ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

‘মারা যাওয়ার আগোত একটা ঘর চাই’

জেলা প্রতিনিধি | নীলফামারী | প্রকাশিত: ০৮:২৪ পিএম, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

‘রাস্তাতেই আন্ধি (রান্না করি), রাস্তাতে খাই; হোন্ডা, ভ্যান যায়। খাবারত ধুলা পড়ে, অতে খাই। কী করমো? রাস্তার ধারোত গাবুর বেটি (বড় মেয়ে) নিয়া থাকোং। মেম্বার- চেয়ারম্যান কাহো দেখে না। একটা কম্বলও না পাই, চাউলও না পাই। স্বামী তো থাকিও নাই, ভাত কাপড় দেয় না। কষ্ট করি থাকি। সরকারের কাছোত একটা ঘর চাই। শেষ বয়সে এনা শান্তিত থাকিমো বেটিক নিয়া। মরার আগোত একটা ঘর চাই।’

কথাগুলো বলছিলেন নীলফামারী সদর উপজেলার পলাশবাড়ী ইউনিয়নের কানাইকাটা কামারপাড়া গ্রামের পণ্ডিত রায়ের স্ত্রী ময়না রানী। প্রায় ১০ বছরের বেশি সময় ধরে রাস্তার ধারে খাসজমিতে ছোট একটি ঘরে মেয়ে পপি রানীকে (১২) নিয়ে বসবাস করছেন তিনি। তবে ঘরটি রাস্তার পাশে হলেও ঘর থেকে বের হলেই পা রাখতে হয় চলাচলের রাস্তায়ে। এমনকী রান্নার চুলাটিও রয়েছে রাস্তার ওপরে।

jagonews24

স্থানীয়রা জানান, স্বামীর দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন ময়না রানী। তবে মেয়ে সন্তান জন্মের পর আর কোনো খোঁজ নেন না স্বামী। এ অবস্থায় ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মেয়েকে বুকে আগলে অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোনো রকম জীবিকা নির্বাহ করেন পঞ্চাশোর্ধ এ নারী। একটি নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের জন্য আবেদন করেছিলেন। তবে চূড়ান্ত যাচাই-বাছাই শেষে সেই ঘর মেলেনি ময়নার কপালে। অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে পপির পড়াশোনা।

এ অবস্থায় মেয়েকে নিয়ে থাকার জন্য নিরাপদ একটি বাসস্থান প্রয়োজন অসহায় ভূমিহীন ময়না রানীর। অসহায় এ বৃদ্ধাকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

jagonews24

প্রতিবেশী বিউটি বেগম বলেন, ‘আমাদের সঙ্গেই কাজকাম করে ময়না। খুব কষ্ট করে থাকে এখানে। বৃষ্টি এলে রান্না করতে পারে না। আমরা চাই উনি একটা ঘর পাক। একটা আশ্রয় হোক।’

আরেক প্রতিবেশী মহসিন মিয়া বলেন, ‘খুব কষ্ট করে মহিলাটা এখানে থাকে। ধুলাবালি পড়ে রাস্তা দিয়ে গাড়ি গেলে। বৃষ্টি এলে না খেয়ে থাকে। সরকার তো সবাইকে ঘর দেয়, সাহায্য করে। ময়নাকে যদি একটা ঘর দিতো সরকার, তাহলে বাকি জীবনটা ময়না ভালোভাবে থাকতো।’

jagonews24

এ বিষয়ে পলাশবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইব্রাহিম তাকুলদার বলেন, ‘আমার কাছে ভূমিহীনের সার্টিফিকেট চাইছে, আমি দিয়েছি। আমি আর কিছু জানি না। ইউএনও আমাকে আর কোনো দায়িত্ব দেয়নি। যাচাই-বাছাই করেছে তহশিলদার। কেন ঘর পায়নি বা পাবে কি না জানি না।’

জানতে চাইলে নীলফামারী সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেসমিন নাহার জাগো নিউজকে বলেন, তিনি ভূমিহীন হলে আমাদের আরও আশ্রয়ণের ঘর আছে, তাকে দেওয়া হবে।

রাজু আহম্মেদ/এসআর/জিকেএস