ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

পাহাড়ধস : ৭ মাসেও ঠিক হয়নি রাঙ্গামাটির সড়কগুলো

জেলা প্রতিনিধি | রাঙ্গামাটি | প্রকাশিত: ০৩:৫৩ পিএম, ২৪ জানুয়ারি ২০১৮

যান চলাচলে ভোগান্তির অন্ত নেই। যেখানে পাহাড়ধসের দুর্যোগের প্রায় ৭ মাস পার হতে চলেছে। অথচ ওই দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রামসহ জেলার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো আজও পড়ে আছে বেহাল দশায়।

আর কয়েক মাস পর আবার শুরু হবে বর্ষা। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের স্থায়ী মেরামত ও পুনর্নির্মাণ কাজ শুরুই হয়নি। দুর্যোগের পর এসব ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের কেবল সাময়িক সংস্কার কাজে ব্যয় হয়েছে প্রায় তিন কোটি টাকা।

এসব কাজের বেশিরভাগ স্থানে গাছের খুঁটি দিয়ে পাইলিং করা হয়েছে। এছাড়া রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের সাপছড়ির শালবনে নির্মিত অস্থায়ী বেইলি সেতুতে ব্যয় হয়েছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা। প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ অনেকে বলছেন, এসব টাকা ব্যয় হয়েছে অযথা। কেননা সড়কগুলোর কোনটাই স্থায়িত্ব হতে পারেনি।

২০১৭ সালের ১৩ জুন ভয়াবহ পাহাড়ধসের ঘটনায় রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রামসহ জেলার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ঘটনায় প্রাণহানি ঘটে ৫ সেনা সদস্যসহ ১২০ জনের।

রাঙ্গামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের তথ্যমতে, পাহাড়ধসের ঘটনায় রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের ৩১ স্থানে বড় ধরনের ভাঙন ও গর্তের সৃষ্টি হয়। এছাড়া শহরের মধ্যে ৮ স্থানে ভাঙন ও গর্ত হয়েছে।

সব মিলিয়ে প্রধান শহরসহ রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে মোট ৩৯ স্থানে ভাঙন ও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব ভাঙন ও গর্তের সাময়িক সংস্কার কাজ করা হয়েছে গাছের খুঁটি গেড়ে পাইলিং দিয়ে। যেখানে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৮২ লাখ টাকা। যার মধ্যে রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের ৩১ স্থানে ভাঙন মেরামত কাজে গাছের খুঁটি দিয়ে পাইলিং ও মাটি ভরাট করতে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৩১ লাখ টাকা। আর শহরের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ৮ স্থানে ভাঙন মেরামত কাজে ব্যয় হয়েছে ৫১ কোটি টাকা।

এছাড়া বিলীন হওয়ায় রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের সাপছড়ির শালবনে অস্থায়ীভাবে যান চলাচলের জন্য নির্মিত হয়েছে একটি বেইলি সেতু। যেখানে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কটি যাতায়াত ও যান চলাচলে মোটেও নিরাপদ সড়ক নয়। সড়কের দুই পাশে যে ৩১ স্থানে ভাঙন হয়েছে এবং বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় গর্ত রয়ে গেছে, সেগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এসব সড়ক দিয়ে যাতায়াতে মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বলে জানায় যানবাহন চালকরা।

jagonews24

এদিকে, পাহাড়ধসের ঘটনায় রাঙ্গামাটি জেলার সঙ্গে সংযুক্ত সড়কের মধ্যে ১১৫ স্থানে ভাঙন ও গর্ত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। এসব সড়কের মধ্যে রয়েছে, রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি-কাপ্তাই-বান্দরবান সড়কসহ অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সড়ক। এসব সড়কে গাছের খুঁটি দিয়ে করা পাইলিং ও মাটি ভরাট কাজ সরকারি দলের লোকজন ভাগাভাগি করে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠছে।

জানতে চাইলে রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মো. মানজারুল মান্নান বলেন, এখানে কাজে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে বলে মনে হয়। রাঙ্গামাটিতে যেকোনো উন্নয়ন কাজে সমন্বয় থাকলে দ্রুত সমস্যার সমাধান হতে পারতো। এখানে যে যার যার ইচ্ছামতো কাজ করছে।

তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, পার্বত্য জেলা পরিষদ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডি, গণপূর্ত, এডিবিসহ বেশ কিছু সংস্থা রয়েছে। তারা সমন্বয় করে কাজ করলে এসব সমস্যার দ্রুত সমাধান সম্ভব হতো।

সাময়িক সড়ক সংস্কার নিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, সড়কের দুই পাশে গাছের খুঁটি দিয়ে যেসব পাইলিং কাজ করা হয়েছে এগুলো অযথা। বর্ষা আসার সঙ্গে সঙ্গে এসব গাছের খুঁটির পাইলিং ভেঙে যাবে। এগুলো কোনো কাজে আসবে না।

যোগাযোগ করা হলে রাঙ্গামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. এমদাদ হোসেন জানান, পাহাড়ধসের ঘটনায় রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে ৩১ এবং প্রধান শহরের মধ্যে ৮ স্থানসহ মোট ৩৯ স্থানে স্থায়ী আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে নকশাসহ প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। নকশার অনুমোদন এসে গেছে। কিছু দিনের মধ্যে বরাদ্দের চাহিদা অনুযায়ী চিঠি পাঠানো হবে। বরাদ্দ পেলেই টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।

তবে এজন্য বর্ষা মৌসুম মাথায় রেখে এসব কাজ হাতে নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। সাপছড়ির শালবন বেইলি সেতু নির্মাণে ২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানান তিনি।

সুশীল প্রসাদ চাকমা/এএম/আরআইপি

আরও পড়ুন