উজির মিয়ার মৃত্যু: ২ এসআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা তদন্তের নির্দেশ
বাঁ থেকে মৃত উজির মিয়া ও ক্লোজড হওয়া দেবাশীষ সূত্রধর
সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জে পুলিশের নির্যাতনে উজির মিয়া নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুর অভিযোগে দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে করা মামলা গ্রহণ করেছেন আদালত। সিলেটের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ সুপারকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মামলার বাদী উজির মিয়ার ভাই ডালিম মিয়ার জবানবন্দি গ্রহণ শেষে বুধবার (২ মার্চ) দুপুরে এ আদেশ দিয়েছেন সুনামগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ ওয়াহিদুজ্জামান শিকদার।
এর আগে ২৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে উজির মিয়ার ভাই ডালিম মিয়া বাদী হয়ে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেছিলেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে সদ্য ক্লোজড হওয়া শান্তিগঞ্জ থানার সাবেক উপ-পরিদর্শক (এসআই) দেবাশীষ সূত্রধর ও শান্তিগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আলাউদ্দিনকে।
মামলাটি পিবিআইয়ের তদন্তের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট রোকেস লেইস। তিনি বলেন, ‘উজির মিয়াকে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগে আদালতে দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আমরা গত সোমবার মামলার আবেদন করেছিলাম। আদালত আজ বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ শেষে সিলেট পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার খালেদ উজ জামানকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আমাদের দাবি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের যেন শাস্তি নিশ্চিত হয়।’
মামলার বাদী উজির মিয়ার ভাই ডালিম মিয়া বলেন, ‘আমার নির্দোষ ভাইকে চুরির অপবাদ দিয়ে নির্মমভাবে পুলিশ নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে। দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আমরা আদালতে মামলা করেছি। আশা করি আমরা আদালতের কাছে ন্যায় বিচার পাবো।’
এর আগে ২৭ ফেব্রুয়ারি উজির মিয়াকে নির্যাতনের অভিযোগে শান্তিগঞ্জ থানার সাবেক এসআই দেবাশীষ সূত্রধরকে দিরাই থানা থেকে ক্লোজড করে সুনামগঞ্জ পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।
শান্তিগঞ্জের শত্রুমর্দন গ্রামের বাসিন্দা উজির মিয়া ছোটখাটো ব্যবসা করতেন। গত ৯ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে গরু চুরির ঘটনায় উজির মিয়াকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায় শান্তিগঞ্জ থানার পুলিশ। এরপর থানায় নিয়ে তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। পরদিন তাকে একটি চুরির মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ। ওই দিনই আদালত থেকে উজির মিয়া জামিনে ছাড়া পান।
বাড়িতে আসার পর উজির মিয়ার সারা শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন দেখতে পান পরিবারের সদস্যরা। এরপর উজির মিয়া অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে পাঁচ দিন চিকিৎসার পর কিছুটা সুস্থ হলে তাকে আবার বাড়িতে আনা হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ছাতকের কৈতক হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এরপর ঘটনার সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যদের আইনের আওতায় আনার দাবিতে ওই দিন দুপুরে উপজেলার পাগলাবাজার এলাকায় মরদেহ নিয়ে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন এলাকাবাসী। পরে প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে উত্তেজিত লোকজনকে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।
২২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে উজির মিয়ার স্বজন ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ দাফন করা হয়। পুলিশের নির্যাতনে উজির মিয়ার মৃত্যুর অভিযোগের ঘটনায় সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও পুলিশের পৃথক দুটি কমিটি তদন্ত কাজ করছে।
লিপসন আহমেদ/এসজে/এএসএম