ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

পাঁচ মাসে জামালপুরের সড়কে ২৬ প্রাণহানি, দায় কার?

জেলা প্রতিনিধি | জামালপুর | প্রকাশিত: ০১:১২ পিএম, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২

জামালপুরে গত পাঁচ মাসে বিভিন্ন উপজেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ২৬ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। আহত হয়েছেন আরও ১৫ জন, যাদের মধ্যে কয়েকজন পঙ্গুত্বও বরণ করেছেন। দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ও পৌর ছাত্রলীগের সভাপতিসহ, নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য, মোটরসাইকেল আরোহী, ভ্যানচালক ও নানা পেশাজীবী মানুষ।

গত কয়েক মাসের তুলনায় ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি উভয়ই বেড়েছে।

সরেজমিন ও বিভিন্ন সূত্রের ভিত্তিতে জানা যায়, জেলায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর সরিষাবাড়ী, ৬ সেপ্টেম্বর মাদারগঞ্জ, ৭ ও ২১ সেপ্টেম্বর সদর উপজেলায় একজনের করে মৃত্যু হয়। সর্বশেষ ২৭ সেপ্টেম্বর মেলান্দহ উপজেলায় একজন নিহত ও তিনজন গুরুতর আহত হন।

সরিষাবাড়ী উপজেলায় ২ অক্টোবর একজন, ৬ ও ২৭ অক্টোবর দুজনের মৃত্যু হয়। এছাড়াও ২৫ অক্টোবর মেলান্দহ উপজেলার ডেফলা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় পিকআপ ভ্যানের সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে এক ছাত্রলীগ কর্মী নিহত ও আহত পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি ওসমান গনি বিজয় পাশা চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন মৃত্যুবরণ করেন।

acc4

নভেম্বর মাসে এই জেলায় সবচেয়ে কম সংখ্যক মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন। তবুও এ মাসে ৮ তারিখে সদর উপজেলায় দুইজন ও ইসলামপুরে একজনের মৃত্যু হয়।

তবে ডিসেম্বর মাসের ২০ তারিখে সদর উপজেলায় একজন, ২৬ তারিখে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় দুইজন ও ৩১ তারিখে সদর উপজেলায় দুইজন ও মেলান্দহ উপজেলায় একজন নিহত হন।

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এই মাসের ১০ তারিখ সন্ধ্যায় জামালপুর পৌরসভার ময়লার ডাম্পিং স্টেশনের সামনে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় গোলাম সরওয়ার জাহান আঁকা নামে এক আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু হয়। তিনি জামালপুর পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।

এছাড়াও ১৭ জানুয়ারি ইসলামপুরে দুইজন, ২১ জানুয়ারি মাদারগঞ্জে একজন, ২৯ জানুয়ারি সরিষাবাড়িতে একজন ও ইসলামপুরে একজন এবং সর্বশেষ ৩০ জানুয়ারি সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের বিনন্দেরপুর এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় পঞ্চাশোর্ধ্ব এক ব্যক্তি নিহত হন।

acc4

সদর উপজেলার কামালখান এলাকার ছানোয়ার হোসেন বলেন, লিংক রোড দিয়ে মহাসড়কে ভ্যান-রিকশা চলাচলের কারণে হরহামেশাই ঘটছে দুর্ঘটনা। গ্রামের সহজ সরল মানুষ ও উঠতি বয়সী মোটরসাইকেল চালকরাই মূলত এ দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। বছরে এ এলাকায় ১৫ থেকে ২০টি দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। ২০২১ সালে তাদের এ মোড়ে চারজনের প্রাণহানিসহ কয়েকজন পঙ্গুত্ব বরণ করেছে বলেও জানান তিনি।

প্রাবন্ধিক ও গণমাধ্যমকর্মী জাকারিয়া জাহাঙ্গীর বলেন, উঠতি বয়সী ছেলেদের বাবা-মা শখ করে মোটরসাইকেল কিনে দেন। সন্তানের হাতে অপ্রয়োজনে মোটরসাইকেলের চাবি তুলে দেওয়া মানে মৃত্যুর টিকিট কেটে দেওয়া। এ বিষয়ে সামাজিক সচেতনতার অভাবে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। এছাড়া অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের প্রশাসন আইনের আওতায় আনতে চান না। দালাল ও বিআরটিএর উৎকোচ বাণিজ্যসহ নানা হয়রানির কারণে গাড়ির লাইসেন্স নিতে চান না অনেকেই। উপরন্তু ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হয় প্রার্থীর কোনোপ্রকার পরীক্ষা ছাড়াই। এসব বিষয়ে সরকারকে আরো কঠোর হতে হবে।

এ বিষয়ে নিরাপদ সড়ক চাই‘র (নিসচা) জামালপুর জেলা সভাপতি মীর এমরুল হোসেন অঙ্কুর জাগো নিউজকে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন ও সড়ক ব্যবস্থার বেহাল দশা। এছাড়াও চালকদের বেপরোয়া গতি ও মানসিকতা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, উঠতি বয়সী তরুণদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, জনসাধারণের ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতির জন্য এসব দুর্ঘটনা ঘটছে।

acc4

এছাড়াও গণপরিবহণ খাতে চাঁদাবাজি, লাইসেন্স প্রাপ্তিতে হয়রানিও সড়ক অব্যবস্থাপনার জন্য দায়ী বলে তিনি মনে করেন।

এ বিষয়ে জামালপুরের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর ফকির সাইফুদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার কারণে ঘটছে দুর্ঘটনা। তবে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছি।

এদিকে বেপরোয়া যানচলাচল, স্পিড ব্রেকারে রিফ্লেক্টিং লাইট না থাকা ও মোটরসাইকেল আরোহীদের হেলমেট না পরাকেই দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে মনে করছেন পুলিশ সুপার নাছির উদ্দিন আহমেদ।

এ বিষয়ে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা একটি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। ট্রাফিক পুলিশ এসকল দুর্ঘটনা রোধে সর্বদা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রতিটি স্পিড ব্রেকারে রিফ্লেক্টিং লাইটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এটি নিয়ে কাজও শুরু করা হয়েছে। আশা করছি সকল প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে আগামীতে আমরা দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে সক্ষম হবো।

নাসিম উদ্দিন/এফএ/এমএস