ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

মধুমতির পেটে যাচ্ছে দুই গ্রাম

জেলা প্রতিনিধি | নড়াইল | প্রকাশিত: ০৪:৪১ এএম, ০১ জানুয়ারি ২০১৮

নড়াইলের মধুমতি নদীর অব্যাহত ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন লোহাগড়া উপজেলার মঙ্গলপুর ও চাপুলিয়া গ্রামবাসী। নদী ভাঙনে নিঃস্ব এই দুই গ্রামের চার শতাধিক পরিবার। প্রায় ১৫ বছর ধরে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে নদীতে পানির চাপ না থাকলেও ইতোমধ্যে ভেঙেছে দু’টি গ্রামের বসতবাড়ি, গাছপালাসহ কৃষিজমি। বিশেষ করে মধুমতি নদী ভাঙনের শিকার নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার চরমঙ্গলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং চাপুলিয়া বাবুচ্ছন্নাৎ দাখিল মাদরাসা টিকিয়ে রাখার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী।

মঙ্গলপুর গ্রামের ইসহাক আলী বলেন, মধুমতি নদীগর্ভে আমাদের এলাকার ২০০ বাড়িঘর বিলীন হয়েছে। এখন চরমঙ্গলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ভাঙছে।

কোটাকোল ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মুজিবার রহমান বলেন, আগে এখানে প্রায় এক হাজার ৮০০ ভোটার ছিল। নদী ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে বর্তমানে প্রায় এক হাজার ২০০ ভোটার আছেন। ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান এই জনপ্রতিনিধি।

চরমঙ্গলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহাবুদ্দিন মোল্যা জানান, দীর্ঘদিন ধরে মধুমতি নদী ভাঙতে ভাঙতে এখন বিদ্যালয়ের কাছাকাছি চলে এসেছে। বিদ্যালয় মাঠটি প্রায় বিলীন হওয়ায় শিক্ষার্থীরা খেলাধূলা করতে পারে না। নদীতে পড়ে যাওয়ার ভয়ে অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে আসতে দিতে চান না। ফলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে।

নড়াইলের কোটাকোল ইউনিয়নের চাপুলিয়া বাবুচ্ছন্নাৎ দাখিল মাদরাসা, ফসলি জমি, গ্রামের কাঁচা রাস্তাসহ বাড়িঘর সম্প্রতি মধুমতি নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। এছাড়া চাপুলিয়া এলাকার প্রায় ৩০০ বাড়ি ভাঙনের হুমকিতে আছে।

modhumoti

এদিকে নভেম্বরের প্রথম দিকে নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে অবৈধ ভাবে বালুকাটায় চাপুলিয়া এলাকার মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। যদিও লোহাগড়া উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে গত ১২ নভেম্বর চাপুলিয়া এলাকায় মধুমতি নদী থেকে অবৈধ বালুকাটা বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় ভাঙন প্রতিরোধের দাবিতে সম্প্রতি এলাকাবাসী চাপুলিয়ায় মানববন্ধন করেন।

চাপুলিয়ার আমিরুল ইসলাম বলেন, চাপুলিয়া মাদরাসা থেকে খাশিয়াল খেয়াঘাট পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার অংশে বালুকাটায় দুই বছর ধরে মধুমতি নদী ভাঙছে। এতে চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৩০০ বাড়িঘরসহ গ্রামের ভেতরের কয়েকটি রাস্তা ভাঙনের হুমকিতে আছে।

চাপুলিয়া বাবুচ্ছন্নাৎ দাখিল মাদরাসার সহকারী শিক্ষক মোল্যা বাবুল হোসেন বলেন, মাদরাসাটি ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে আসছে। তবে মধুমতি নদীর ভাঙনে মাদরাসাটি হুমকি মুখে।

মাদরাসার সাবেক সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, মাদরাসার প্রায় ছয় বিঘা জমির মধ্যে ইতোমধ্যে চার বিঘা জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

কোটাকোল ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য আবু হোসেন বলেন, আমাদের প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভাঙছে। ভাঙনের কবলে পড়ে আমরা মধুমতি নদীর ওপার থেকে এপারে চলে এসেছি। এখন যেখানে বসবাস করছি, সেখানেও ভাঙছে। ভাঙন প্রতিরোধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ চাই।

এসব বিষয়ে নড়াইলের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহনেওয়াজ তালুকদার বলেন, লোহাগড়া উপজেলার মঙ্গলপুর ও চাপুলিয়া এলাকার ভাঙন প্রতিরোধে প্রস্তাব পাঠানো হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট এলাকায় গিয়ে আরো খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে।

হাফিজূল নিলু/এফএ/জেআইএম

আরও পড়ুন