ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

আদালতের সামনে থেকে তুলে নিয়ে আসামিকে পিটিয়ে হত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক | বগুড়া | প্রকাশিত: ০৮:২১ পিএম, ১১ অক্টোবর ২০২৩

হত্যাচেষ্টা মামলায় আত্মসমর্পণ করতে আসা রোহান চৌধুরি (২২) নামে এক আসামিকে দিনে-দুপুরে অপহরণের পর হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে।

বুধবার (১১ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে বগুড়ার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে থেকে এই অপহরণের ঘটনা ঘটে। পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের জয়বাংলা হাট থেকে রোহানের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এই সময় আদালতে আত্মসমর্পণ করতে যাওয়া আরেক আসামি সেলিমকে (২০) আহত অবস্থায় উদ্ধার বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

নিহত রোহান বগুড়া সদরের মানিকচক গ্রামের কামাল উদ্দিনের ছেলে। তার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য বগুড়া শজিমেক হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।

এর আগে গত ২০ সেপ্টেম্বর রাতে বগুড়া সদর উপজেলার সাচ্চুর মোড়ে রাজাপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য গিয়াস উদ্দিনের ছেলে সেলিম মিঞার (২৮) হাত-পায়ের রগ কেটে হত্যাচেষ্টা করা হয়। নিহত রোহান ও আহত সেলিম ওই মামলার অন্যতম আসামি।

গ্রামবাসীরা জানান, বালু ব্যবসাকে কেন্দ্র করে ইউপি সদস্য গিয়াসের সঙ্গে মেহেদী হাসান শাওন নামের এক যুবকের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। গিয়াসের ছেলে সেলিম বিজিবি সৈনিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। প্রায় এক বছর আগে দিনাজপুরে ফেনসিডিলসহ গ্রেফতার হওয়ার পর তিনি চাকরিচ্যুত হয়ে জেলহাজতে ছিলেন। জামিনে বেরিয়ে গ্রামে এসে সেলিম বাবার সঙ্গে এলাকার আধিপত্য বিস্তারের লড়াই ও বালু ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন।

গত সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে জয়বাংলা হাটে একটি নির্মাণাধীন মার্কেটে বালু সরবারহের জেরে সেলিম নিহত রোহানসহ শাওনের অনুসারী কয়েকজন যুবককে মারধর করেন। একইসঙ্গে তিনি শাওনকে হত্যার হুমকি দেন। পরে সেলিমকে একা পেয়ে ২০ সেপ্টেম্বর রাতে শাওনের নেতৃত্বে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার হাত-পায়ের রগ কেটে হত্যাচেষ্টা করা হয়। এই ঘটনায় গিয়াস উদ্দিন বাদী হয়ে বগুড়া সদর থানায় শাওন, রোহান ও আহত সেলিমসহ ১৩ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। বগুড়া র্যাব-১২ মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) ভোরে শাওনকে গ্রেফতার করে। ওই মামলায় আজ সকাল ১০টার দিকে রোহান ও আহত সেলিম বগুড়া চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করতে যান।

আহত সেলিম বলেন, শাওনকে গ্রেফতারের পর রোহান ও আমি আদালতে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নিই। আজ সকালে ইজিবাইক থেকে আদালতের সামনে নামার পরই গিয়াস উদ্দিন ও তার বড় ছেলে মিঠুনসহ দুইজন দুর্বৃত্ত আমাদের ঘিরে ফেলেন। তারা জোরপূর্বক আমাদের একটি সিএনজিতে উঠিয়ে অপহরণ করে রাজাপুর ইউনিয়নে নিয়ে যান। সেখানে মন্ডলধরন গ্রামের পূর্বপাড়া কাজলের বাগানে নিয়ে দড়ি দিয়ে রোহান ও আমার হাত বেঁধে ফেলা হয়। এরপর গিয়াসসহ তার দুই ছেলে মিঠুন ও সাগর হাতুড়ি দিয়ে আমাদের এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকেন। তাদের সঙ্গে থাকা ৫ থেকে ৭ জন দুর্বৃত্ত লাঠিসোটা, রড ও এসএস পাইপ দিয়ে প্রায় একঘণ্টা আমাদের বেধড়ক মারধর করেন। একপর্যায়ে রোহান জ্ঞান হারিয়ে ফেললে আমাদের আবারও সিএনজিতে উঠিয়ে জয়বাংলা হাটে ফেলে রেখে যায়। পরে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দিলে রোহানকে মৃত ও আমাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে।

নিহত রোহানের চাচা ফারুক চৌধুরী বলেন, রোহান অপরাধ করলে আদালত বিচার করবে। দিনদুপুরে গিয়াস তাকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে হত্যা করলো। তার অত্যাচারে কেউ মুখ খুলতে পারি না। শাওন আর গিয়াসের দ্বন্দ্বের বলি আমার ভাতিজা।

বগুড়া সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) শাহীনুজ্জামন বলেন, রোহান ও সেলিম গিয়াসের ছেলের হত্যাচেষ্টা মামালার আসামি। তাদের শহরে কোথাও থেকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। জড়িতদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আছে।

এফএ/জেআইএম