মেঝো মেয়ের নাম ‘নাইগেরিয়া’ এবং ব্রিটেনের অপর রানী এলিজাবেথের নামানুসারে ছোট মেয়ের নাম রাখা হয় ‘এলিজাবেথ’। কিন্তু, সুখের মুখ দেখা হয়নি তাদের। পায়নি রানীদের মতো আয়েশি জীবন।

হাফিজুর রহমান নীলু/এমএএস/আরআইপি