সড়কে এসআই নিহত
‘বিয়ের একদিন পর স্বামী হারালাম, আমার পোড়া কপাল’
‘চাকরি জীবনে অনেক বড় পুলিশ কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন ছিল জহুরুলের। দুর্ঘটনায় সব স্বপ্নের যবনিকা ঘটলো। আমার পরিবার তার উপার্জনেই চলত। ছেলের আর বড় কর্মকর্তা হওয়া হলো না।’ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এভাবেই বিলাপ করছিলেন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত পুলিশ সদস্যের বাবা ষাটোর্ধ্ব আফফার উদ্দিন।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাজশাহী আদালতে মামলার সাক্ষী দিয়ে বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফেরার পথে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার কলেজবাজার তেলের পাম্পের সামনে বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে দুজনই নিহত হন।
নিহত দুই বন্ধুর মধ্যে জহুরুল ইসলাম পুলিশের বিশেষ শাখা (ডিএসবি) হিসেবে নীলফামারীর জলঢাকা থানায় আর সুজন হোসেন (৪০) ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টিটিভ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। জহুরুল দিনাজপুর ফুলবাড়ী উপজেলার লক্ষীপুর এলাকার বাসিন্দা আর সুজন একই উপজেলার খয়েরবাড়ি ইউনিয়নের হবিবুর রহমানের ছেলে।
আরও পড়ুন: বরযাত্রীর বাসের সঙ্গে বাইকের সংঘর্ষে এসআইসহ নিহত ২
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই বোন ও এক ভাইয়ে মধ্যে জহুরুল ইসলাম সবার বড়। সোমবার তিনি বিয়ে করেছেন। বিয়ের পরদিন মঙ্গলবার সকালে তার বন্ধু সুজনকে নিয়ে মোটরসাইকেলে রাজশাহী আদালতে মামলার সাক্ষী দিতে যান। আদালতের কাজ শেষে বিকেলে দুই বন্ধ মোটরসাইকেলে আবারো বাড়ি ফিরছিলেন। পথে বিরামপুর কলেজ বাজারে সড়ক দুর্ঘটনায় দুজনই প্রাণ হারান।
দুর্ঘটনায় আটক বাসের এক যাত্রী আব্বাস আলী বলেন, আমরা সন্ধ্যার দিকে উমর পরিবহনের একটি বাসে নীলফামারী থেকে বরযাত্রী নিয়ে রাজশাহী যাচ্ছিলাম। কদিন আগে আমার ভাতিজার রাজশাহীতে বিয়ে হয়। বর-কনে সেখানে অবস্থান করায় আনতে যাচ্ছিলাম। পথেই এ দুর্ঘটনা। আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেলো।
বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক সামসুজ্জামান বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। মাথায় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণেই তাদের মৃত্যু হয়েছে।
নিহত জহুরুলের স্ত্রী রুমা আকতার বলেন, একদিন আগে আমার বিয়ে হয়। পরদিন সকালে বন্ধুর মোটরসাইকেলে করে রাজশাহী আদালতে গিয়েছিলেন তিনি। আর রাতেই লাশ হয়ে বাড়িতে ফিরলেন। আমার জীবনের সব শখ-আল্লাদ শেষ হয়ে গেলো। বিয়ের একদিন পর আমি স্বামী হারালাম। আমার পোড়া কপাল।
বিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুব্রত কুমার সরকার বলেন, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার কলেজ বাজার এলাকায় বরযাত্রীবাহী একটি বাস ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুজন নিহত হন। এদের মধ্যে একজন পুলিশের বিশেষ শাখায় কর্মরত এসআই (ডিএসবি) এবং অন্যজন ওষুধ কোম্পানির রিপেজেন্টিভ। ঘাতক বাসটিকে আটক করা হয়েছে। পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় দুজনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
মো.মাহাবুর রহমান/এসজে/জেআইএম