পদ দিতে ফেনসিডিল কেনার টাকা চাইলেন ছাত্রলীগ নেতা
নাচোল উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ হাসান তারিফ
ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ দিতে ফেনসিডিল ও মিষ্টি কেনার টাকা চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ হাসান তারিফের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে পদ প্রত্যাশী আসিফ আলীর সঙ্গে করা ফোনালাপের একটি অডিও ফাঁস হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২২ ফেব্রুয়ারি নাচোল উপজেলার নেজামপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি অনুমোদন দেয় উপজেলা ছাত্রলীগ। এক বছরের জন্য সভাপতি হিসেবে মো. শামীম সারোয়ার, সহ-সভাপতি পদে মো. নাইম ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মো. সিফাত উদ্দীন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয় মো. আসিফ আলীকে। কমিটির অনুমোদন দেন নাচোল উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. আলসাবা ও সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ হাসান তারিফ।
কমিটি অনুমোদনের আগে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়া আসিফ আলীকে সাধারণ সম্পাদক করার কথা জানিয়ে ২০ হাজার টাকা ও মিষ্ট দাবি করেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ হাসান তারিফ।
ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডে ফিরোজ হাসানকে বলতে শোনা যায়, ‘নতুন কমিটিতে তোমাকে সাধারণ সম্পাদক করে দেবো। যদিও ওপর থেকে সিফাত উদ্দীনকে সাধারণ সম্পাদক করতে নানারকম চাপ আছে। তবুও আমি তোমাকেই করতে চাই। কিন্তু জেলা ছাত্রলীগের বড় ভাইদেরও একটা আশা থাকে, তাদের মিষ্টি ও ড্যাইল (ফেনসিডিল) খাওয়া বাবদ বেশি না ২০ হাজার টাকা দিও।’
পদপ্রার্থী আসিফ আলী টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ফিরোজ হাসান আরও বলেন, ‘কমিটিতে পদে আসতে গেলে এমন খরচ লাগে। শিবগঞ্জের দিকে খোঁজ নিয়ে দেখো। একেকটা ইউনিয়ন কমিটির জন্য লাখ লাখ টাকা লেনদেন হয়। ওদের ওখানে ইনকাম আছে, তাই লেনদেনও বেশি। আমাদের এখানেও ইনকাম শুরু হয়ে যাবে। এতদিন দলীয় এমপি ছিল না, তাও এখন হয়ে গেছে। আগামী ছয় বছরের জন্য দলীয় এমপি থাকবে ধরে নাও।’
রেকর্ডে আসিফ আলী বলেন, ‘আমি দলকে ভালোবাসি, সেই বিষয়টি বিবেচনা করে আমাকে পদ দেন। কিন্তু আমি এতো টাকা ম্যানেজ করতে পারবো না।’ এ সময় ফিরোজ হাসান তারিফ বলেন, ‘ভেবে দেখে সিদ্ধান্ত নাও। অনেকেই এ পদ নেওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নেজামপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নবগঠিত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসিফ আলী বলেন, ‘কমিটি ঘোষণার দুই দিন আগে আমাকে ২০ হাজার টাকার প্রস্তাব দেওয়া হয়। জেলা ছাত্রলীগের নেতাদের নামে মিষ্টি ও ফেনসিডিলের টাকা দাবি করেন ফিরোজ হাসান তারিফ। আমি টাকা দিতে না পারায় আরেকজনকে কমিটির সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে আর আমাকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে নাচোল উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ হাসান তারিফ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাকে ফাঁসানোর জন্য এডিটিং করে অডিও রেকর্ড ফাঁস করা হয়েছে। যেই ছাত্রলীগ কর্মী এই কাজটি করেছে, তাকেও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রত্যাশিত পদ না পেয়ে আবেগে অডিও রেকর্ড ছড়িয়েছে। সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আতিকুজ্জামান আশিক জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি আমাদেরও দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সংগঠনের শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে।’
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ডা. সাইফ জামান আনন্দ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের কাছে একটি অডিও রেকর্ড এসেছে, সেখানে নেজামপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ দেওয়ার কথা বলে ২০ হাজার টাকা দাবি করেন নাচোল উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ হাসান তারিফ। এ সময় তিনি বিভিন্ন অনৈতিক ও দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি নানরকম কথা বলেছেন। তাই তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।’
মো. সোহান মাহমুদ/এসজে/এএসএম