হাত ঘুরতেই কাঁচামরিচ-লেবু-শসার দাম দ্বিগুণ

রমজানকে কেন্দ্র করে দুদিনের ব্যবধানে বরিশালে বেড়েছে বেগুন, কাঁচামরিচ, শসা ও লেবুর দাম। পাশাপাশি দাম বেড়েছে সব ধরনের দেশীয় মাছের। এ অবস্থায় বাজারে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। শুধু তাই নয়, পাইকারির সঙ্গে খুচরা বাজারে দামের রয়েছে বিশাল তফাৎ। কৃষকরা যে দামে পাইকারি বাজারে পণ্য দিয়ে যান, তার থেকে দ্বিগুণ দামে খুচরা বাজারে বিক্রি হয়। অর্থাৎ, মাত্র দুই হাত ঘুরতেই সবজির দাম বেড়ে যায় দ্বিগুণ।
বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) সকালে নগরীর বাংলাবাজার ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র। এদিন খুচরা বাজারে বেগুন ১০০ টাকা, কাঁচামরিচ ১৮০-২০০ টাকা, শসা ৮০ টাকা, লেবু প্রতি হালি ২৫ টাকা করে বিক্রি হতে দেখা যায়। এছাড়া অন্যান্য সবজির দাম আগের তুলনায় বেশি।
আরও পড়ুন: দাম বেশি, চাহিদা মতো সবজি কিনছেন না ক্রেতারা
অথচ নগরীর একমাত্র কাঁচামালের পাইকারি বাজার বহুমুখী সিটি মার্কেটে গিয়ে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। এখানে খুচরা বাজারের সঙ্গে দামের বিস্তর ফারাক। এই বাজারে কৃষকরা মরিচ বিক্রি করছেন ৭০ টাকা কেজি দরে। আর বেগুনের কেজি ৪০ টাকা। এছাড়া শসার কেজি ৪৫ টাকা।
বাজার করতে আসা সাহাদাত হোসেন নামে এক ক্রেতা জাগো নিউজকে বলেন, গত দুদিন আগেও বেগুন ২০ টাকা কেজি দরে কিনেছি। আজ সকালে বাজারে এসে দেখি সেই বেগুন ১০০ টাকা কেজি। কাঁচামরিচ ২-৩ দিন আগেও ৬০ টাকা কেজিতে নিয়েছি। এখন রমজানকে কেন্দ্র করে ১২০ টাকা হয়েছে। এছাড়া শসার দামও বেড়েছে দ্বিগুণ।
সাব্বির নামে আরেক ক্রেতা বলেন, ভেবেছিলাম রমজানের বাজার আগের দিন করবো। সেই অনুযায়ী বাজারে এসেছি। কিন্তু এসে দেখি কাঁচামরিচ ১৮০-২০০ টাকা করে কেজি বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য সবজির দামও চড়া। এভাবে দিন দিন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে বাজার।
আরও পড়ুন: ঢাকায় সবজির দাম পাইকারির চেয়ে খুচরায় দ্বিগুণ
হতাশা প্রকাশ করে চাকরিজীবী মোস্তফা হাওলাদার বলেন, রমজান উপলক্ষে বিভিন্ন দেশে সব জিনিসপত্রের ওপর মূল্য ছাড় দেওয়া হয়। আর বাংলাদেশে হয় ঠিক তার উল্টো। রমজান মাস এলেই অদৃশ্য কারণে সব কিছুর দাম হয়ে যায় দ্বিগুণ। গত ২-৩ দিন আগে বাজারে বেগুন, শসা, কাঁচামরিচ সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যেই ছিল। অথচ এখন মাছ-মাংস, সবজি সব নাগালের বাইরে চলে গেছে।
কথা হয় কৃষক মো. ইসমাইল মিজির সঙ্গে। তিনি ভোলার সদর উপজেলার কাচিয়া মাঝের চর থেকে কাঁচামরিচ নিয়ে এসেছেন। জাগো নিউজকে বলেন, গত দুদিন আগে ৪৫-৫০ টাকা কেজি দরে কাঁচামরিচ দিয়েছি। কিন্তু বাজারে মরিচের চাহিদা থাকায় এখন সেই মরিচ আড়তে ৭০ টাকা দরে বিক্রি করছি। একইভাবে বেগুন গত সপ্তাহে ১৫-১৮ টাকা বিক্রি হলেও রমজানে চাহিদা বেশি থাকায় ৪০ টাকা করে পাইকারি দিচ্ছি।
ভোলা থেকে ট্রলারভর্তি বেগুন নিয়ে আসা কৃষক মো. হারুন বলেন, আজ প্রকারভেদে বেগুন ৪০-৫০ টাকা কেজি ধরে বিক্রি করেছি। আবার কিছু বেগুন বিক্রি করেছি ২০ টাকায়।
আরও পড়ুন: রমজানে বেশি দাম নিলে দোকান বন্ধের হুঁশিয়ারি মেয়র আতিকের
গত কয়েকদিন দিন আগে বেগুন ২০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ৪০-৫০ টাকা কেন বিক্রি করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন যেসব বেগুন বাজারজাত করেছি সেগুলোর মান ভালো, তাই দাম আগের চেয়ে বেশি।
জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা থেকে শসা নিয়ে আসা কৃষক মো. আব্দুল মোতালেব বলেন, বর্তমানে ৪০ টাকা থেকে ৪৫ টাকা করে কেজি দিয়েছি। এর আগে গত সপ্তাহে ১০-১২ টাকা করে বিক্রি করেছি। মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে এ কৃষক বলেন, চাহিদা বেশি থাকায় মালের (শসা) দাম বেশি পড়ছে।
বহুমুখী সিটি মার্কেটের ব্যবসায়ী দুলাল বাণিজ্যালয়ের মালিক আমিন শুভ জাগো নিউজকে জানান, গত কয়েকদিন ধরেই বেগুন ২০-২৫ টাকা, শসা ১২-১৪ টাকা, কাঁচামরিচ ৫০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। এখন রমজানে চাহিদা বেশি থাকায় দাম বেড়েছে।
বেড়েছে মাছের দামও
নগরীর বাংলাবাজার ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন ধরনের দেশীয় মাছের দাম বেড়েছে। এরমধ্যে রুই-কাতলা আগে ৩৫০-৪০০ টাকা দরে বিক্রি হতো, এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকায়। তেলাপিয়া মাছ আগে বিক্রি হয়েছে ৮০-১৫০ টাকা পর্যন্ত, সেই তেলাপিয়া এখন বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৮০ টাকায়। ছোট চিংড়ি ৪৫০-৬০০ ও বড় চিংড়ি ৬৫০-৮৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া পোয়া মাছ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০-৪০০ টাকায়। কৈ মাছ ২২০-২৮০ ও শিং মাছ ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাপদা ৩০০-৪০০ টাকা, পাঙাশ যেটা আগে ১২০-১৫০ টাকা ছিল তা এখন ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ইলিশ ৬০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শাওন খান/জেডএইচ/জেআইএম