করতোয়ায় বারুণীস্নান উৎসবে মানুষের ঢল
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তিন দিনব্যাপী বারুণী মহাস্নান উৎসব শুরু হয়েছে। প্রতি বছরের মতো এবারও চৈত্র মাসের মধুকৃষ্ণা ত্রিদশী তিথিতে উপজেলার বোয়ালমারী এলাকার করতোয়া নদীতে শুরু হয় বারুণী পূণ্যস্নান উৎসব। গত দুই বছর মহামারি করোনার কারণে উৎসব হয়নি। এবছর পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় উত্তরাঞ্চলের কয়েক লাখ হিন্দু সম্প্রদায়ের পুণ্যার্থী ও সাধু সন্ন্যাসী এসে করতোয়া নদীর উত্তরমুখী স্রোতে স্নান শুরু করেন।
সরেজমিন করতোয়া নদীর স্নান উৎসবে গিয়ে দেখা যায়, বুধবার (৩০ মার্চ) ভোরের আলো শুরুর সঙ্গে সঙ্গে নদীর উত্তরমুখী স্রোতে কয়েক হাজার হিন্দু ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষ নেমে গোসল শুরু করেন।

হিন্দু সম্প্রদায়ে কথিত আছে, এই স্থানে নদীর প্রবাহ সোজা উত্তরমুখী হওয়ায় এখানে স্নান করা পূণ্যের কাজ। দেহ-মন থেকে পাপ মোচনের আশায় অনেকে মাথার চুল বিসর্জন দেন, পূজা অর্চনা করেন। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা সংকল্প বাক্য স্নানমন্ত্র পাঠ করে হাতে বেল পাতা, ফুল, ধান, দূর্বাঘাস, হরিতকী, কাঁচা আম, ডাব, কলা ইত্যাদি অর্পণের মাধ্যমে স্নান সম্পন্ন করেন। শুক্রবার পর্যন্ত চলবে স্নান উৎসব।
করতোয়া নদীর এই স্থানে এসে নদীটি প্রায় ১ কিলোমিটার পর্যন্ত উত্তরদিকে প্রবাহিত হয়। এখানে চৈত্র মাসের মধুকৃষ্ণা ত্রিদশী তিথিতে তিনদিন ধরে পুণ্যস্নান চললেও স্নান উৎসবকে কেন্দ্র করে মেলা চলে সপ্তাহব্যাপী। স্থানীয় মন্দির কমিটি এই মেলার আয়োজন করে। জমজমাট এই মেলায় নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের বেচাকেনা হয়। এবারের মেলায় শিশু-কিশোরদের বিনোদনে নাগরদোলাসহ বিভিন্ন আয়োজন করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মেলার সার্বিক তত্ত্বাবধানসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি জোরদার করা হয়েছে।

উৎসবে যোগ দিতে আসা নীলফামারী জলঢাকার হরি হরণ বলেন, দুই বছর ধরে করোনার কারণে স্নান উৎসবে আসতে পারিনি। নদীর জলে স্নান করে মন্দিরে আরাধনা, পূজা অর্চনার মাধ্যমে পাপ মোচন করে বাড়ি ফিরবো।
দিনাজপুরের সুইহাড়ি এলাকার সজন মহন্ত বলেন, স্ত্রী-ছেলেসহ পরিবার নিয়ে স্নান করতে এসেছি। স্নানমন্ত্র পাঠ করে প্রয়াত বাবার আত্মার শান্তি জন্য ভগবানের কাছে আরাধনা করেছি। ভগবান যেন আমাদের মনোবাসনা পূরণ করেন।

বোদা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সোলায়মান আলী বলেন, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের এই স্নান উৎসব সফলভাবে শেষ করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত পুলিশের টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের পুণ্যার্থী ও সাধু সন্ন্যাসীরা স্নান করতে আসেন।
বারুণী মন্দির কমিটির সভাপতি পরেশ চন্দ্র বলেন, এখানে দূর-দূরান্ত থেকে আগত সাধু সাধকদের থাকা ও প্রসাদের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। করোনার কারণে গত দুই বছর ধরে মেলা হয়নি। এবার মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। কমিটির সফল ব্যবস্থাপনায় উৎসবও জমে উঠেছে।
সফিকুল আলম/এমআরআর/এএসএম