ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

কৃষিতে বছরে ৯ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি বিশ্বব্যাংকের

ইব্রাহীম হুসাইন অভি | ওয়াশিংটন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে | প্রকাশিত: ১০:৪৪ এএম, ২০ অক্টোবর ২০২৫

কৃষিকে শুধু খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্র নয়, বরং কর্মসংস্থান-আয় বৃদ্ধি ও খাদ্য নিরাপত্তার চালিকাশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে ২০৩০ সালের মধ্যে কৃষি ব্যবসা খাতে বার্ষিক বিনিয়োগ দ্বিগুণ করে ৯ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করবে বিশ্বব্যাংক।

২০২৫ সালের বার্ষিক সভার অ্যাগ্রি-কানেক্ট ফ্ল্যাগশিপ ইভেন্টের বক্তব্যে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা বলেন, কৃষি সবসময়ই উন্নয়নের কেন্দ্রে ছিল, তবে এখন প্রয়োজন এটিকে এমন এক ব্যবসায়িক শক্তিতে রূপান্তর করা যা ক্ষুদ্র কৃষকদের আয় বাড়াবে এবং গোটা অর্থনীতিতে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে।

আজকের চ্যালেঞ্জ শুধু বেশি খাদ্য উৎপাদন নয় বরং সেই প্রবৃদ্ধিকে এমন এক ব্যবসায়িক মডেলে রূপান্তর করা, যা আয় ও সুযোগ সৃষ্টি করবে, বলেন বাঙ্গা।

তিনি উল্লেখ করেন, আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রায় ১.২ বিলিয়ন তরুণ কর্মজীবনে প্রবেশ করবে। অথচ বর্তমান প্রবণতা অনুযায়ী মাত্র ৪০০ মিলিয়ন কর্মসংস্থান তৈরি হবে। এই ঘাটতি শত কোটি তরুণ বিশ্ব অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে পারে, অথবা অস্থিরতা ও অভিবাসনের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, বলেন তিনি।

সেই কারণেই কর্মসংস্থান সৃষ্টি এখন বিশ্বব্যাংক গ্রুপের মূল মিশন, যোগ করেন বাঙ্গা। এ মিশন বাস্তবায়নে তিন স্তম্ভের কর্মপরিকল্পনার ওপর জোর দিয়েছে সংস্থাটি। আর তাহলো অবকাঠামো ও দক্ষতা উন্নয়ন, নিয়মনীতি ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ গঠন, এবং বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি হ্রাসের সহায়তা দেওয়া, যা বেসরকারি পুঁজি আকর্ষণ করে।

আরও পড়ুন
বিশ্বে উন্নয়ন কৌশলের কেন্দ্রে কর্মসংস্থানকে স্থান দেওয়ার আহ্বান
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা রক্ষায় আইএমএফের সতর্কবার্তা
এআই ব্যবহারে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রমবাজারে ৭% চাকরি ঝুঁকির মুখে

বাঙ্গার ভাষায়, কর্মসংস্থান শেষ পর্যন্ত বেসরকারি খাত থেকেই আসে, তবে অর্থনৈতিক যাত্রার শুরুতে সরকারি খাতই চালিকা ভূমিকা পালন করে।

কৃষি ব্যবসা হবে পরবর্তী প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিন

বিশ্বব্যাংক ৫টি খাতকে কর্মসংস্থানের প্রধান উৎস হিসেবে চিহ্নিত করেছে—অবকাঠামো, কৃষি ব্যবসা, স্বাস্থ্যসেবা, পর্যটন ও মূল্যসংযোজন শিল্প। এর মধ্যে কৃষি ব্যবসাকে তিনি সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে উল্লেখ করেন, যা একদিকে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে, অন্যদিকে আগামী কয়েক দশকে খাদ্যের বৈশ্বিক চাহিদা ৫০ শতাংশ বৃদ্ধির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়তা করবে।

বাঙ্গা বলেন, উদীয়মান অর্থনীতিগুলোই এই পরিবর্তনের কেন্দ্রে। আফ্রিকায় রয়েছে বিশ্বের ৬০ শতাংশ অনাবাদি আবাদযোগ্য জমি; লাতিন আমেরিকা এরই মধ্যে এক বিলিয়নের বেশি মানুষের খাদ্য উৎপাদন করে। তবে অবকাঠামোর অভাব বড় বাধা; আর এশিয়ায় ক্ষুদ্র কৃষকরাই অধিকাংশ জমির মালিক—যাদের প্রযুক্তি, অর্থায়ন ও বাজারে প্রবেশাধিকার বাড়ানো গেলে বিশাল পরিবর্তন সম্ভব।

বর্তমানে বিশ্বের মোট খাদ্যের ৮০ শতাংশ উৎপাদন করেন ৫০০ মিলিয়ন ক্ষুদ্র কৃষক, অথচ তাদের মধ্যে মাত্র একজনের মধ্যে একজন (১০ শতাংশেরও কম) বাণিজ্যিক অর্থায়নের আওতায় আসে।

কৃষক ও ক্ষুদ্র খামারের ওপর গুরুত্ব

বিশ্বব্যাংকের নতুন কৌশলের তিনটি লক্ষ্য তুলে ধরে বাঙ্গা বলেন, ক্ষুদ্র কৃষকদের উৎপাদনশীলতা ও পরিসর বৃদ্ধি করা, তাদের মূল্য শৃঙ্খলের সঙ্গে সংযুক্ত করা এবং অর্থায়ন, বিমা ও বাজারে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করে শোষণ থেকে রক্ষা করা।

তিনি বলেন, সহনশীলতা শুরু থেকেই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে—যেমন তাপ-সহনশীল বীজ, সেচ ব্যবস্থার দক্ষতা, মাটির পুনরুজ্জীবন পদ্ধতি এবং বিমা ও অর্থায়নের শক্ত কাঠামো, যাতে খারাপ মৌসুম মানেই খারাপ বছর না হয়।

আরও পড়ুন
এক রেটে ভ্যাট বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার
কর্মসংস্থানের অভাব অস্থিরতা ও অভিবাসন ঝুঁকি বাড়াবে: অজয় বাঙ্গা
আইএমএফের কঠিন শর্তে ঋণ নেবে না বাংলাদেশ

ডিজিটাল প্রযুক্তিকেও তিনি ‘পুরো ব্যবস্থার আঠা’ হিসেবে উল্লেখ করেন—যা ছোট এআই-নির্ভর টুল দিয়ে ফসলের রোগ শনাক্ত করা, সার পরামর্শ দেওয়া, আবহাওয়া সতর্কতা পাঠানো এবং নিরাপদে পেমেন্ট সম্পন্ন করার সুযোগ তৈরি করে।

ডিজিটালই সেই শক্তি, যা পুরো ব্যবস্থাকে একত্রে ধরে রাখে, বলেন বাঙ্গা।

পরীক্ষিত মডেল ও বৈশ্বিক প্রয়োগ

ভারতের উত্তর প্রদেশে এই মডেল এরই মধ্যেই সফলভাবে কাজ করছে বলে জানান বাঙ্গা। এটি শুধু কার্যকর নয়, বরং সম্প্রসারণ যোগ্য, বলেন তিনি।

তার মতে, এই রূপান্তর সফল হবে কেবল তখনই, যখন সরকার, ব্যবসা ও উন্নয়ন অংশীদাররা একসঙ্গে কাজ করবে।

আমরা সবাই যদি একই দিকে বৈঠা চালাই, তাহলেই সাফল্য সম্ভব, বলেন তিনি।

বিশ্বব্যাংকের এই নতুন কৃষি-কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ইঙ্গিত দিচ্ছে, ভবিষ্যতে কৃষি শুধু খাদ্য নিরাপত্তার মাধ্যম নয়—বরং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের মূল চালিকাশক্তি হয়ে উঠতে পারে।

আইএইচও/এমআইএইচএস/এমএস