ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

বাণিজ্য সচিব

সরকারি খাতে খাদ্যশস্য কেনার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র প্রাধান্য পাবে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৩:৫৬ পিএম, ০৮ জুলাই ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কমানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিদ্যমান বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে সরকারি খাতে ফুড গ্রেইন (খাদ্যশস্য) কেনার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রাধান্য দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান। সেই সঙ্গে বোয়িং বিমান এবং মিলিটারি ইকুইপমেন্ট কেনার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নতুন করে একটি চিঠি দিয়েছেন। যেখানে বাংলাদেশের ওপর ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু সেটির কার্যকারিতা দেওয়া হয়েছে ১ আগস্ট থেকে। ওই চিঠিতে যা বলা হয়েছে তাই। এর সঙ্গে তারা আগের যে ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্টের খসড়া পাঠিয়েছিল তার ওপর আমাদের রেসপন্স আমরা পাঠিয়েছি এবং সেটার ওপর আমাদের কয়েক দফা মিটিং হয়েছে।

বাণিজ্য সচিব জানান, ভার্চুয়ালি আমি যুক্ত ছিলাম সবগুলো মিটিংয়ে এবং আমাদের উপদেষ্টা মহোদয় ওখানে আছেন। আমাদের সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার মহোদয় ছিলেন মিটিংগুলোতে। এরপর আজ আমরা যে ডকুমেন্ট পেলাম, তা আগেই চেয়েছিলাম। আজ দেওয়া হয়েছে। এটার ওপর মূলত আলোচনা হবে আগামী ১০ এবং ১১ তারিখে। সেই সভায় যোগ দিতেই মূলত আমি আজ যাচ্ছি।

আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দেখুন, তারা তো একটি চিঠি দিয়ে আরোপ করলো। আরোপ করার পরই তারা তাদের প্রস্তাব পাঠালো। নতুন করে আপনার আগের এগ্রিমেন্টের একটা এক্সটেনশন বলতে পারেন। সেটার ওপরে যেহেতু আলোচনা হবে, আলোচনার দরজা যেহেতু খোলা আছে, কাজেই কিছু একটা আউটকাম তো আমরা আশা করি সব সময়ের জন্যই।

আপনাদের যুক্তিগুলো কী কী থাকবে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মোটা দাগে আমাদের যুক্তিগুলো থাকবে প্রথমত শুল্ক কমানো এবং দ্বিতীয়ত হলো যে, আমাদের ট্রেড রিলেটেড আরও যে ইস্যুগুলো আছে সেগুলোর কারণে আমরা যাতে অসুবিধাজনক পরিস্থিতিতে না পড়ি। মোদ্দাকথা হলো, বাংলাদেশের জন্য আমাদের প্রধান বিবেচ্য বাণিজ্য স্বার্থ সংরক্ষণ করা এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের যে এক্সিস্টিং বাণিজ্য আছে সেই বাণিজ্য রক্ষা করা। আমাদের কাছে তারা কিছু চেয়েছে, সেটা হলো শুল্ক কমানো। পর্যায়ক্রমে শুল্ক, ভ্যাট, সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি, রেগুলেটরি ডিউটি এগুলো যেন আমরা কমাই। সে ধরনের প্রস্তাব তারা করেছে। আমরা সেটা এনবিআরের সঙ্গে কনসালটেশন করার পরে, সরকারের অন্যান্য অংশের সঙ্গে কনসাল্ট করে সে ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেবো।

ট্রাম্পের দেওয়া চিঠির ব্যাপারে তিনি বলেন, এই চিঠিতে যা যা উল্লেখ করেছে, মানে আজ যে ডকুমেন্ট পেয়েছি তাতে যা ছাড় চেয়েছে তারা, সেগুলো অবশ্য আগেই প্রমিস করেছি এবং সেগুলোর ওপর এমনিতেও ডিউটি খুব কম। যেমন হুইট, সয়াবিন, এয়ারক্রাফট, অন্যান্য মেশিনারি এগুলোর ওপর এমনিতেই ডিউটি রেট খুব কম। সেক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের ইউএস ট্রেন্ডটা বাংলাদেশে বাড়ানো দরকার। সেটা না বাড়ালে তো আসলে তারা আমাদের কোনো ধরনের ছাড় দেবে না। কাজেই আলাপ-আলোচনা করে কিছু ছাড় তো দিতে সম্মত হতেই হবে।

কীভাবে কোন কোন ক্ষেত্রে ট্রেড বাড়ানো হবে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ট্রেড বাড়ানোর জন্য তারা যদি কিছু শুল্ক ছাড় দেয়, তাহলে স্বাভাবিকভাবে ট্রেড যেটা ব্যবসায়ীরা করেন ওটা তারা সিদ্ধান্ত দেবেন। কিন্তু সরকারি ট্রেড বাড়ানোর জন্য আমরা যেগুলো ফ্যাসিলিটিজ করব। যেমন আপনারা জানেন যে, আমাদের বিমান বহরের প্রায় সব এয়ারক্রাফট বোয়িং। আমাদের বিমানের ইনফ্রাস্ট্রাকচার যা আছে সেটাও বোয়িং। কাজেই বোয়িং ফ্লাইট কেনার জন্য আমাদের কিছু আদেশ দেওয়ার কথা রয়েছে শিগগির। আমরা সেভাবে নেগোসিয়েশন করেছি বোয়িংয়ের সঙ্গে। এছাড়া তুলা আমদানিকে প্রমোট করব। আপনারা জানেন যে তুলার ওপর এমনিতেই শূন্য শুল্ক। কিন্তু সেখানে আমেরিকান তুলা আমদানি যাতে বেশি হয় সেজন্য কিছু ফ্যাসিলিটি এখানে তৈরি করবো।

সচিব বলেন, সরকারি খাতে যেসব ফুড গ্রেইন কেনা হয় সেক্ষেত্রে আমরা আমেরিকাকে একটু প্রাধান্য দেবো। এভাবে আমরা আসলে আমেরিকান ট্রেডটা বাড়াব। আপনারা জানেন যে আমাদের মিলিটারি ইকুইপমেন্টের একটা বড় অংশ আসে আমেরিকা থেকে। সেসব বিষয়ও বিবেচনায় রয়েছে।

আরও পড়ুন

মিলিটারি ইকুইপমেন্ট বলতে কী ধরনের অস্ত্র বোঝাচ্ছেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের মিলিটারি হার্ডওয়্যার বলতে যেটা বোঝায়, সেটা হলো আমাদের ভিহিকেলগুলো, আর্মার্ড ভেহিকেল অ্যান্ড আদারস। আমাদের যা যা সংগ্রহ করা হয়, এর বেশিরভাগ আমেরিকা থেকে করা হয়। ওখানে তাদের দিক থেকে কোনো চাপ নেই। তারা বলেছে যে যখন কেনা হবে, আমরা যেন তাদের গুরুত্ব দেই। এ ব্যাপারে তাদের কোনো বিশেষ দাবি নেই যে, আমরা যেন তাদের প্রাধান্য দেই। অন্য মেশিনারিজের ক্ষেত্রেও সে কথা তারা বলেছে। আমাদেরও তাতে সম্মত হতে অসুবিধা নেই।

তুলার ওপর এআইটি নিয়ে করা এক প্রশ্নের উত্তরে সচিব বলেন, আমাদের তুলার ওপর ২ শতাংশ এআইটি ইম্পোজ করা, এটা এ বছর একদম নতুন নয়। এটা নিয়ে আলোচনা চলছে। আমাদের তুলা খাতের, বিশেষ করে টেক্সটাইল খাতের যারা অংশীজন তারা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছেন। সেক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত কিছু একটা আসবে। কিন্তু বাইলেটারাল ট্রেডের ক্ষেত্রে এটার তেমন কোনো সম্পর্ক নেই। ধরেন, এটা ইম্পোজ করা হয়েছে। কিন্তু বাইলেটারাল ট্রেডে সবসময়ই নেগোসিয়েশন পর্যায়ে কিছু ছাড় দেওয়া হয়।

ভিয়েতনাম আলোচনার মাধ্যমে ২৬ শতাংশ শুল্ক কমিয়েছে। সেখানে আলোচনায় বাংলাদেশের খুব বেশি তৎপরতা দেখা যায়নি। সাংবাদিকের পক্ষ থেকে এমন কথা বলা হলে তিনি বলেন, তৎপরতায় পার্থক্য আছে, এটা মনে করি না। কারণ হলো আপনারা এটা জানেন কি না, যেদিন থেকে পাল্টা শুল্ক ইমপোজ হয়েছে, তারপরে আমাদের প্রধান উপদেষ্টার চিঠি দেওয়া, বাণিজ্য উপদেষ্টা চিঠি দিয়েছেন, আমি দিয়েছি। প্রায় পাঁচ দফা মিটিং করেছি, অনলাইনে এবং অফলাইনে। এরপর যে ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্টের খসড়া পাঠিয়েছে সেগুলোর ওপর তিন দফা, গতদিন মিলে চার দফায় আমরা সেই খসড়ার ওপরে অ্যামেন্ডমেন্ট পাঠিয়েছি, সেগুলোর ওপরে নেগোসিয়েশন করেছি। এছাড়া ইমেইল যোগাযোগ বা টেলিফোন যোগাযোগে এগুলো চলছে। কাজেই আমরা একদম ফুলটাইম এনগেজড ছিলাম গত ২ এপ্রিল থেকে। আমরা এনগেজড না বা তৎপর কম এটা কোনোভাবেই বলা যাবে না।

গতকাল যে ৩৫ শতাংশের চিঠিটা হবে এটা আমরা আশা করিনি উল্লেখ করে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, কারণ আমাদের এই সপ্তাহে যে ৮, ৯, ১০, ১১, ১২ তারিখের মিটিংগুলো নির্ধারিত ছিল সেসব মিটিংয়ে এই চিঠিটা সম্পর্কে কিছু জানতাম না।

নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে শুল্ক কমাতে না পারলে আমাদের আমদানি-রপ্তানির ওপর চাপ পড়বে কি না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে সচিব বলেন, প্রেশার হবে, সেটা তো সবাই বোঝে এবং সেটা যাতে না হয় সে জন্য আমরা যাচ্ছি আলোচনা করতে। আশা করছি ভালো কিছুই পাব।

আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সামনে এক মাস রেখে আজ ডকুমেন্ট হ্যান্ডওভার করা হয়েছে এবং নেগোসিয়েশনের ডেট দেওয়া হয়েছে। যেটা তাদের পক্ষ থেকেই দেওয়া হয়েছে। তার মানে নেগোসিয়েশনের দরজা খোলা। আমরা নেগোসিয়েশনে এনগেজড হচ্ছি, কথা বলছি। আমার উপদেষ্টা সেখানে আছেন। আমি আজ সন্ধ্যায় যাচ্ছি। আমরা কিছু একটা ফলাফল পাবো না এরকম আশা করে তো আর সেখানে যাচ্ছি না। আশা করি কিছু একটা ফলাফল পাব আলোচনা করে।

এমএএস/এএমএ/এএসএম