ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

সিরাজগঞ্জ

গ্রেফতার আতঙ্কে ঘরছাড়া বিএনপির নেতাকর্মীরা, ধানক্ষেতে রাত যাপন

জেলা প্রতিনিধি | সিরাজগঞ্জ | প্রকাশিত: ০৯:০৩ পিএম, ১৪ নভেম্বর ২০২৩

সরকার পতনের একদফা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সিরাজগঞ্জে বিএনপির নেতাকর্মী ও তাদের পরিবারের মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে। গ্রেফতার ও মামলায় জড়িয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের অনেকেই গ্রেফতার হয়ে এখন কারাগারে আছেন। আবার যারা বাইরে আছেন, তারাও বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। নেতাদের কেউ কেউ রাত হলেই আশ্রয় নিচ্ছেন ধানক্ষেতে। বন্ধ রাখছেন মোবাইল ফোন। কর্মীদের অবস্থাও একই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশ নিহত হওয়া ও অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে জেলায় মামলা ও ধরপাকড়ে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন নেতাকর্মীরা। ফলে অবরোধ কর্মসূচিতে তাদের দেখা মিলছে না। একাধিক মামলা ও গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে জেলা বিএনপির ১৮টি ইউনিটের প্রায় দেড় হাজারের অধিক নেতা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আবার অনেকেই লুকোচুরি খেলার মতো দলীয় কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন।

২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ ঘিরে দলের ২৫৪ জন নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে বলে দাবি জেলা বিএনপির। নেতাকর্মীরা এ গ্রেফতার আতঙ্কে গা-ঢাকা দিয়েছেন। আর ঝামেলা পোহাচ্ছে তাদের পরিবার-পরিজন। বেশি বেকায়দায় আছেন নিম্ন আয়ের নেতাকর্মীরা। পুলিশের ভয়ে বিএনপির কোনো নেতাকর্মী কাজও করতে পারছেন না। ঘরেও থাকতে পারছেন না বলে তাদের পরিবারের লোকজনের অভিযোগ। ফলে মানবেতর জীবনযাপন করে চলছে তাদের পরিবারকে।

অভিযোগ আছে, বিএনপির প্রথম সারির কিছু নেতা অদৃশ্য ইশারায় মামলা থেকে রেহায় পেলেও দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির কয়েকশ নেতাকর্মী মামলা ও গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

পালিয়ে থাকা জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল হাসান রঞ্জন জাগো নিউজকে বলেন, থানায় মামলার আসামি করা ও অব্যাহত ধরপাকড়ে পুলিশকে সহযোগিতা করছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। নাহলে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের পুলিশ চেনার কথা না।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু অভিযোগ করে বলেন, ২৮ অক্টোবর থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত জেলা বিএনপির ১৮টি ইউনিটের ২৫৪ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ ও আওয়ামী লীগের করা প্রায় ৩৩০টি মামলা আছে তাদের বিরুদ্ধে। এ জন্য কিছুটা কৌশল অবলম্বন করে আমরা মাঠে আছি।

দুঃখ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, আমরা বিএনপির পদে আছি, আমাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে। এ জন্য গ্রেফতার হবো এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমার বড় ভাই ডা. শামসুল হুদা কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। তার বয়স ষাটোর্ধ্ব, সে অত্যন্ত অসুস্থ। তবুও ২৮ তারিখের রাতে তাকে অসুস্থ অবস্থায় নিজ বাড়ি থেকে আটক করে একটি রাজনৈতিক মিথ্যা মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ওই রাতেই পৌর শহরের ১০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি সাধারণ সম্পাদক হিল্টনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সে হৃদরোগে আক্রান্ত বলে তার দুই ভাই সদর থানায় ওষুধ দিতে গেলে তাদেরও আটক করে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। শহর ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুমনকে না পেয়ে তার ছোট ভাইকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আবার কারো বাবা বিএনপি করে তাকে না পেয়ে তার সন্তানকে গ্রেফতার করা হচ্ছে।

অপরদিকে থানায় মামলার আসামি করা ও অব্যাহত ধরপাকড়ে পুলিশকে সহযোগিতা করার কথা অস্বীকার করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ তালুকদার জাগো নিউজকে বলেন, আওয়ামী লীগ কোনো প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না। তবে বিএনপির যেকোনো ধরনের নৈরাজ্যের প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ সর্বদা সক্রিয়।

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) সামিউল আলম জাগো নিউজকে বলেন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রুখতে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। এতে কে কোন দলের নেতাকর্মী সে হিসেবে কাউকে গ্রেফতার করার সুযোগ নেই। যাদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট মামলা আছে পুলিশ তাদেরই গ্রেফতার করেছে। আর আসামিরা এ গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে বেড়াবে এটাই স্বাভাবিক।

এম এ মালেক/এসজে/এএসএম