ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

নীলফামারীতে ৯শ` বছরের বৌদ্ধমন্দিরের সন্ধান

প্রকাশিত: ০৩:১০ এএম, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

নীলফামারী জলঢাকা উপজেলার খেরকাটি ধর্মপালে প্রায় ৯০০ বছরের পুরনো একটি বৌদ্ধমন্দিরের সন্ধান পাওয়া গেছে। প্রত্নতত্ত্ববিদদের ধারণা, ১২ শতকের দিকে পাল বংশীয় রাজা দ্বিতীয় ধর্মপাল এটি নির্মাণ করেছিলেন।
 
বগুড়ার মহাস্থানগড় জাদুঘরের তত্ত্বাবধায়ক মুজিবুর রহমান জানান, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। মন্দিরটির উপরের অংশ পুরোটাই ধ্বংস হয়ে গেছে। এর নিচের কিছু অংশ এখনো মাটির নিচে রয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত স্থানটিতে ভাঙা কিছু মাটির পাত্র, সাদা মার্বেলের ফলক এবং পোড়া মাটির বড় বড় খণ্ড দ্বারা নির্মিত একটি দেয়ালের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন মুজিবুর রহমান। দেয়ালটি ২৫ মিটার দীর্ঘ এবং ০.৮৫ মিটার (প্রায় ৩৩.৫ ইঞ্চি) পুরো। মন্দিরটির চারপাশ ঘিরে রয়েছে একটি ১.২ মিটার প্রশস্ত রাস্তা।

মুজিবুর রহমান জানান, ধর্মীয় প্রার্থনার অংশ হিসেবে রাস্তাটি প্রদক্ষিণ করা হতো। সরকারের বাৎসরিক খনন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ২০ জন সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে তিনি ধর্মপালগড়ে কাজ শুরু করেন।  

স্থানটির ঐতিহাসিক তাৎপর্যের কথা বিবেচনা করে ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ সরকার এখানকার ময়নামতির কোট, খেরকাঠি পীরের আস্তানা এবং আরও একটি স্থানসহ মোট ৩০ একর জায়গাকে সংরক্ষিত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান হিসেবে ঘোষণা করে।

মহাস্থানগড় জাদুঘরের সহকারী তত্ত্বাবধায়ক এসএম হাসনাত বিন ইসলাম জানান, ধর্মপালগড়ে প্রাপ্ত পোড়া মাটির খণ্ডগুলোর সঙ্গে মহাস্থানগড়ের পোড়া মাটির খণ্ডগুলোর সম্পূর্ণ মিল রয়েছে।

ঐতিহাসিক এ স্থানটি সম্পর্কে রংপুর জাদুঘরের তত্ত্বাবধায়ক এবং খননকারী দলের সদস্য আবু সায়েদ ইনাম তানভিরুল বলেন, ১৮০৭-১৮০৮ সালে ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ ড. ফ্রান্সিস ধর্মপালগড় ভ্রমণ করেছিলেন। এরপরের বছর সরকার এবং ইতিহাসবিদদের স্থানটি সম্পর্কে জানাতে তিনি একটি মানচিত্রও প্রস্তুত করেছিলেন। ১৮৭৬ সালে আরো এক ব্রিটিশ গবেষক মেজর রেনেল এখানে এসেছিলেন। তিনি এখানে একটি জরিপ চালান এবং নিদর্শনটির খনন কাজ বিষয়ে একটি বই লেখেন।

ঐতিহাসিক তথ্যমতে, পাল বংশীয় রাজা দ্বিতীয় ধর্মপাল ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের বাংলা অঞ্চলের দ্বিতীয় শাসক। তিনি ছিলেন পাল রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা গোপালের ছেলে। পৈত্রিক রাজত্বের সীমানা বহুলাংশে বৃদ্ধি করেছিলেন তিনি। পাশাপাশি পাল সাম্রাজ্যকে উত্তর ও পূর্ব ভারতের প্রধান রাজনৈতিক শক্তিতেও পরিণত করেন দ্বিতীয় ধর্মপাল।

বর্তমান জলঢাকা উপজেলার উত্তর-পশ্চিমে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে তিনি রাজধানী স্থাপন করেন। বহিঃশত্রুর হাত থেকে রক্ষার জন্য তার প্রাসাদের বাইরে মাটির উঁচু প্রাচীর দ্বারা তিনি তার রাজধানীকে বেষ্টিত করেন। সেই থেকে স্থানটির নাম হয় ধর্মপালগড়।

ধর্মপালের রাজত্বকাল ছিল আনুমানিক ৭৮১-৮২১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। তার রাজত্বকালে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে ত্রিপক্ষীয় যুদ্ধ। উত্তর ভারতে আধিপত্য বিস্তারের জন্য দাক্ষিণাত্যের রাষ্ট্রকূট এবং মালব ও রাজস্থানের গুর্জর-প্রতীহারদের সঙ্গে বাংলার পালগণ দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিলেন। স্থাপনাটি দেখার জন্য প্রতিদিন এখানে কয়েক হাজার লোক ভিড় জমাচ্ছেন। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে স্থানটিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে পুলিশের অতিরিক্ত সদস্য।
               
জাহেদুল ইসলাম/এসএস/পিআর