কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা রক্ষায় আইএমএফের সতর্কবার্তা
বিশ্ব অর্থনীতি অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলায় নীতি শৃঙ্খলা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা রক্ষার আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
এশিয়ায় মূলধন বণ্টন উন্নত করতে আর্থিক খাতের সংস্কার অঞ্চলটির বিপুল সঞ্চয়কে আরও কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে এবং উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সহায়তা করতে পারে, বলে মন্তব্য করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
নেভিগেটিং আওয়ার্ল্ড ইন ট্রানজিশন শিরোনামে প্রকাশিত আইএমএফের ২০২৫ সালের গ্লোবাল পলিসি এজেন্ডাতে সতর্ক করে বলা হয়েছে- উচ্চ ঋণ, দুর্বল রাজস্ব শৃঙ্খলা ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বিশ্ব অর্থনীতির স্থিতিশীলতাকে বিপন্ন করছে।
আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে চলমান আইএমএফের বার্ষিক সভায় ১৬ অক্টোবর এজেন্ডাটি উন্মোচন করেন।
প্রতিবেদনের সারাংশে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক অর্থনীতি একটি গভীর রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যেখানে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান আন্তর্জাতিক কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে নীতির ব্যাপক পরিবর্তন অর্থনীতিগুলোকে পুনর্গঠন করছে এবং তাদের স্থিতিস্থাপকতা পরীক্ষা করছে।
অন্যদিকে, দেশগুলো যখন এই রূপান্তরের পথে অগ্রসর হচ্ছে, তখন প্রধান অগ্রাধিকার হচ্ছে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ও আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং একসঙ্গে কাজ করে বৈশ্বিক অর্থনীতির স্বাভাবিক কার্যক্রম নিশ্চিত করা।
আরও পড়ুন
মূলধন সংরক্ষণে ব্যর্থ ব্যাংক খাত, অর্থনীতিতে অশনিসংকেত
ব্যাংক রেজুলেশন অর্ডিন্যান্স এবং ‘ব্রিজ ব্যাংক’
ব্যাংক দেউলিয়া হলে ২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবেন আমানতকারী
আইএমএফ প্রয়োজনে নির্দিষ্ট নীতি পরামর্শ, সক্ষমতা উন্নয়ন এবং অর্থায়নের মাধ্যমে তাদের সহায়তা করতে প্রস্তুত।
আইএমএফ বলেছে, সরকারগুলোকে আস্থার পুনরুদ্ধার ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে কঠোর আর্থিক সংস্কার নিতে হবে। অপচয় রোধ, করব্যবস্থার দক্ষতা বাড়ানো এবং শিক্ষা, অবকাঠামো ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগের ওপর জোর দিতে হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বিশ্বস্ত নীতি ও স্বাধীন প্রতিষ্ঠানই জনআস্থার মূল ভিত্তি।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা রক্ষায় সতর্কবার্তা
আইএমএফ স্পষ্টভাবে বলেছে, রাজনৈতিক চাপ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিকে দুর্বল করে, মুদ্রার মান কমায় ও মূল্যস্ফীতি বাড়ায়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘মৌলিক নীতি হলো—মুদ্রানীতির বিশ্বাসযোগ্যতা আস্থা তৈরি করে এবং ঋণের খরচ কমায়।’ কেন্দ্রীয় ব্যাংককে তার মূল লক্ষ্য—মূল্যস্থিতি রক্ষা—অবাধে বাস্তবায়নের সুযোগ দিতে হবে।
আইএমএফের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকে সতর্ক করা হয়েছে, নতুন বাণিজ্য শুল্ক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে কঠিন করে তুলতে পারে। সংস্থাটি বলেছে, বিনিময় হারকে বাজারের প্রাকৃতিক ভারসাম্য হিসেবে কাজ করতে দেওয়া উচিত এবং প্রয়োজনে সীমিত হস্তক্ষেপই যথেষ্ট।
আইএমএফ বলেছে, বৈশ্বিক ভারসাম্য রক্ষায় সকল দেশের যৌথ উদ্যোগ প্রয়োজন। উদ্বৃত্ত দেশগুলোকে ঘরোয়া চাহিদা বাড়াতে হবে এবং ঘাটতিপূর্ণ দেশগুলোকে রাজস্ব ঘাটতি কমাতে হবে।
‘শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান, বিশ্বাসযোগ্য নীতি ও স্বাধীন মুদ্রানীতি—এই তিনটিই বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার স্তম্ভ,’ প্রতিবেদনের উপসংহারে বলা হয়েছে।
আইএইচও/এমআরএম