সবুজ বান্দরবান লাল হচ্ছে রক্তে, দুই মাসে ১৮ হত্যাকাণ্ড
বান্দরবান/ফাইল ছবি
সবুজ পাহাড়ের জেলা বান্দরবান দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে এক আকর্ষণীয় কেন্দ্র। পর্যটনের কারণে সেখানকার অর্থনীতিতে ফিরছিল গতি, মুখে হাসি ফুটছিল বাঙালি-পাহাড়ি সব মানুষের মুখে। কিন্তু কিছু আঞ্চলিক সংগঠন ও সন্ত্রাসীদের আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে নিয়মিত রক্ত ঝরছে সেখানে। ঘটছে প্রাণহানি।
গত দুই মাসে (৬২ দিন) এই জেলায় দুই নারীসহ ১৮ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি থেকে ৬ মার্চ (রোববার) পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। সর্বশেষ গত রোববার জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলার সাঙ্গু নদীর পাড় থেকে চার যুবকের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
জানা যায়, ২০২২ সালের ৩ জানুয়ারি লামা রূপসীপাড়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড অংহ্লা পাড়ায় শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে সন্ত্রাসীর গুলিতে নিহত হন মংক্যচিং মার্মা (৩৬)। ৬ জানুয়ারি বান্দরবান সদর থানার রাজবিলা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড থংজমা পাড়ায় নিজ বাড়িতে নিহত হন সিংয়ানু মারমা (৩০)। এ ঘটনায় তার স্বামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এরপর ২ ফেব্রুয়ারি বান্দরবানের রুমা জোনের একটি সেনা টহল দলকে রুমা বথিপাড়া এলাকায় লক্ষ্য করে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা গুলি চালায়। পরে উভয়পক্ষের গুলিবিনিময়ে সেনাবাহিনীর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হাবিবুর রহমান নিহত হন। একই ঘটনায় তিন সন্ত্রাসীও নিহত হয়। এ ঘটনায় আরেক সেনাসদস্য ফিরোজ পায়ে গুলিবিদ্ধ হন।

বান্দরবানে একই পরিবারের পাঁচজনকে হত্যার ঘটনায় মরদেহ উদ্ধারে পুলিশ
২৫ ফেব্রুয়ারি রুমা উপজেলার গ্যালেংগা ইউনিয়নের আবু পাড়ায় পাড়াপ্রধান লংরুই ম্রোসহ (৬৫) তার পরিবারের পাঁচজনকে কুপিয়ে হত্যা করে পাড়াবাসীরা। এ ঘটনায় ওই পাড়ার ২২ জনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।
২৬ ফেব্রুয়ারি রোয়াংছড়ি উপজেলার নতুন পাড়ায় মংসিং শৈ মারমা (৩৬) নামে এক যুবককে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ৩ মার্চ রোয়াংছড়ি উপজেলার নোয়াপতং ইউনিয়নের নারী কারবারি পাড়া এলাকার একটি জুম ঘরে চুইরংমা মারমাকে (৪০) গলা কেটে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করে রোয়াংছড়ি থানা পুলিশ।
৫ মার্চ রোয়াংছড়ি উপজেলার তারাছা ইউনিয়নের মারমা পাড়ায় উনু মং রয়েল (৩৮) নামে জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) এক সদস্যকে হত্যা করে মরদেহ নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। সর্বশেষ ৬ মার্চ রোয়াংছড়ি ও রুমা উপজেলার মধ্যবর্তী তারাছা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড মংবাইতং পাড়া এলাকার নদীর দক্ষিণপাড় থেকে গুলিবিদ্ধ চার পাহাড়ি যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে রুমা থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনী।

গত ৩ জানুয়ারি গভীর রাতে বাড়ি ঘিরে এক জেএসএস কর্মীকে গুলি করে হত্যা করা হয়
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই দুই মাসে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বেশিরভাগই হয়েছে পাহাড়ে সক্রিয় কিছু আঞ্চলিক সংগঠনের আধিপত্য বিস্তার ও সন্ত্রাসীদের দ্বন্দ্বের জেরে।
সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে জানতে চাইলে বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অশোক কুমার পাল বলেন, পাহাড় ও সমতলের হত্যাকাণ্ড এক নয়। দুই নারী ও পাড়াপ্রধান লংরুই ম্রোসহ তার পরিবারের পাঁচজনকে হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। বাকি হত্যাকাণ্ডগুলো আঞ্চলিক সংগঠন জেএসএস, ইউপিডিএফ, মগ লিবারেশন পার্টি এদের ক্ষমতার আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে হয়েছে।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, পাহাড় তাদের (সন্ত্রাসীদের) জন্য যত সহজ আমাদের জন্য তত কঠিন। যাতায়াত দুর্গমতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে তারা এ অপকর্মগুলো চালিয়ে যাচ্ছে। তবে দ্রুত সেনাবাহিনীর সহায়তায় যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে সন্ত্রাসীদের নির্মূল করা হবে।
নয়ন চক্রবর্তী/এমআরআর/এমএস