প্রাথমিকের মেধা যাচাই পরীক্ষা নিয়ে ‘ধোঁয়াশা’
পরীক্ষা দিচ্ছে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা/ছবি সংগৃহীত
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পরীক্ষা আইনি জটিলতায় আটকে গেছে। কৌশলে এর নাম ‘মেধা যাচাই পরীক্ষা’ করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। তবে সেই কৌশলও কাজে লাগেনি। বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কয়েকজন অভিভাবকের করা রিটে ঝুলে গেছে মেধা যাচাই পরীক্ষা।
রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ মেধা যাচাই পরীক্ষা এক মাসের জন্য স্থগিত করেছেন। গত ১৭ ডিসেম্বর এ আদেশ দেওয়া হয়। তবে এ পরীক্ষা হবে, নাকি হবে না; তা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে জেলা-উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং শিক্ষকদের জানানো হয়নি।
ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও বিষয়টি অবগত নয়। তারা সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মেধা যাচাই পরীক্ষা স্থগিতের খবর দেখলেও নিশ্চিত হতে পারছেন না। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ শিক্ষক-অভিভাবকরা।
জানা যায়, ২১ থেকে ২৪ ডিসেম্বর পঞ্চম শ্রেণিতে বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাই পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সেভাবে প্রস্তুতিও নিয়েছেন। অনেক শিক্ষার্থী বার্ষিক পরীক্ষা শেষে এখনো পড়ার টেবিলে। কয়েক লাখ শিক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নিতে সারা বছর প্র্রস্তুতি নিয়েছে এবং এখনো নিচ্ছে।
কুষ্টিয়ার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আজম উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, পত্রিকায় খবর দেখেছি যে, হাইকোর্টে পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে। কিন্তু আমরা সবসময় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের চিঠি, আদেশ ও পরিপত্র অনুসরণ করি। এখনো অধিদপ্তর বা মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কিছু জানানো হয়নি। আমরাও শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের কিছু জানাতে পারিনি। এ নিয়ে সবার মধ্যে ধোঁয়াশা।
শুধু শিক্ষক নয়, প্রাথমিকের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তারাও বিষয়টি অবগত নয়। অনেক কর্মকর্তা আদালতের নির্দেশের পর অধিদপ্তরে যোগাযোগ করে জেনেছেন পরীক্ষা হবে না। তবে কোনো লিখিত চিঠি বা আদেশ নেই তাদের কাছে।
আরও পড়ুন
আন্দোলন করা অসংখ্য প্রাথমিক শিক্ষককে ভিন্ন জেলায় বদলি
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শীতকালীন অবকাশ শুরু, কোথায় কতদিন ছুটি
ঢাকার সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ এন এম মাহবুব আলম জাগো নিউজকে বলেন, গত ১৭ ডিসেম্বর তারিখে হাইকোর্ট আদেশ দেন। এরপর চিঠি বা কোনো আদেশ না পেয়ে আমরা অধিদপ্তরে যোগাযোগ করেছিলাম। অধিদপ্তর জানিয়েছে পরীক্ষা নেওয়া যাবে না। তারা এটা নিয়ে চিঠি বা আদেশ পাঠাবেন। তবে এখনো আমরা পাইনি।
তিনি বলেন, যেহেতু মৌখিকভাবে আমরা জেনেছি পরীক্ষা নেওয়া যাবে না, তাই নেবো না। পরীক্ষার প্রশ্নপত্রসহ সবই আমাদের কাছে আছে। কিন্তু আদালতের নির্দেশের কারণে পরীক্ষাটা নেওয়া যাচ্ছে না।
বিষয়টি নিয়ে জানতে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, অতিরিক্তি মহাপরিচালক, দুজন পরিচালকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তবে পলিসি অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে অধিদপ্তর বেকায়দায় পড়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা নিতে না পারলে নতুন শিক্ষাবর্ষে পরীক্ষা নেওয়াটা ঝামেলাপূর্ণ হবে।
আদেশ বা চিঠি না পাঠানোর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরীক্ষা হবে নাকি একেবারে বাতিল ঘোষণা করা হবে; সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর। সেজন্য বুধ ও বৃহস্পতিবার কর্মদিবস থাকলেও চিঠি ইস্যু করা হয়নি। হয়তো পরীক্ষাটা বাতিলও হতে পারে। সেক্ষেত্রে পরীক্ষার অপেক্ষায় থাকা শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ হতে পারেন। এজন্য অধিদপ্তর চুপ রয়েছে। ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত জানানো হতে পারে।
এএএইচ/বিএ