ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

উদ্বোধনের তিন বছরেও চালু হয়নি রাজশাহীর শ্রমিক হাসপাতাল

নিজস্ব প্রতিবেদক | রাজশাহী | প্রকাশিত: ০৪:৪৬ এএম, ২২ জুলাই ২০১৭

দুস্থ শ্রমিকদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবায় হাসপাতাল নির্মাণ করেছে রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন। সরঞ্জামাদি কেনা সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু ঘটা করে উদ্বোধনের প্রায় তিন বছরেও চালু হয়নি হাসপাতালটি। অথচ হাসপাতালের নামে চাঁদা ও অনুদান সংগ্রহ থেমে নেই।

নগরীর নওদাপাড়া বাস টার্মিনালের শ্রমিক ভবনে ২০১৪ সালের ২০ অক্টোবর হাসপাতালটি উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ও নগর সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। মাঝে কেটে গেঠে দুই বছর ১০ মাস। 

পনেরো শয্যার এ শ্রমিক হাসপাতালে রয়েছে জরুরি বিভাগ, অর্থপেডিক সার্জারি ও সাধারণ ওয়ার্ড। এরই মধ্যে সংযোজন হয়েছে অত্যাধুনিক ইসিজি ও এক্স-রে মেশিন। কেনা হয়েছে প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার যন্ত্রাংশও। প্রফেসর ডা. হুমায়ূন কবীরের তত্ত্বাবধানে চারজনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল নিয়োগের বিষয়টিও চূড়ান্ত হয়েছিল।

Rajshahi2

তবে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অ্যাম্বুলেন্স কেনা হয়নি এখনো। নিয়োগ হয়নি চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য জনবল। যদিও শ্রমিক নেতারা দাবি করেছেন, দুজন ওয়ার্ড বয় ও দুজন নার্স নিয়োগ চূড়ান্ত করেছেন তারা।

সম্প্রতি হাসপাতালটিতে গিয়ে দেখা গেছে, সাধারণ ওয়ার্ডে পাতা দুই সারি বেডে ধুলার আস্তরণ। পাশের কক্ষগুলোয় কালো কাপড়ে মোড়ানো ইসিজি ও এক্স-রে মেশিন। সুসজ্জিত চিকিৎসক চেম্বার। ঝকঝকে টাইলস। সবই তালাবদ্ধ পড়ে থাকে সব সময়।

সবকিছু থাকার পরও হাসপাতালটি না হওয়ায় বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ শ্রমিকরা, যাদের চিকিৎসার কথা বলে অনুদান ও চাঁদা তুলে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধও তারা। 

তাদের অভিযোগ, হাসপাতালের নামে কোটি টাকা তুলে নয়-ছয় করেছেন শ্রমিক নেতা কামাল হোসেন রবি ও মাহাতাব হোসেন চৌধুরী। টাকা-পয়সা নিয়ে সম্প্রতি বিরোধে জড়িয়েছেন তারা। ফলে হাসপাতাল চালু আর হচ্ছে না। অথচ হাসপাতালের নামে বিভিন্ন রুটের পরিবহন থেকে চাঁদা আদায় চলছে। আসছে দান-অনুদানও।

Rajshahi3 

বিভিন্ন রুটের বাস থেকে প্রতিদিন ইউনিয়নের নামে আদায় হয় অন্তত ৪০ হাজার টাকা। এছাড়া আঞ্চলিক ইউনিয়নের নামে চারটি পয়েন্ট থেকে ৫ হাজার এবং ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন থেকে অন্তত ৪ হাজার টাকা করে আদায় হয়।

তবে এর অর্ধেক জমা হয় ইউনিয়নের নামে পূবালী ব্যাংকের সেরিকালচার শাখায়। বাকিটা থেকে যায় শ্রমিক নেতাদের পকেটে। আগের সভাপতি কামাল হোসেন রবি এবং সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন চৌধুরীর স্বাক্ষরে এখনো আদায় হচ্ছে এ অর্থ। এছাড়া হাসপাতালটি উদ্বোধনের আগের বছর অনেক আয়োজন করে হাসপাতালের নামে ৬০ লাখ টাকা আদায় হয়। এসব টাকার কোনো হিসাব নেই।

বর্তমানে আগের মেয়াদের সভাপতি কামাল হোসেন রবিকে আহ্বায়ক করে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক হয়েছেন আগের কমিটির দফতর সম্পাদক মোমিনুল ইসলাম মমিন। 

সাধারণ শ্রমিকদের অভিযোগ, এ দুজন ছাড়াও আগের কমিটির সড়ক সম্পাদক আলিমুদ্দিন আলী মিলে দীর্ঘদিন ধরে ইউনিয়নের আর্থিক বিষয় দেখভাল করেন। তারাই হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। যদিও এ অভিযোগ অস্বীকার করছেন তারা। 

Rajshahi4

এদিকে ইউনিয়নে যোগ দেয়ার পর কোটিপতি বনে গেছেন শ্রমিক নেতা কামাল হোসেন রবি ও মাহাতাব হোসেন চৌধুরী। রবি এবং আগের কমিটির দফতর সম্পাদক মোমিনুল ইসলাম মমিনের নামে ‘আরএম এক্সপ্রেস’র চারটি বাস চলছে। রবির মালিকানায় রয়েছে তিনটি ট্রাক। জেলার গোদাগাড়ীর রাজাবাড়ি এলাকায় গড়ে তুলেছেন বাগানবাড়ি। ১০ বছরের জন্য লিজ নিয়েছেন রাজশাহীর ট্রাক টার্মিনাল। ব্যবহার করেন বিলাসবহুল গাড়ি। নগরীর শিরোইল কলোনিতে রয়েছে আলিশান বাড়ি। ইউনিয়নে যোগ দেয়ার পরই এসব করেছেন তিনি।

অন্যদিকে মাহাতাব হোসেন চৌধুরী রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ২৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর। তার মালিকানায় ‘শ্রাবন্তি পরিবহন’র ছয়টি বাস চলছে। আরো দুটি বাসের বডি তৈরির কাজ প্রায় শেষ। তিনিও ঘোরেন বিলাসবহুল গাড়িতে। নগরীর টিকাপাড়া এলাকায় তারও রয়েছে বিলাশবহুল বাড়ি।

অভিযোগ রয়েছে, গত দুই বছরে মাহাতাব ইউনিয়নে ১০০ জনকে সাধারণ সদস্যপদ দেয়ার নামে ২০ লাখ টাকা আদায় করেছেন। শ্রমিক ইউনিয়নের মালিকানাধীন হোটেল গোল্ডেন স্টার বিক্রির ৪১ লাখ টাকাও রয়েছে তার কাছেই।

জানতে চাইলে শ্রমিক ইউনিয়নের আগের কমিটির সভাপতি ও বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক কামাল হোসেন রবি অভিযোগ করেন, হাসপাতালের পুরো টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বিগত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন চৌধুরী। চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনার নামে অনুদানের ১০ লাখ টাকাও হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। এ কারণেই হাসপাতাল চালু করতে পারছেন না তারা।

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেন মাহাতাব হোসেন। তার দাবি, হাসপাতালসহ ইউনিয়নের পুরো অর্থের হিসাব দেখভাল করতেন কামাল হোসেন রবি ও দফতর সম্পাদক মোমিনুল ইসলাম মোমিন। তারা দুজনই সব টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

তার ভাষ্য, চিকিৎসা সরঞ্জাম কিনতে ১০ লাখ টাকা আর্থিক অনুদান দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাজশাহী সিটি করপোরেশন কেনাকাটা সম্পন্ন করেছে। এ নিয়ে ওঠা অভিযোগ ভিত্তিহীন। অবশ্য রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) রিয়াজত হোসেন সরঞ্জামাদি কেনাকাটার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এফএ/এমএস

আরও পড়ুন