ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

বর্ষায় ভরসা নৌকা, শুকনো মৌসুমে নড়বড়ে সাঁকো

জেলা প্রতিনিধি | নীলফামারী | প্রকাশিত: ১১:২১ এএম, ২০ মার্চ ২০২২

নীলফামারী ও লালমনিরহাটের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে বুড়িতিস্তা নদী। ফলে নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার চারটি ইউনিয়ন ও লালমনিরহাটের একটি ইউনিয়নের ২২ গ্রামের বাসিন্দাদের নদী পার হয়ে জেলা সদরে যেতে হয়। কিন্তু একটি ব্রিজের অভাবে প্রতিনিয়ত দুভোর্গে পড়তে হচ্ছে অর্ধলক্ষাধিক মানুষকে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নীলফামারীর গোলমুন্ডা, ডাউয়াবাড়ী, সৌলমারী, কইমারী ইউনিয়ন ও লালমনিরহাটের হাতিবান্ধার একটি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের বুড়িতিস্তা নদীর মনছারের ঘাট পার হয়ে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে নৌকা আর শুকনো মৌসুমে নড়বড়ে বাঁশ-কাঠের সাঁকো দিয়েই তাদের পারাপার হতে হয়। এতে অনেকে হারিয়েছেন প্রাণ। অনেক প্রসূতি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যেতে না পেরে মাঝ নদী কিংবা সাঁকোর ওপরে প্রসব করেছেন সন্তান।

সেতুর অভাবে উন্নয়ন বঞ্চিত নদীর অপর পাড়ের এসব বাসিন্দারা। তাদের জীবনে লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া। শিক্ষা, চিকিৎসা ও যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন থেকেও তারা বঞ্চিত।

এলাকাবাসী জানান, দীর্ঘদিন ধরে মনছারের ঘাট এলাকায় বুড়িতিস্তা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের দাবিতে মিছিল, মিটিং, মানববন্ধন এবং কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করেও পাওয়া যায়নি কোনো সুফল। নির্বাচন এলেই স্থানীয় চেয়ারম্যান আর জাতীয় সংসদ সদস্যরা সেতু নির্মাণে নানান প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর আর কারও কোনো খবর থাকে না। সেতুর অভাবে সময় মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পৌঁছাতে পারে না শিক্ষার্থীরা।

জলঢাকা উপজেলার ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়নের হলদিবাড়ী গ্রামের করিম উদ্দিনের ছেলে মিজানুর রহমান (৩৫) বলেন, প্রায় ৫০ হাজার মানুষ মনছারের ঘাট দিয়ে বুড়িতিস্তা নদী পারাপার হয়। শুকনো মৌসুমে নড়বড়ে কাঠের সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হয় সবাইকে। তবে বর্ষা মৌসুমে নৌকাই একমাত্র ভরসা। অপেক্ষা করতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। অনেক সময় নৌকা উল্টে দুর্ঘটনাও ঘটে। রোগী বা প্রসূতিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না।

একই এলাকার উমর আলীর ছেলে রুবলে হোসেন (২৯) বলেন, কাঠের সাঁকো দিয়ে একজন মানুষ পারাপার হলে ৩০টাকা দিতে হয়। একটি মোটরসাইকেল পার হলে ২৫ টাকা আর সাইকেল, ভ্যান, অটোরিকশাকে দিতে হয় ৩০ টাকা। সেতু নির্মাণ হলে আমারদের এ দুর্ভোগ থাকবে না। তাই সেতু নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।

jagonews24

ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়নের নেকবক্ত গ্রামের মজিব ইসলাম বাইজিদ বলেন, প্রতিদিন আমরা কাঠের নড়বড়ে সাঁকোর ওপর দিয়ে স্কুলে যাওয়া-আসা করি। সাঁকো ভাঙা থাকায় অনেক সময় ছাত্র-ছাত্রী নদীতে পড়ে আহত হয়। বর্ষায় নৌকা সময়মত ঘাটে না আসায় স্কুলে যেতে এক ঘণ্টা দেরি হয়। সময়মত স্কুলে পৌঁছাতে না পারলে ঠিকমতো পড়া দিতে পারি না এবং শিক্ষকদের গালমন্দ শুনতে হয়। ব্রিজটি নির্মাণ হলে আমরা ঠিক সময়ে স্কুলে যাওয়া-আসা করতে পারবো। তাই ব্রিজটি দ্রুত নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।

জলঢাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুব হাসান জাগো নিউজকে বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে একটি টিম মনছেরের ঘাটে সেতু নির্মাণে প্রাক সমীক্ষা করে গেছেন। তারা প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কি-না জানা নেই। তবে এখানে একটি সেতু নির্মাণ খুব জরুরি। এটি নির্মিত হলে অবহেলিত ওই অঞ্চলে জীবন-জীবিকা পাল্টে যাবে।

নীলফামারী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, মনছেরের ঘাটে সেতু নির্মাণ এখন সময়ের দাবি। সেতুটি হলে ওই এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর হবে। বদলে যাবে মানুষের জীবনযাত্রার মান।

এসজে/এমএস