ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

মো. মনিরুজ্জামান

নষ্ট হয়ে গেছে ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদনের বিশ্বাসযোগ্যতা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৮:১৫ পিএম, ০৪ অক্টোবর ২০২৫

অনেক ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদনের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হয়ে গেছে মন্তব্য করে প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. মনিরুজ্জামান বলেছেন, যেসব ব্যাংক এখন দেউলিয়াত্বের পথে, তারাও শত শত কোটি টাকার মুনাফা দেখিয়েছে। তাদের নন-পারফর্মিং লোনগুলো যথাযথভাবে প্রকাশ করা হয়নি। ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে শেয়ার দামে।

শনিবার (৪ অক্টোবর) জাগোনিউজ২৪.কম আয়োজিত ‘পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়ে এ কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাগোনিউজ২৪.কম এর সম্পাদক কে এম জিয়াউল হক এবং সঞ্চালনা করেন ডেপুটি চিফ রিপোর্টার সাঈদ শিপন।

শেয়ারবাজারে ব্যাংক ও মিউচুয়াল ফান্ড খাতের বর্তমান দুরবস্থা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে মনিরুজ্জামান বলেন, ব্যাংকিং সেক্টর একসময় ছিল বাজারের অন্যতম শক্ত স্তম্ভ। ২০১০ সালের দিকে মার্কেট ক্যাপ অনুযায়ী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অবদান ছিল বড় একটি অংশ। কিন্তু এখন সেই অবস্থান থেকে সেক্টরটি অনেক পিছিয়ে গেছে।

‘এর মূল কারণ হচ্ছে অনেক ব্যাংকের ব্যালেন্সশিটের (আর্থিক প্রতিবেদন) বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হয়েছে। গত কয়েক বছরে দেখা গেছে, যেসব ব্যাংক এখন দেউলিয়াত্বের পথে, তারাও শত শত কোটি টাকার মুনাফা দেখিয়েছে। তাদের নন-পারফর্মিং লোনগুলো যথাযথভাবে প্রকাশ করা হয়নি। ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে গেছে’ বলেন এই পুঁজিবাজার বিশ্লেষক।

প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজের এমডি বলেন, এখন দেখা যাচ্ছে কিছু ব্যাংক প্রতি কোয়ার্টারে হাজার কোটি টাকার ক্ষতির রিপোর্ট দিচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা এখন বাস্তব চিত্র কিছুটা বুঝতে পারছেন, তাই ব্যাংকের শেয়ারদরও কমে গেছে। তবে সব ব্যাংকই খারাপ নয়—যেসব ব্যাংকের গভর্নেন্স ভালো, তাদের শেয়ারের দর কিছুটা বেড়েছে। তাই বিনিয়োগকারীদের উচিত হবে প্রতিটি ব্যাংকের এনপিএল রেশিও, গভর্নেন্স রেকর্ড ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া।

মিউচুয়াল ফান্ড নিয়ে মনিরুজ্জামান বলেন, মিউচুয়াল ফান্ড অনেকদিন ধরেই বাজারের দুঃখের একটি জায়গা। ২০০৯-২০১০ সালে ১০ টাকার মিউচুয়াল ফান্ড একসময় ৫০-৬০ টাকায়ও ট্রেড হয়েছে, যা ছিল সম্পূর্ণ বাস্তবতাবিবর্জিত। পরে যখন দাম কমতে শুরু করে, তখন ফান্ডগুলোর মেয়াদ শেষ হওয়ার সময় আসে। কিন্তু তখনকার নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসব ফান্ডের মেয়াদ আরও ১০ বছর বাড়িয়ে দেয়। এতে ফান্ড ম্যানেজাররা প্রায় স্থায়ীভাবে নিয়ন্ত্রণের সুযোগ পেয়ে যায়। এটা ইউনিট হোল্ডারদের অ্যাসেট নয়, এটা অ্যাসেট ম্যানেজারদের অ্যাসেট, তারা সেভাবেই এটা ম্যানেজ করেছেন।

মো. মনিরুজ্জামান বলেন, গত দুই বছরে দেখা গেছে, অনেক অ্যাসেট ম্যানেজার ফান্ডের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। কেউ কেউ সেই টাকা নন-লিস্টেড কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছেন, যেখান থেকে কোনো আয় বা রিটার্ন আসছে না, আবার সেগুলো লিকুইডেট করাও কঠিন। এ এক ভয়াবহ গভর্নেন্স ব্যর্থতা। এখানে ট্রাস্টি, কাস্টডিয়ানসহ সব স্টেকহোল্ডারেরই ব্যর্থতা আছে।

আরও পড়ুন
শেয়ারবাজারের সম্ভাবনা নিহিত সঠিক নেতৃত্বে, চ্যালেঞ্জ রাজনীতি
পুঁজিবাজারকে রাষ্ট্রীয়ভাবে নেগলেক্ট করে রাখা হয়েছে
১৪ মাসে পোর্টফোলিও অর্ধেকে, আস্থা ফেরেনি বিনিয়োগকারীদের

‘ফলস্বরূপ, মিউচুয়াল ফান্ডের রিপোর্টেড এনএভি (নেট এসেট ভ্যালু) ও বাজারমূল্যের মধ্যে বড় পার্থক্য তৈরি হয়েছে। বিনিয়োগকারীরা জানেন না, ফান্ডের মেয়াদ আবারও বাড়ানো হবে কিনা বা নন-লিস্টেড কোম্পানিতে বিনিয়োগের অর্থ ফেরত আসবে কিনা। তাই তারা ঝুঁকি বিবেচনা করে এনএভি’র তুলনায় কম দামে এসব ইউনিট কিনছেন বা বিক্রি করছেন’ বলেন প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজের সিইও।

প্রবাসীদের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, 'এনআরবি (অনিবাসী) হিসেবে যারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেন তারা এনআরবি কিনা- এ বিষয়ে অনেকে সন্দেহ পোষণ করেন। তাদের যে লোকাল প্রতিনিধিরা আছেন তারা এখানে অ্যাকাউন্টগুলো বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করেন।

ভালো কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আনার জন্য সম্মিলিতভাবে প্রচেষ্টা নিতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে শুধু কিছু আইন-কানুন পরিবর্তন করলে হবে না। মানসিক অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে।

'একটি উদাহরণ দিই- একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি রাইট শেয়ার করতে গেলো। এ জন্য তাদের প্রায় দুই তিন বছর লাগলো। তার সাবস্ক্রিপশনটা হবে শেয়ার হোল্ডারদের পক্ষ থেকে। এখানে কোন নতুন বিনিয়োগকারী টাকা দেবেন না, এটাতো পাবলিক অফার নয়। এ কোম্পানিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে বলা হয়েছিল, তাদের বিগত পাঁচ বছরে যত সেলস ভাউচার আছে, সেটা জমা দিতে হবে। এক একটা কোম্পানির আইপিওতে দেখা যাচ্ছে কয়েক বস্তা ২০/৩০টি কার্টুন তাদের জমা দিতে হয়, এ ধরনের যদি আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থাকে, এটা ইস্যুয়ার কোম্পানির জন্য খুবই কঠিন’ বলেন মনিরুজ্জামান।

প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজের সিইও বলেন, একজনের কাছ থেকে আরেকজন শুনছেন তাদের কি রকম হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। আমরা দেখেছি যে বিএসইসির কাছ থেকে একটা হার্ডল আছে, আইপিও'র যে লম্বা প্রসেস সেখানে তো অনেক পথ পাড়ি দিতে হয়। এই বিষয়গুলো নিয়ে টাস্কফোর্স অনেক সুপারিশ দিয়েছে। আশা করছি, এগুলোর অনেক কিছু বাস্তবায়ন হবে।

তিনি বলেন, আইপিও'র অডিটর কিভাবে নির্বাচিত হবে, অডিট প্রক্রিয়াটা যাতে আরও সহজ হয়, ডিএসই-তে যাতে পাঁচ বছরের ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্টের প্রত্যেকটি লেনদেনের রিপোর্ট করতে না হয়। এ বিষয়গুলো সহজীকরণের জন্য আমরা কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছি। যাতে যারা ভবিষ্যতে আইপিওতে আসবেন তাদের পথটা সুগম করা যায়।

গোলটেবিল বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিএসইসি কর্তৃক গঠিত পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের সদস্য মো. আল আমিন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান পরিচালক মো. শাকিল রিজভী, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন, হিসাববিদ মাহমুদ হোসেন, ফান্ডামেন্টাল ও টেকনিক্যাল অ্যানালিস্ট মো. মামুনুর রশীদ, জাগোনিউজ২৪.কম এর প্ল্যানিং এডিটর মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল, ডেপুটি এডিটর ড. হারুন রশীদ, চিফ রিপোর্টার ইব্রাহিম হোসেন অভি, নিউজ এডিটর মাহবুব আলম রনি প্রমুখ।

আরএমএম/এমএএইচ/জেআইএম