ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক কার্যকরের আগেই কার্যাদেশ কমেছে ৪ শতাংশ

ইব্রাহীম হুসাইন অভি | প্রকাশিত: ০৪:২৩ পিএম, ২৭ জুলাই ২০২৫

 

‘বাংলাদেশি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে ট্রাম্প প্রশাসন আরোপিত ৩৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হতে যাচ্ছে আগামী ১ আগস্ট থেকে। তবে এরই মধ্যে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারকরা প্রভাব টের পেতে শুরু করেছেন। গত তিন মাসের তুলনায় আগামী তিন মাসে আমাদের কার্যাদেশ প্রবাহে ইতোমধ্যে ৪ শতাংশ হ্রাস দেখা গেছে।’

স্নোটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম এম খালেদ জাগো নিউজকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বিশেষ প্রতিনিধি ইব্রাহীম হুসাইন অভি

আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫ শতাংশ শুল্ক। দেশের পোশাক রপ্তানিতে কী প্রভাব পড়তে পারে?

শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগেই এ পতন রপ্তানি বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা হারানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই ৪ শতাংশ পতন শুধু ঘোষিত শুল্কের প্রভাবে। যদি কিছু না করা হয়, তাহলে মার্কিন বাজারে আমাদের ব্যবসা শূন্যে নেমে আসবে

বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্প নতুন করে সংকটে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের কারণে, যা কার্যকর হতে যাচ্ছে আগামী ১ আগস্ট থেকে।

এরই মধ্যে মার্কিন ক্রেতাদের কাছ থেকে অর্ডার ৪ শতাংশ কমে গেছে। গত তিন মাসে মার্কিন ক্রেতাদের কাছ থেকে আমাদের মোট অর্ডারের ২৭ শতাংশ এসেছিল। কিন্তু আগামী তিন মাসের জন্য সেই হার কমে ২৩ শতাংশে নেমে এসেছে, যার মানে হলো আমরা ইতোমধ্যে অর্ডার প্রবাহে ৪ শতাংশ হ্রাস দেখছি।

শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগেই এ পতন রপ্তানি বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা হারানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই ৪ শতাংশ পতন শুধু ঘোষিত শুল্কের প্রভাবে। যদি কিছু না করা হয়, তাহলে মার্কিন বাজারে আমাদের ব্যবসা শূন্যে নেমে আসবে।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্ডার কমতে থাকলে এর প্রভাব পড়বে পুরো শিল্পে, যেখানে প্রায় ৪০ লাখ লোক নিয়োজিত। অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে, লাখো শ্রমিক চাকরি হারাতে পারেন। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও বড় ধাক্কা আসবে

কী কারণে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়তে পারে?

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর যুক্তরাষ্ট্রই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পোশাক বাজার। এতদিন বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, ভারতসহ অন্য দেশের ট্যারিফের হার প্রায় সমান ছিল, ফলে শ্রম ব্যয়ের দিক থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে ছিল। কিন্তু নতুন ৩৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হলে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে।

বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক পাঠাতে লিড টাইম প্রায় ৪০ দিন, যেখানে চীন বা ভিয়েতনামের ক্ষেত্রে তা মাত্র ২০-২৫ দিন। প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ দুর্বল হওয়ায় এ বাড়তি শুল্ক বাংলাদেশের পণ্যের দাম আরও বাড়াবে। ফলে ক্রেতারা সহজেই অন্য উৎসে সরে যেতে পারেন।

সময় আর হাতে নেই। মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে ৩৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হতে যাচ্ছে। এখনই সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর ও দৃশ্যমান কূটনৈতিক প্রচেষ্টা না চালালে দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাতের ভিত্তি নড়ে যেতে পারে

শুল্কহার কার্যকরের ফলে কি এ খাতে কর্মসংস্থানে প্রভাব পড়বে?

যুক্তরাষ্ট্রের অর্ডার কমতে থাকলে এর প্রভাব পড়বে পুরো শিল্পে, যেখানে প্রায় ৪০ লাখ লোক নিয়োজিত। অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে, লাখো শ্রমিক চাকরি হারাতে পারেন। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও বড় ধাক্কা আসবে।

শুধু ১-২ শতাংশ অর্ডার যদি প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো যেমন ভিয়েতনাম, ভারত, পাকিস্তান, কম্বোডিয়া বা মেক্সিকোর দিকে সরে যায়, তাহলেই বাংলাদেশের ক্ষতি হবে বিশাল।

সমাধানের পথ কী?

এই সংকট কাটাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার উচিত। সরকারকে এখনই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে উচ্চপর্যায়ের আলোচনায় যেতে হবে। বাণিজ্য মিশনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝাতে হবে- এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য কতটা ক্ষতিকর।

তিনটি গুরুত্বপূর্ণ করণীয় হলো- জরুরিভিত্তিতে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানো এবং শুল্ক হ্রাস বা মওকুফের চেষ্টা করা, উৎপাদন খরচ কমাতে প্রযুক্তিনির্ভরতা ও দক্ষতা বাড়ানো, উচ্চমূল্য সংযোজনপূর্ণ পোশাক উৎপাদনে ভর্তুকি ও উৎসাহ দেওয়া।

কোনো আশার আলো দেখছেন কি?

যদি শুল্কহার প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর সঙ্গে সমতাভিত্তিক হয়, তাহলে বাংলাদেশ এখনো টিকে থাকার সুযোগ পাবে। যদি আমরা ভিয়েতনাম বা ভারতের কাছাকাছি হারে ট্যারিফে থাকতে পারি, তাহলেও সমস্যা হবে না। কিন্তু তার জন্য সময় খুবই সীমিত। ঝুঁকিমুক্ত থাকতে আমাদের অবশ্যই আলোচনার মাধ্যমে ৩৫ শতাংশ থেকে শুল্ক নামিয়ে আনতে হবে।

সময় আর হাতে নেই। মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে ৩৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হতে যাচ্ছে। এখনই সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর ও দৃশ্যমান কূটনৈতিক প্রচেষ্টা না চালালে দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাতের ভিত্তি নড়ে যেতে পারে।

আইএইচও/এএসএ/এমএফএ/জিকেএস