ক্ষয়ে কঙ্কালসার মানসিংহের বিজয় তোরণ
বিলীনের পথে মোগল সেনাপতি মানসিংহের বিজয় তোরণ। ক্ষয়ে কঙ্কালসার হয়ে গেছে ঐতিহাসিক এ তোরণটি। একই অবস্থা তোরণের পাশের ১০ ফুট উচ্চতার আরও তিনটি পরিত্যক্ত দালান। আগাছা দখল করে নিয়েছে দালানগুলো।
শরীয়তপুর শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে মানসিংহের বিজয় তোরণের অবস্থান। এটি নড়িয়া উপজেলার ফতেজঙ্গপুর এলাকায় অবস্থিত। দীর্ঘদিন সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এটি এখন ধ্বংসপ্রায়। এছাড়া দখল হয়ে তোরণের জমি।
স্থানীয়রা জানায়, ১৬০০ সালের দিকে এ অঞ্চলের নাম ছিল শ্রীনগর। বাংলার বারো ভূঁইয়াদের অন্যতম রাজা কেদারনাথ দেবরায় এ অঞ্চলে শাসন করতেন। তার নামানুসারে রাজধানীর নাম রাখা হয়েছিল কেদারপুর। ১৬০৮ সাল থেকে ১৬১৩ সালের মধ্যবর্তী সময়ে মোগল সাম্রাজ্যের প্রসার ও বাংলার বারো ভূঁইয়াদের পতন ঘটাতে এ অঞ্চলে আসেন মোগল সেনাপতি মানসিংহ। মানসিংহ যখন বিক্রমপুর আক্রমণ করেন তখন তার সহযোগী যোদ্ধাগণ এখানকার রাজা কেদারনাথ দেবরায়ের হাতে পরাজিত হয়ে শ্রীনগরে আশ্রয় নেন। পরে মানসিংহ তাদের উদ্ধারের জন্য তার বাহিনী নিয়ে শ্রীনগরে আসেন। এসময় কেদারপুরের অদূরে শ্রীনগরে রাজা কেদারনাথ দেবরায় ও মানসিংহের মধ্যে যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে কেদারনাথ দেবরায় পরাজিত হন। তার পরাজয়ের মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলে বারো ভূঁইয়াদের শাসনের অবসান ঘটে। গোড়াপত্তন হয় মোগল সাম্রাজ্যের। সেনাপতি মানসিংহ এ জয়ের চিহ্ন স্বরূপ জায়গাটিতে নির্মাণ করেন তোরণসহ একটি দুর্গ। শ্রীনগরের নাম পরিবর্তন করে রাখেন ফতেজঙ্গপুর। যা এখন ফতেজঙ্গপুর নামেই পরিচিত।

আরও পড়ুন: ঘুরে আসুন ঐতিহাসিক নিদর্শন লালবাগ কেল্লায়
সরেজমিনে দেখা যায়, তোরণ এলাকার জায়গাটি বেদখল হয়ে গেছেন। জায়গাটির ওপর বসবাস করছেন জামিলা বেগম নামের এক বৃদ্ধে। তার সঙ্গে ছেলে মন্টু ঢালি ও বাবুল ঢালিও সেখানে থাকেন। কোনোমতে টিকে থাকা তোরণটির অবস্থাও বেহাল। ভেতরে রাখা হয়েছে কয়েকটি শুকনো লাকড়ি ও পাতার বস্তা। একটি ভবনের দেওয়াল ঘেঁষে তৈরি করা হয়েছে গোয়ালঘর ও রান্নাঘর। ভবন তিনটির দেওয়ালের অধিকাংশ ইট খসে পড়ে গেছে।
জায়গাটি নিজেদের ক্রয় করা সম্পত্তি দাবি করে জামিলা বেগম বলেন, ১২০ শতাংশ জমি জ্যৌতি শ্যাম নামের একজনের কাছ থেকে কিনেছেন আমার দাদা সোনাবালী ফকির। আমার বাবা ও পরে আমি জায়গাটিতে বসবাস করি। বাপ-দাদার কাছে শুনছিলাম এ জায়গায় নাকি ঈশা খাঁর লোকজনের যুদ্ধ হয়েছিল। মাঝেমধ্যে এ তোরণ দেখতে ভৈরব, চিটাগং ও অন্যান্য জায়গা থেকে অনেকে আসেন। তারা ছবি তুইল্লা নেয়। জায়গাটিতে নাকি সরকার জাদুঘর বানাইবো। সরকার যদি জায়গাটা নিয়ে নেয় তাইলে আমাদের কিছু করার নাই। তবে আমাদের কাগজে যেটুকু জায়গা আছে সেই পরিমাণ জায়গা অন্য কোথাও ব্যবস্থা করে দিলে হবে।
আরও পড়ুন: তাজিয়া মিছিলের জন্য প্রস্তুত হোসনি দালান

সিদ্দিক ফকির নামের স্থানীয় একজন বলেন, এটা ঐতিহাসিক স্থান। এখানে মুঘল সেনাপতি মানসিংহ আর কেদার রায় রাজার যুদ্ধ হয়েছিল। অন্তত ১৬০ শতাংশ জায়গা এ দুর্গের। জায়গাটা সরকারি তারপরও সব দখল হয়ে গেছে। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই দখলমুক্ত করে সংরক্ষণ করা হোক।
তাহের শেখ নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, কয়েকবছর আগে দুর্গটার অবস্থা আরও ভালো ছিল। দালান তিনটি স্পষ্ট ছিল। এখনতো একদম খারাপ অবস্থা। কোনো কিছুই তেমন আর নাই। সরকার থেকে সংস্কার করার উদ্যোগ নেওয়া হলে প্রাচীন মোগল সাম্রাজ্যের স্মৃতি চিহ্নটুকু টিকিয়ে রাখা যেতো।
এ বিষয়ে নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শংকর চন্দ্র বৈদ্য জাগো নিউজকে বলেন, মোগল সাম্রাজ্যের স্মৃতিচিহ্ন মানসিংহের বিজয় তোরণটি সংরক্ষণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ভবনগুলো যতোটুকু সংস্কার করা সম্ভব শিগগির সেটি করা হবে।
আরএইচ/এএসএম