মামা বাড়িতে সমাহিত চিত্রনায়িকা বনশ্রী
বনশ্রী
চিত্রনায়িকা বনশ্রীকে মাদারীপুরের মামা বাড়িতে সমাহিত করা হয়েছে। আজ (১৬ সেপ্টেম্বর) বাদ মাগরিব তার জানাজা সম্পন্ন হয়। এরপর মামা পান্নু মাদবরের বাড়ি শিবচর উপজেলার পল্লি কুমেরপাড় এলাকায় পারিবারিক কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়।
বনশ্রী আজ (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মারা যান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস, কিডনি সমস্যা, হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপসহ নানা রোগে ভুগছিলেন।
নব্বই দশকের জনপ্রিয় নায়িকা বনশ্রীর শেষ সময় কেটেছে গুচ্ছগ্রামে। অভাব-অনাটন আর বিভিন্ন রোগে জীবনে নেমে এসেছিল চরম দুর্ভোগ। মানুষজনের কাছ থেকে হাত পেতে কিনতে হয়েছে ওষুধ ও খাবার। অনেক সময় না খেয়েও থেকেছেন এক সময়ের পর্দা কাঁপানো নায়িকা বনশ্রী।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তার পুরো নাম সাইনা শিকদার বনশ্রী। ১৯৭৪ সালের ২৩ আগস্ট জন্ম। মাদারীপুরের শিবচর পৌরসভার গুয়াতলা এলাকার মজিবর শিকদার ও সবুরজান রিনা বেগমের ঘরে এই নায়িকার জন্ম। দীর্ঘদিন সিনেমা জগতে অভিনয় করার পর শেষ সময়ে অভাবের মধ্যে দিন কাটে তার। একসময় ঢাকার বস্তিতে থেকেছেন। সংসার চালানোর জন্য রাস্তায় ফুল ও বই বিক্রি করতেন। পরে শিবচর উপজেলার মাদবরেরচরের সরকারি আশ্রয়ণ কেন্দ্রে থাকেন তিনি। দুর্দিনে বনশ্রীর পাশে কোনো আত্মীয়স্বজনও পাশে ছিলেন না। বরিশালের পারভেজ খান নামের একজনের সাথে বিয়ে হয়। সেই স্বামীও প্রায় ১৩ বছর আগে তাদের ছেড়ে চলে যান। কয়েক বছর আগেই বড় মেয়ে নিখোঁজ হন।
এরপর একমাত্র ছেলে মেহেদি হাসানকে সঙ্গে নিয়ে শিবচরের গুচ্ছগ্রামেই থাকতেন। একটি সেলাই মেশিন দিয়ে দর্জির কাজ করে আয় করার চেষ্টা করেছেন। কখনো কখনো গান গেয়েও মানুষজনদের বিনোদন দিয়ে আয় করার চেষ্টা করেছেন তিনি। এক সময় স্বপ্ন দেখতেন ছেলেকে ডাক্তার বানাবেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হয়নি।
আরও জানা যায়, শিবচরের গুচ্ছগ্রামের নিজ ঘরে দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস, কিডনি সমস্যা, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপসহ নানান রোগে ভুগছিলেন। খেয়ে না খেয়ে কোনোভাবে দিন কাটিয়েছেন তিনি। হঠাৎ গত পাঁচদিন আগে অসুস্থ হয়ে পড়লে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয় তাকে। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

- আরও পড়ুন:
- ধর্ম ত্যাগ করে বিয়ে, সেই স্বামীও ছেড়ে গিয়েছিলেন নায়িকা বনশ্রীকে
- একসময়ের সুপারহিট নায়িকা বনশ্রী যেভাবে নিঃস্ব হয়েছিলেন
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, নব্বই দশকে মমতাজ আলীর পরিচালনায় সোহরাব রুস্তম সিনেমায় নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের নায়িকা হন বনশ্রী। এই ছবি করে তুমুল জনপ্রিয় হন তিনি। এরপর একই বছরে ১৯৯৬ সালে মুক্তি পায় তার দ্বিতীয় সিনেমা ‘মহাভূমিকম্প’। এরপর ‘নেশা’, ‘ভাগ্যের পরিহাস’সহ অনেক সিনেমায় একাধিক নায়কের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। চলচ্চিত্রকার ফারুক ঠাকুরের মাধ্যমে সিনেমার জগতে আসেন বনশ্রী। একটি মামলায় ফারুক ঠাকুর গ্রেফতার হলে এ নায়িকার বিরুদ্ধে নানান কথা রটে। ধীরে ধীরে তার থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিতে থাকেন প্রযোজকরা। এরপর থেকেই শুরু হয় এই নায়িকার কষ্টের জীবন।
স্থানীয় বাসিন্দা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বনশ্রীকে ছোট্ট সময়ে সিনেমার পর্দায় দেখতাম। পরে শিবচরের গুচ্ছগ্রামে নিজ চোখে দেখেছি। কিন্তু তার শেষ সময় খুব অভাব আর কষ্টের মধ্যে কেটেছে। অনেক সময় না খেয়েও থেকেছেন। অন্যের কাছে চেয়েও টাকা সংগ্রহ করে ওষুধ কিনতেন।
আয়শা সিদ্দিকা আকাশী/এমএমএফ/এএসএম