আজও ফেরা হয়নি রতনের
সেদিন ছিল ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। পড়ন্ত এক বিকেল। ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের এক সমাবেশে যোগ দিতে রওনা দেয় নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা উপজেলার গাবতলী এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রতন শিকদার। আর রতন খুবই ভক্ত ছিল আওয়ামী লীগের। আওয়ামী লীগ আর বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসার কারণে সবকিছু ফেলে সভা-সমাবেশে চলে যেত রতন।
রতন এটা শিখেছিল পরিবার থেকে। ওর বাবা আবদুল হক শিকদারও ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ভক্ত। সেদিন (২১ আগস্ট) অনেক কাজ ছিল রতনের। কিন্তু ঢাকা গিয়েছিল শুধু নেত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ শুনতে। যাওয়ার আগে বলে গিয়েছিল রতন মাকে বলেছিল `আজ তাড়াতাড়ি ফিরব।`
কিন্তু দীর্ঘ ১১টি বছর পার হলেও মায়ের কোলে ফেরা হয়নি রাজনীতি প্রেমী রতন শিকদারের। বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে যোগ দেন রতন। কিন্ত তখনও রতন বুঝেনি না ফেরার দেশে তাকে নিয়ে যেতে অপেক্ষা করছিল ঘাতক গ্রেনেড। বিকেলে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য চলাকাল গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হয় রতন। পরে হাসপাতালে নেয়ার পথে আহত রতন সঙ্গিদের কাছে বারবার জিজ্ঞেস করছিল `আমার নেত্রী বেঁচে আছে তো`।
একথা বলতে বলতে রতন নিজেই এক সময় ঢলে পড়ে মৃত্যুর কোলে। আর সেই সঙ্গে নিভে যায় এক প্রকৃত রাজনৈতিক কর্মীর জীবন প্রদীপ। বর্বরোচিত সে গ্রেনেড হামলায় তিনিসহ নিহত হন ২৪ জন।
এদিকে, দীর্ঘ ১১ বছরেও ওই পরিবারের কান্না থামেনি। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির অকালমৃত্যুতে পরিবারে বিরাজ করছে চরম অর্থকষ্ট।
রতন শিকদার পেশায় ছিলেন একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। বিভিন্ন টেক্সটাইল মিল থেকে কাপড় কিনে তিনি তা দোকানে বিক্রি করতেন। রতনের মৃত্যুর পর স্ত্রী রোজিনা আক্তার দুই সন্তান নিয়ে যাত্রাবাড়ীতে ভাড়া বাসায় তার বাবা-মায়ের সংসারে গিয়ে ওঠেন। ২১ আগস্ট আসলেই স্বামী রতনকে বারবার মনে পড়ে স্ত্রী রোজিনা আক্তারের। আর ওই দিন পরিবারের সদস্যদের কান্নায় আকাশ-বাতাস যেনো ভারী হয়ে উঠে।
গাবতলীর বাড়িতে কথা হয় রতন শিকদারে ছোট ভাই কবির উদ্দিন শিকদার ওরফে টুটুল সিকদারের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে জানান, `আমার ভাই মরে গিয়েছে আমি বুঝি ব্যথা কি ? তারা কি আমার ব্যথা বুঝবে।
তিনি আরো জানান, আওয়ামী লীগ আর বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসা রতন শিখেছিল পরিবার থেকে। বাবা মৃত আব্দুল হক শিকদারও ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ভক্ত। রতন মৃত্যুর পর প্রথমে এক লাখ টাকা প্রদান করা হয়। ২০১৩ সালে রতনের দুই ছেলে মেয়েকে দুই লাখ টাকা করে ফিক্সড ডিপোজিট করা হয়েছে।
দলের নেতাকর্মীরা খবর না নিলেও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান খোঁজ খবর নেন। কোন সমস্যায় তাঁর কাছে গেলে সহায়তা করেন।
শাহাদাৎ হোসেন/এআরএ/বিএ