রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে ইব্রাহিম থাকেন নদীতে
খেয়াঘাটের মাঝি ইব্রাহিম খান
ঝালকাঠি সদর উপজেলার কেওড়া ইউনিয়নের শর্শিদ বাজারের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে গাবখান নদী। সেই নদীতে খেয়া পারে করে জীবিকা নির্বাহ করেন ইব্রাহিম খান। চৈত্রের কাঠ ফাটা রোদে, আষাঢ়ের বৃষ্টিতে কিংবা মাঘের হাড়কাঁপানো কনকনে শীতে নৌকা নিয়ে নদীতেই থাকতে হয় তাকে। এভাবেই বারো মাস যে কোনো ঋতুতে তিনি খেয়া পারাপার করে থাকেন।
সম্প্রতি নদী পারাপারের সময় কথা হয় ওই খেয়াঘাটের মাঝি ইব্রাহিম খানের সঙ্গে। আলাপচারিতায় তিনি বললেন, নৌকা ঘাটেই বাধা থাকে। বৈঠা থাকে আমার কাছে। যখনই যাত্রী এসে ডাক দেয় তখনই পারাপার করি। কোনো সময়-অসময় নেই, রোদ, বৃষ্টি, ঝড় যাই হোক যাত্রী পার করি। প্রতিজনে পাঁচ টাকা করে ভাড়া রাখি। এ ঘাটের কোনো ইজারা নেই। আমি অসহায়, তাই স্থানীয়রাই আমাকে এ ঘাটের দায়িত্ব দেন। ছয় বছর ধরে ঘাটে নদী পারাপারের কাজ করছি।
ইব্রাহিম খান বলেন, আমার সহায়-সম্বল কিছুই নেই। আমাকে ঘাটের দায়িত্ব দেওয়ার পরে নৌকার যোগান নিয়ে চিন্তায় পড়ি। পরে স্থানীয়দের থেকে টাকা ধার করে নৌকার ব্যবস্থা করে পারাপার শুরু করি। আগে যেভাবে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাতে হতো, এখন তার চেয়ে ভালো আছি। টেনেটুনে খেয়ে পড়ে বেঁচে আছি।
ব্যক্তি জীবনের কথা জানিয়ে ৪০ বছর বয়সী ইব্রাহিম বলেন, আগে দিনমজুরের কাজ করতাম। স্ত্রী, দুই মেয়ে ও ছেলেকে নিয়ে ছিল আমাদের সুখের সংসার। কিন্তু একটি দুর্ঘটনায় কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলি। এতে সংসারে অভাব-অনটন দেখা দেয়। ১৩ বছরের মেয়ে অভাবের তাড়নায় ঢাকায় গিয়ে এখন গার্মেন্টসে চাকরি করে। ছেলেটা আমার সাথে রাগ করে নিজে নিজে জাহাজে চাকরি নিয়েছে। সবার ছোট মেয়ে বাড়ির পাশের পাকমহর স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছে।
আতিকুর রহমান/এমআরআর/জেআইএম