ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

জনবল সংকটে স্থবির চাঁপাইনবাবগঞ্জের পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম

জেলা প্রতিনিধি | চাঁপাইনবাবগঞ্জ | প্রকাশিত: ০৫:১৬ পিএম, ০৫ অক্টোবর ২০২২

সাত বছর ধরে ৬৫টি শূন্য পদ নিয়ে চলছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়। এ শূন্য পদ পূরণের লক্ষ্যে গত বছর ডিসেম্বরে চাকরি প্রার্থীদের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। তবে ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও সেই মৌখিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ করতে পারেনি জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। ফলে কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জেলার ৩৪টি ইউনিয়নের সেবাগ্রহীতারা।

জেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষ বলছে, নিয়োগ প্রক্রিয়ার সভাপতি জেলা প্রশাসক। নিয়োগের সব প্রক্রিয়া শেষ করে ডিসি অফিসে জমা আছে। তিনি চাইলেই যে কোনো মুহূর্তে মৌখিক পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করে শূন্য পদগুলো পূরণ করতে পারবেন। অফিসিয়ালি সব প্রক্রিয়া শেষ করা আছে। এর আগে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর লিখিত পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। সেই রাতেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৩২৫ জনের মেধাতালিকা প্রকাশ করে জেলা পরিকল্পনা কার্যালয়।

জানা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ৩৪টি ইউনিয়নে প্রায় সাত বছর ধরে পরিবার পরিকল্পনার বিভিন্ন পদের কর্মীদের ৬৫টি পদ শূন্য রয়েছে। শুধু তাই নয়, পাঁচটি উপজেলায় ২০ পরিদর্শক থাকার কথা সেখানে মাত্র আছেন মাত্র তিনজন। এতে জেলার পরিবার পরিকল্পনা সেবা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. মাকিন জানান, সর্বশেষ ২০১৫ সালে জনবল নিয়োগ হয়েছে। এর পরে জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে আর কোনো জনবল নিয়োগ হয়নি। ১৯৯৬ সালের জরিপ অনুযায়ী, একজন কল্যাণ সহকারী ৯০০টি পরিবারের দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে বর্তমানে তা ১৫০০-১৭০০ পরিবারে চলে গেছে।

jagonews24

তিনি আরও জানান, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীনে কর্মরত পরিবার কল্যাণ সহকারীরা দায়িত্ব পালনে হিমশিম খাচ্ছেন। এর বাইরেও জনবলের ঘাটতি থাকায় তাদের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়, যা পালন করা অসম্ভব। এতে পদ শূন্য থাকা এলাকাগুলোর পরিবার কল্যাণ সেবা প্রায় পুরোটায় ব্যাহত হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পরিবার পরিকল্পনা সহকারী, পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক, পরিবার কল্যাণ সহকারী ও আয়া মোট চারটি পদে ৬৫ জনকে নিয়োগ দেওয়ার লক্ষ্যে ২০২১ সালের ২২ জুলাই থেকে ২৬ জুলাই আবেদন আহ্বান করা হয়। সেখানে পরিকল্পনা সহকারী ও পরিদর্শকের চারটি পদে শুধু পুরুষরা আবেদন করেন। কল্যাণ সহকারী ৫৯টি এবং আয়ার দুই পদে কেবল নারীরা আবেদন করতে পারেন।

গত ২৪ ডিসেম্বর ৬৫টি পদের বিপরীতে লিখিত পরীক্ষায় ৩২৫ জনকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত করে তালিকা প্রকাশ করা হয়। পরে ২৭ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজের সভাপতিত্বে মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও মৌখিক পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়নি।

তৎকালীন চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের দায়িত্বে আছেন। এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে মুঠোফোনে তিনি বলেন, কল্যাণ সেবা ব্যাহত হচ্ছে, এজন্যই মূলত ভাইভা ও লিখিত পরীক্ষার মার্কের ওপর ভিত্তি করে যোগ্যতার ভিত্তিতে খুব কম সময়ের মধ্যে চূড়ান্তভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হয়েছিল। এরপর বদলিজনিত কারণে সেটার অগ্রগতি সম্পর্কে আমার আর জানা নেই।

এই নিয়োগ পরীক্ষার সদস্য সচিব ও জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক আব্দুস সালাম বলেন, তৎকালীন জেলা প্রশাসক নিয়োগ প্রক্রিয়ার সবকিছু সম্পন্ন করে গেছেন। বাগেরহাটের এক কল্যাণ সহকারীর নিয়োগবিধি নিয়ে আদালতে একটি রিট ছিল। এজন্যই চূড়ান্ত ফল প্রকাশে বিলম্ব হয়। তবে প্রায় চার মাস আগেই রিটটি প্রত্যাহার করে নেন বাদী। এরপর অধিদপ্তর থেকে নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী এ বিষয়ে গতমাসেই একটি মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সবকিছু ডিসি অফিসে পাঠানো হয়েছে। এখন ডিসি চাইলেই যে কোনো সময় ফলাফল প্রকাশ করতে পারবেন। অফিসিয়ালি ফলাফল প্রকাশে আর কোনো বাধা নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খাঁন বলেন, পরীক্ষাটি আগের জেলা প্রশাসক দায়িত্বে থাকাকালে হয়েছিল। এ নিয়ে সম্ভবত আদালতে একটি রিট আবেদন করা ছিল। তাই ফলাফল ঘোষণা ঝুলে আছে। আদালতের নির্দেশনা মেনে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ফলাফল ঘোষণা করা হবে।

সোহান মাহমুদ/এমআরআর/জিকেএস