ডিজিটাল রূপান্তরে রূপালী ব্যাংকের গ্রাহক সন্তুষ্টি বেড়েছে
‘অপ্রয়োজনীয় ব্যয় হ্রাস ও নীতিনিষ্ঠ সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে কর্মীদের দক্ষতা ও গ্রাহকসেবার মানোন্নয়নে গুরুত্বারোপ করেছে। ডিজিটাল রূপান্তরের অংশ হিসেবে আধুনিক কোর ব্যাংকিং সফটওয়্যার, ই-ব্যাংকিং অ্যাপ ও মোবাইল ব্যাংকিং সেবা সম্প্রসারিত হয়েছে, ফলে খরচ কমেছে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি বেড়েছে।’
কথাগুলো বলছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রূপালী ব্যাংকের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কাজী মো. ওয়াহিদুল ইসলাম। ব্যাংকটির সাম্প্রতিক অবস্থা, উন্নয়ন পরিকল্পনা ও ভবিষ্যৎ ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ইয়াসির আরাফাত রিপন।
জাগো নিউজ: দেশের বর্তমান আমানতের অবস্থা ও প্রবণতা কেমন?
কাজী মো. ওয়াহিদুল ইসলাম: দেশের ব্যাংকখাতে মেয়াদি আমানত ও বিনিয়োগে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখা গেছে, যা ব্যাংকগুলোর স্থিতিশীলতা ও ঝুঁকি মোকাবিলায় সহায়ক হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে চলতি আমানত ও বিল সামান্য কমেছে, যা অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রভাবের ফলাফল হতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুলাই মাসে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে আমানত ও ঋণের প্রবণতা অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্থিতিশীল বা ধীরগতিতে বাড়ছে। তলবি আমানত জুলাই ২০২৫-এ এক লাখ ৯৭ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি। মেয়াদি আমানত ১৬ লাখ ৮২ হাজার ৫৪৯ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা জুলাই ২০২৪-এর তুলনায় ৯ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি। মোট আমানত ১৮ লাখ ৮০ হাজার ১০৭ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ৮ দশমিক ৪২ শতাংশ বেশি। রূপালী ব্যাংকের আমানতও ডিসেম্বর ২০২৪-এর ৬৮ হাজার ৫শ কোটি টাকা থেকে আগস্ট ২০২৫-এ ৭৩ হাজার ১৭০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।
বর্তমানে রূপালী ব্যাংক আর্থিক স্থিতিশীলতা অতিক্রম করে টেকসই প্রবৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আগামী দিনে আরও সহজ ও গ্রাহকবান্ধব ডিজিটাল সেবা এবং নীতিমালা গ্রহণই ব্যাংকের প্রধান লক্ষ্য
সার্বিকভাবে, বাংলাদেশের ব্যাংকখাতের আমানত পরিস্থিতি উন্নতির দিকে এগোচ্ছে। তবে দ্রুত ও টেকসই উন্নয়নের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও ব্যাংকগুলোর মধ্যে সমন্বয়, জবাবদিহিতা এবং প্রযুক্তিনির্ভর সেবার প্রসার অপরিহার্য। ব্যাংকখাতের শক্তি ও দুর্বলতা চিহ্নিত করে সঠিক নীতিমালা গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনগণের অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়ানো সম্ভব হবে।
জাগো নিউজ: বর্তমানে আর্থিক খাতের কঠিন পরিস্থিতি থেকে কীভাবে উত্তরণ সম্ভব হলো? আপনাদের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পটা জানতে চাই।
কাজী মো. ওয়াহিদুল ইসলাম: সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের আর্থিক খাত কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেলেও রূপালী ব্যাংক একের পর এক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সফলভাবে পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, ডলার সংকট, আমদানিনির্ভরতা ও ঋণখেলাপির উচ্চ হার ব্যাংকখাত ব্যাপক চাপ দিয়েছে। এই প্রতিকূল পরিবেশে রূপালী ব্যাংক দক্ষ ব্যবস্থাপনা, আর্থিক শৃঙ্খলা ও দায়বদ্ধতার মাধ্যমে নিজেকে সুসংগঠিত করেছে।
আরও পড়ুন
ধ্বংসস্তূপ থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে জনতা ব্যাংক
গ্রাহক আস্থায় এনআরবিসি ব্যাংকের আমানত বাড়ছে
শিগগির অগ্রণী ব্যাংক খেলাপিমুক্ত হয়ে আগের মর্যাদায় ফিরবে
এবি ব্যাংককে শক্তিশালী-বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করতে চাই
ব্যাংকটি খরচ নিয়ন্ত্রণে জোর দিয়েছে, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় হ্রাস ও নীতিনিষ্ঠ সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে কর্মীদের দক্ষতা এবং গ্রাহকসেবার মানোন্নয়নে গুরুত্বারোপ করেছে। ডিজিটাল রূপান্তরের অংশ হিসেবে আধুনিক কোর ব্যাংকিং সফটওয়্যার, ই-ব্যাংকিং অ্যাপ ও মোবাইল ব্যাংকিং সেবা সম্প্রসারিত হয়েছে, ফলে খরচ কমেছে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি বেড়েছে।

আমানত সংগ্রহে ব্যাংক উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। বর্তমানে মোট আমানত দাঁড়িয়েছে ৭৩ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। ব্যাংক ২৩ জুন থেকে ১০০ দিনের বিশেষ কর্মসূচি শুরু করে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫ হাজার ৫২৩ কোটি টাকার নতুন আমানত সংগ্রহ ও প্রায় ১০ হাজার নতুন হিসাব খোলায় সক্ষম হয়েছে। ঋণ খাতে ব্যাংক বৃহৎ ঋণনির্ভরতা কমিয়ে এসএমই ও কৃষিখাতে ঋণ সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত এসএমই ঋণ হিসেবে ৯৩৫ কোটি এবং কৃষি ও পল্লি ঋণ হিসেবে ৪৫০ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
রূপালী ব্যাংক পিএলসি নিজস্ব মোবাইল অ্যাপ তৈরি করেছে, যার মাধ্যমে গ্রাহকরা অ্যাকাউন্ট অনুসন্ধান, টাকা স্থানান্তর, বিল পেমেন্টসহ নানান লেনদেন সহজে করতে পারেন
অবলোপন ঋণ থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১১শ কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৮৬ কোটি টাকা বেশি। এছাড়া, নীতিসহায়তার আওতায় ৬২ জন গ্রাহক ১১ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা ঋণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করেছেন, যার মধ্যে ৩৬ জনের প্রায় ৬ হাজার ৯৩১ কোটি টাকার অনুদান অনুমোদিত হয়েছে।
রূপালী ব্যাংক আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত প্রায় এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স আহরণ করে দেশের তফসিলি ব্যাংকের মধ্যে অষ্টম অবস্থানে রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যাংকের সক্ষমতা ও আস্থার প্রতিফলন। বর্তমানে রূপালী ব্যাংক আর্থিক স্থিতিশীলতা অতিক্রম করে টেকসই প্রবৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আগামী দিনে আরও সহজ ও গ্রাহকবান্ধব ডিজিটাল সেবা এবং নীতিমালা গ্রহণই ব্যাংকের প্রধান লক্ষ্য।
জাগো নিউজ: আপনার ব্যাংকে বর্তমানে কী কী গুরুত্বপূর্ণ আমানত স্কিম রয়েছে, বিশেষ করে নির্দিষ্ট গ্রাহক গোষ্ঠীর জন্য?
কাজী মো. ওয়াহিদুল ইসলাম: রূপালী ব্যাংক তার গ্রাহকদের বহুমুখী চাহিদা ও আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে নানান ধরনের সঞ্চয় পণ্য এবং আমানত স্কিম চালু করে তার আমানত পোর্টফোলিও আরও বৈচিত্র্যময় ও স্থিতিশীল করেছে। ২০২৫ সালে নতুনভাবে চালু হওয়া পাঁচটি স্কিম হলো: রূপালী সেলিব্রেশন ডিপোজিট স্কিম (RCDS), রূপালী ডিপোজিট পেনশন স্কিম–৩ (RDPS-3), রূপালী মাসিক আয় স্কিম (RMES)–রূপালী আস্থা, রূপালী প্রবীণ নাগরিক মাসিক মুনাফা স্কিম (RMBSC) এবং রূপালী শ্রদ্ধা ও রূপালী ডাবল বেনিফিট স্কিম (RDBS)। এছাড়া ব্যাংকের আগের জনপ্রিয় স্কিমও চলমান।
জাগো নিউজ: গ্রাহকদের জন্য প্রযুক্তি, পেমেন্ট ও নিরাপত্তার দিক থেকে কী কী উদ্ভাবন এনেছেন?
কাজী মো. ওয়াহিদুল ইসলাম: আমি যোগদান করার পর ডিজিটাল ব্যাংকিংকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি। গ্রাহকের দোরগোড়ায় আধুনিক ব্যাংকিং প্রযুক্তি পৌঁছে দিতে মহাব্যবস্থাপক পদমর্যাদার একজন চিফ ইনফরমেশন টেকনোলজি অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমাদের প্রধান ডিজিটাল সেবাগুলো নিম্নরূপ:
ডিজিটাল ব্যাংকিং অ্যাপ: রূপালী ব্যাংক পিএলসি নিজস্ব মোবাইল অ্যাপ তৈরি করেছে, যার মাধ্যমে গ্রাহকরা অ্যাকাউন্ট অনুসন্ধান, টাকা স্থানান্তর, বিল পেমেন্টসহ নানা লেনদেন সহজে করতে পারেন।
গ্রাহকসেবার উন্নয়নের অংশ হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিংভিত্তিক ডিপিএস, ক্যাশ কাউন্টারে কিউআর কোড ব্যবহার করে চেকবিহীন টাকা উত্তোলন এবং অন্য ডিজিটাল সেবার সম্প্রসারণ করা হবে, যা গ্রাহকদের জন্য সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করবে
ডেবিট কার্ড: ৩৫ লাখের বেশি ডেবিট কার্ড সরবরাহ করা হয়েছে, যা ব্যবহার করে গ্রাহকরা Q-Cash অন্তর্ভুক্ত যে কোনো ATM থেকে টাকা তুলতে এবং POS মেশিনের মাধ্যমে কেনাকাটার বিল পরিশোধ করতে পারেন।
মোবাইল ব্যাংকিং (রূপালী ক্যাশ): নিজস্ব মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় গ্রাহকরা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে মোবাইল ওয়ালেটে টাকা পাঠানো-গ্রহণ, ব্যালেন্স ও লেনদেন পরীক্ষা, রেমিট্যান্স গ্রহণ, বেতন প্রদান, মোবাইল রিচার্জ ও ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করতে পারেন।
এছাড়া মোবাইল ওয়ালেট ছাড়াই টোকেনের মাধ্যমে ক্যাশ আউটের সুবিধাও রয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকের ৬৮টি ATM রয়েছে এবং CRM মেশিন স্থাপনের কাজ চলমান। এছাড়া অন্য লেনদেনের মধ্যে শাখার মাধ্যমে RTGS, BEFTN, IBFT, BACPS সিস্টেমের মাধ্যমে লেনদেন করা যায়।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা: টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন- রূপালী অ্যাপস ও রূপালী ক্যাশে লেনদেনে দুই ধাপে প্রমাণীকরণ প্রয়োগ করা হয়, যা নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। অ্যাকাউন্ট অ্যালার্ট- ব্যালেন্স কমে গেলে বা টাকা স্থানান্তর হলে গ্রাহকরা তাৎক্ষণিক SMS অ্যালার্ট পান। বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন- রূপালী ক্যাশে পাসওয়ার্ডের বদলে ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে লগইন করার সুবিধা চালু হয়েছে, যা নিরাপত্তা বাড়ায়। এই ডিজিটাল উদ্যোগের মাধ্যমে রূপালী ব্যাংক গ্রাহকসেবায় নতুন মাত্রা যোগ করছে।

জাগো নিউজ: ভবিষ্যতে আপনার ব্যাংক নতুন কী ধরনের আমানত স্কিম চালু করতে চায় এবং গ্রাহকসেবায় উন্নয়ন পরিকল্পনা কী?
কাজী মো. ওয়াহিদুল ইসলাম: রূপালী ব্যাংক ভবিষ্যতে গ্রাহকের চাহিদা, আর্থিক নিরাপত্তা ও সুবিধা কেন্দ্র করে নতুন আমানত এবং সঞ্চয় স্কিম চালুর পরিকল্পনা করছে। শিগগির প্রবাসীদের জন্য পাঁচ বছর মেয়াদি আমানত স্কিম চালু করা হবে, যা ১০ শতাংশ সুদে প্রবর্তিত হবে। পাশাপাশি, প্রবাসী বাংলাদেশি ও রেমিট্যান্স গ্রহণকারী বেনিফিসিয়ারিদের জন্য বিশেষ সুবিধাসহ সঞ্চয়ী হিসাবও সময়ের প্রয়োজন অনুযায়ী চালু করা হবে।
গ্রাহকসেবার উন্নয়নের অংশ হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিংভিত্তিক ডিপিএস, ক্যাশ কাউন্টারে কিউআর কোড ব্যবহার করে চেকবিহীন টাকা উত্তোলন এবং অন্য ডিজিটাল সেবার সম্প্রসারণ করা হবে, যা গ্রাহকদের জন্য সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করবে।
ডিজিটাল ন্যানো সেবার মাধ্যমে ছোট ঋণ দেওয়া এবং দৈনিক ও সাপ্তাহিক ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্প পরিচালনার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এসব সেবা বিশেষভাবে শিশু, নারী, বয়স্ক নাগরিক, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য ডিজাইন করা হবে। রূপালী ব্যাংকের লক্ষ্য হলো প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে গ্রাহকদের আর্থিক নিরাপত্তা বাড়ানো এবং ব্যাংকিং সেবা আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও কার্যকর করে তোলা।
জাগো নিউজ: ব্যাংকখাতে আমানতের নিরাপত্তা ও জনগণের আস্থা বাড়াতে সরকারের কী ভূমিকা থাকা উচিত বলে আপনি মনে করেন?
কাজী মো. ওয়াহিদুল ইসলাম: ব্যাংকখাতে আমানতের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও জনগণের আস্থা বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংককে একটি সুসংগঠিত এবং সমন্বিত কৌশল গ্রহণ করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে ব্যাংকগুলোর কার্যক্রমে কঠোর তদারকি ও সময়োপযোগী নীতিমালা প্রণয়ন, যা অর্থনৈতিক খাতের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে।
আমানতকারীদের অর্থ সুরক্ষায় ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স কাভারেজ সম্প্রসারণ অত্যন্ত জরুরি, যা সংকটকালেও গ্রাহকের আস্থা অটুট রাখবে। পাশাপাশি, জনগণের আর্থিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও সঞ্চয়ের প্রতি উৎসাহী করতে ব্যাপক এবং কার্যকর আর্থিক শিক্ষামূলক কার্যক্রম চালানো প্রয়োজন। ক্যাশলেস সোসাইটি গঠন ও ডিজিটাল ব্যাংকিং সম্প্রসারণে সহায়তার জন্য প্রয়োজনীয় আইন, নীতি ও নির্দেশিকা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব পদক্ষেপ মিলিয়ে ব্যাংকখাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং জনগণের আস্থা আরও দৃঢ় হবে।
জাগো নিউজ: ঋণ পুনরুদ্ধারে কোন ধরনের অগ্রগতি হয়েছে? খেলাপিদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না?
কাজী মো. ওয়াহিদুল ইসলাম: ঋণ পুনরুদ্ধারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ২০২৫ সালকে আদায় বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত খেলাপি ও অবলোপন ঋণ থেকে প্রায় ১১শ কোটি টাকা (নগদ ৬৬০ কোটি ও সমন্বয় ৪৪০ কোটি) আদায় হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৮৬ কোটি টাকা বেশি।
এছাড়া, নীতিসহায়তার আওতায় ৬২ জন গ্রাহক ব্যাংকের মাধ্যমে এবং সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করেছেন, যার ঋণের পরিমাণ প্রায় ১১ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩৬ জন গ্রাহকের নীতিসহায়তা অনুমোদন পেয়েছে, যার টাকার পরিমাণ প্রায় ৬ হাজার ৯৩১ কোটি। আশা করা হচ্ছে অল্প সময়ের মধ্যে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ঋণ শ্রেণিবদ্ধ করা সম্ভব হবে।
রূপালী ব্যাংক খেলাপিদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। ব্যাংকের প্যানেল আইনজীবীদের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রূপালী কেইস ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রধান কার্যালয় থেকে মামলাগুলোর নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আইনগত জটিলতা দ্রুত নিরসনের জন্য সম্প্রতি চিফ লিগ্যাল অ্যাডভাইজর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত মোট নিষ্পত্তি করা হয়েছে ৩৫৮টি মামলা।
ইএআর/এএসএ/এমএফএ/এমএস