পায়ের ছাপটি বাঘের নয়, কুকুরের: উদ্ধার টিম
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন সংশ্লিষ্টরা
নীলফামারী সদর উপজেলার চওড়া বড়গাছা ইউনিয়নের কাঞ্চনপাড়ায় চিতাবাঘ উদ্ধার অভিযান সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ। তারা বলছেন, ক্ষেতের মধ্যে আরেকটি বাঘ লুকিয়ে রয়েছে বলে গুঞ্জন থাকলেও বাঘের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এছাড়া যে পায়ের ছাপকে বাঘের পায়ের ছাপ মনে করা হয়েছিল সেটি কুকুরের পায়ের ছাপ বলছে উদ্ধার টিম।
তবে উদ্ধার অভিযান স্থগিত করা হলেও সবাইকে আপাতত দলবদ্ধভাবে চলাফেরা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
রোববার (২০ মার্চ) বিকেল ৩টায় নীলফামারী প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ঢাকা বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা রথীন্দ্র কুমার বিশ্বাস।

শুক্রবার (১৮ মার্চ) ভোরে সদর উপজেলার চওড়া বড়গাছা ইউনিয়নের কাঞ্চনপাড়ায় মুরগি ব্যবসায়ী অলিয়ার রহমানের খামার থেকে বৈদ্যুতিক ফাঁদে মারা যাওয়া একটি চিতাবাঘ উদ্ধার করা হয়। শনিবার (১৯ মার্চ) মারা যাওয়া বাঘটির ময়নাতদন্ত শেষ করেছে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ। তবে আরেকটি জীবিত বাঘ পাশে ভুট্টাক্ষেতে আছে খবরে উদ্ধারকাজ চালায় বনবিভাগের উদ্ধার টিম।
দুদিন ধরে জীবিত বাঘের সন্ধান না মিললেও কয়েক জায়গায় বাঘের পা-সদৃশ ছাপ দেখতে পায় উদ্ধার কাজে আসা দলটি। এতে চওড়া বড়গাছা ও গোড়গ্রাম ইউনিয়নের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বেড়ে যায়। এ অবস্থায় স্থানীয়ভাবে মসজিদে মসজিদে মাইকিং করে সবাইকে সর্তক করে দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা রথীন্দ্র কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘যেহেতু চিতাবাঘ একা চলাফেরা করে তাই আমরা ওই এলাকাসহ আশপাশের সব এলাকা থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছি। পায়ের ছাপও বিশ্লেষণ করে দেখেছি। তবে এখানে আর কোনো বাঘ নেই। সংগ্রহ করা তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে আমরা আরেকটি চিতাবাঘ থাকার কোনো তথ্য-উপাত্ত পাইনি। তাই আমরা সাময়িকভাবে অভিযান স্থগিত করেছি।’
তিনি বলেন, ‘এলাকাবাসীদের আমরা জানিয়েছি তারা যদি আরেকটি বাঘের অস্তিত্ব বা কোনো চিহ্ন দেখেন তাহলে আমাদের জানাতে। তাহলে আমরা আবার উদ্ধার অভিযান শুরু করবো।’
গুজব না ছড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে এ কর্মকর্তা আরও বলেন, এখানে যাতে কোনো খামারে বৈদ্যুতিক ফাঁদ বসানো না হয়। চিতাবাঘটি পথভ্রষ্ট হয়ে এখানে এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে সতর্কতার অংশ হিসেবে সবাইকে আপাতত দলবদ্ধভাবে চলাফেরার পরামর্শ দেন তিনি।
মৃত চিতাবাঘটির উচ্চতা আড়াই ফুট ও ওজন ৮৫ কেজি ছিল বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে রংপুর সামাজিক বনবিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা স্মৃতি সিংহ রায়, রাজশাহী বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন্যপ্রাণী পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির, ওয়াইল্ডলাইফ সুপার ভাইজার সারোয়ার হোসেন খান, গোড়গ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহবুব জর্জ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্কর্তা স্মৃতি সিংহ রায় জাগো নিউজকে বলেন, ‘গতকাল (শনিবার) আমরা যে পায়ের ছাপকে বাঘের পায়ের ছাপ মনে করেছিলাম আসলে সেটি বাঘের পায়ের ছাপ নয়। কুকুরের পায়ের ছাপ সেটি। আমরা অনেক জায়গা পরিদর্শন শেষে আপাতত নিশ্চিত হয়েছি সেখানে আর কোনো বাঘ নেই। তাই উদ্ধার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, জনগণের মনের ভয় দূর করার জন্য মসজিদ ও মাইকে প্রচারণা চালানোর জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের অনুরোধ করা হয়েছে।
এসআর/জিকেএস