বিনা নোটিশে গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো বরিশাল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব
উচ্ছেদের আগাম কোনো নোটিশ না দিয়েই ঐতিহ্যবাহী বরিশাল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব রাতের আঁধারে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি)।
তবে উচ্ছেদের কারণ সম্পর্কে বিসিসি কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যাখ্যা না দিলেও উচ্ছেদ কার্যক্রমকে স্বাগত জানিয়েছেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান।
মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) গভীর রাতে হঠাৎ করেই মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব কার্যালয় ভেঙে মাটির সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হয়।
এদিকে, ৮০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি ভাঙতে ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সদস্যরা। এতে দেশের ক্রীড়াঙ্গন নেতিবাচক বার্তা পাবে বলে মত তাদের।
আরও পড়ুন: খাবার বিল ১০ টাকা কম দেওয়ায় বরিশালে সংঘর্ষ, ২ পুলিশ আহত
ক্লাব পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি শফিকুল আলম গুলজার বলেন, উচ্ছেদের নামে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ক্লাবটি নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে। ওখানে ক্লাবের মূল্যবান কাগজপত্র, আসবাবপত্র ছিল। সেগুলোও আমরা রক্ষা করতে পারিনি। এছাড়া আমাদের কোনো চিঠিও দেয়নি। সকালে উঠে শুনি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি।
ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আহসান কবির হাসান বলেন, তিন শতাধিক নিবন্ধিত সদস্যের ভোটে পরিচালনা কমিটি গঠন হওয়ার বিধান থাকলেও নানা জটিলতায় ২০১৪ সালের পর নতুন কমিটি গঠন হয়নি। তবে এর আগে এই ক্লাবের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন বিডি হাবিবুল্লাহ, লকিতুল্লাহ, সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাস, গোলাম মাওলা, বর্তমান বিসিবির পরিচালক আলমগীর হোসেন আলোর মতো আলোচিত ব্যক্তিরা।

তিনি বলেন, ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া ক্লাবটি ঢাকার মোহামেডান ক্লাব প্রতিষ্ঠার আগেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল। এটি একার কারও নয়, এই অঞ্চলের মানুষের সম্পদ। কিন্তু সেটি রাতের আঁধারে গুঁড়িয়ে দেওয়ার দরকার ছিল না। সিটি করপোরেশন চাইলে ক্লাবটি সুন্দর করে পরিচালনা করতে পারতো বা আমরা যারা ক্লাবের সদস্য তাদের নিয়ে বসে গঠনমূলক যেকোনো সিদ্ধান্ত নিলে আমরা দ্বিমত করতাম না। কিন্তু এভাবে একটি ইতিহাসকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া ঠিক কাজ হয়নি। এতে এই অঞ্চলের ক্রীড়াঙ্গন কোনো ভালো বার্তা পাবে না।
আরও পড়ুন: ১০ কেজি গাঁজা নিয়ে বরিশাল যাচ্ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যুবক
জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলের ক্রীড়াঙ্গনে একসময়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা মোহামেডান স্পোটিং ক্লাবটি ১৯৪২ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। বরিশাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের উত্তর পাশে জেলা পরিষদের ৩০ শতাংশ জমি বরাদ্দের অনুকূলে ক্লাব কার্যালয় ও কার্যক্রম পরিচালনা হয়ে আসছিল। মোহামেডান স্পোটিং ক্লাব এই অঞ্চলের ফুটবল, ক্রিকেটসহ জাতীয় ও স্থানীয় খেলায় বিশেষ অবদান রেখেছে। এই ক্লাব থেকে আলোচিত খেলোয়াড়রা গড়ে উঠেছেন।
ওই এলাকার ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাত ১১টা পর্যন্তও তারা ক্লাবটি দেখে গেছেন। সকালে এসে দোকান খুলতে গিয়ে দেখেন ক্লাবের চিহ্নও নেই।
উচ্ছেদ অভিযানের বিষয়ে জানতে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক আহম্মেদকে ফোন দিলে তিনি বলেন, বিষয়টি তাকে ভালোভাবে জেনে বক্তব্য দিতে হবে। পরে তার ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এবং জনসংযোগ কর্মকর্তা স্বপন দাসের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইলফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু মেয়র ও জনসংযোগ কর্মকর্তা কল রিসিভ না করায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: বছরজুড়ে আলোচনায় বরিশাল
তবে এ বিষয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এ কে এম জাহাঙ্গীর বলেন, ক্লাবটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে এটি খুব ভালো সংবাদ। ওখানে মদ-গাঁজা সেবন চলতো। সুতরাং এই উচ্ছেদে আমি সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে সাধুবাদ জানাই।
এমআরআর/এএসএম