ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ফিচার

মা দিবস

তাকে উৎসর্গ করি না, অনুভব করি প্রতিদিন

জান্নাত শ্রাবণী | প্রকাশিত: ০৮:১৭ এএম, ১১ মে ২০২৫

“দেখতে দেখতে আমার মায়ের ২৭ বছর পেরিয়ে গেছে। এইতো আর কয়েকদিন পরই আমি আর মা পা রাখবো ‘২৮’ এ। মা-মেয়ে দুজনে একসঙ্গে নতুন বছরের কেক কাটবো।” অনেকেরই মনে প্রশ্ন জাগতে পারে মা-মেয়ের বয়স একই হয় কীভাবে? বিষয়টা খুব সহজ। যেদিন আমার জন্ম সেদিন আমার মা ও এক নতুন জীবন পেয়েছেন।

আমার জন্মের আগ পর্যন্ত মা ছিলেন কারও মেয়ে, কারও বোন, কারও প্রেমিকা বা স্ত্রী। কিন্তু আমার জন্মের পর আমার মায়ের কেন্দ্রবিন্দু পাল্টে গেছে। তখন তিনি শুধু একজন মা। নিজের স্বপ্ন, শখ, ভালো লাগা সব কিছু একপাশে সরিয়ে সন্তানই হয়ে ওঠে তার জীবনের মূল লক্ষ্য। সন্তানকে ঘিরেই আবর্তিত হয় তার সময়, চিন্তা, উদ্বেগ এবং ভালোবাসা।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

একজন সন্তানের জন্য সবকিছুই শেখার প্রথম পাঠশালা মা। শব্দ শেখা, হাঁটতে শেখা, খেতে শেখা, ভালোবাসতে শেখা; সব কিছু শুরু হয় মায়ের হাত ধরেই। এই শিক্ষা চলতেই থাকে ধাপে ধাপে, জীবনের প্রতিটি বাঁকে। মায়ের হাত ধরে মানুষ শুধু পৃথিবীর মুখ দেখে না, দেখে স্বপ্ন, ভালোবাসা ও জীবনের রূপ।

একটা সময় আসে, যখন আমরা বড় হয়ে উঠি, নিজের জীবন, ক্যারিয়ার, সম্পর্ক, বন্ধুত্ব সব নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। সময়ের আবর্তে আমরা ভুলে যাই সেই মুখটাকে, যে আমাদের জন্য রাত জেগে বসেছিল, যে আমাদের প্রতিটি পরীক্ষা বা সাক্ষাৎকারের দিন ভোরে উঠে দোয়া পড়েছিল। কিন্তু মা তখনো অপেক্ষায় থাকেন। হয়তো তিনি ফোন করেন না বারবার, বিরক্ত হতে পারেন জেনে। হয়তো তিনি চ্যাটে মেসেজ করেন না, জানেন আপনি কাজ নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু তার প্রতিদিনের প্রার্থনায় আপনার নামটা থাকে। প্রতিটি রাত তার শুরু আর শেষ হয় আপনার খোঁজে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

আমরা অনেক কিছু বলি বন্ধুদের, প্রেমিকাকে, সহকর্মীকে। কিন্তু মাকে বলতে খুব কম সময়ই হয়। ‘ভালোবাসি’, ‘তোমাকে মিস করি’, ‘তুমি ছাড়া কিছুই হইনি আমি’-এই কথাগুলো যেন তাকে বলতে কেমন একটা সংকোচ লাগে। অথচ এই মানুষটাই আমাদের সবচেয়ে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা দিয়েছেন, বিনিময়ে কিছু চাননি কখনো।

আজ ‘মা’ কে উৎসর্গ করার বিশেষ একটি দিন। মাকে ভালোবাসার জন্য কোনো দিনের প্রয়োজন নেই। আর একদিন উদযাপন করারও কিছু নেই। তবে ওই যে মা কে কখনো যে ভালোবাসার কথা জানানো হয়ে উঠেনি সেটি জানানোর জন্য এ দিনটিকে বেছে নেওয়া খারাপ কিছু নয়। মা দিবসে একটি ফুল দিয়ে বা একটি ফোন করে এই না বলা কথাগুলো বলাটা খারাপ কি?

বিজ্ঞাপন

অনেকে ভাবেন, মা দিবসে একটি উপহার বা একটা শুভেচ্ছা বার্তাই যথেষ্ট। কিন্তু একজন মা হয়তো তার সন্তানের কাছ থেকে শুধু একটু সময়ই চায়। হয়তো সে চায় সন্তানের হাতে তৈরি একটি চিঠি, একটি গান, একটি কবিতা। অনেক সময় একজন মায়ের জন্য সবচেয়ে বড় উপহার হতে পারে তার সন্তানের সাফল্য কিংবা তার প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা প্রকাশ।

তাই মা দিবসে একটি ফোন, একটি আলিঙ্গন, কিংবা সারা দিন মায়ের পাশে থেকে তাকে হাসানোর চেষ্টা করাই হতে পারে সবচেয়ে বড় উদযাপন।

তবে সন্তান হিসেবে দায়িত্বটা কি শুধু জন্মদিন আর মা দিবসে? না। আমাদের দায়িত্ব শুধু একটা উপহার বা একটা স্ট্যাটাস নয়। আমাদের দায়িত্ব হলো মাকে বোঝা, সময় দেওয়া, শুনে নেওয়া তার না বলা কথাগুলো। হয়তো তিনি এখন খুব ছোট কিছু চাওয়ার জন্যও দ্বিধায় থাকেন। হয়তো তিনি আপনার সাফল্যে গর্বিত, কিন্তু আপনাকে জড়িয়ে ধরে বলেন না। এই চুপচাপ ভালোবাসার মানুষটাকে আমরা যতটা সময় দিই, ততটাই তিনি খুশি হন। কখনো এক কাপ চা বানিয়ে মায়ের সঙ্গে গল্প করতে বসলে দেখবেন, কত গল্প জমে আছে তার ভেতরে।

বিজ্ঞাপন

আজকাল অনেকেই ব্যস্ততার কারণে বৃদ্ধ বয়সে মাকে অবহেলা করেন, বৃদ্ধাশ্রমে পাঠান বা পরিবারের মূল সিদ্ধান্তগুলো থেকে তাকে দূরে রাখেন। অথচ জীবনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে মা ছিলেন, চোখের পানি মুছিয়ে সাহস জুগিয়েছেন। মা দিবসে আমাদের ভাবা উচিত, আমরা কী সত্যিই সেই মানুষটির যথাযথ সম্মান দিচ্ছি?

একটি সমাজে একজন মায়ের মূল্যায়ন যদি শুধু মা দিবসেই সীমাবদ্ধ থাকে, তবে তা সমাজের ব্যর্থতা। আমাদের প্রতিদিনের জীবনে মায়ের অধিকার, সম্মান ও ভালোবাসার যথাযথ প্রতিফলন ঘটাতে হবে।

মা দিবস হোক উপলক্ষ। কিন্তু ভালোবাসাটা হোক প্রতিদিনের। আপনার ব্যস্ত জীবনে হয়তো সময় খুব কম, কিন্তু দিনে একবার ‘মা, তুমি কেমন আছো?’ জিজ্ঞাসা করতে তো খুব বেশি সময় লাগে না। একটা ছোট বার্তা, একটা ফোনকল এইটুকুতেই মা পেয়ে যান তার জগত।

বিজ্ঞাপন

টেলিভিশন, সোশ্যাল মিডিয়া, বিজ্ঞাপন সব জায়গায় মা দিবসে জমকালো আয়োজন দেখা যায়। এমনকি আজকাল মা দিবস মানেই সোশ্যাল মিডিয়ার এক অসুস্থ প্রতিযোগিতা। কার মায়ের সঙ্গে কার ছবি বেশি লাইক পায়, কে বেশি আবেগি ক্যাপশন লিখতে পারে। অথচ মা তো জানেন না এই লাইক-কমেন্টের কিছুই। তিনি জানেন আপনি কেমন আছেন, খেয়েছেন কিনা, মন খারাপ নাকি ভালো। মা দিবস যদি শুধুই একদিনের আবেগ হয়, তাহলে সেটা মা শব্দটার সঙ্গে কিছুটা অন্যায়ই বটে। মা দিবস মানে হওয়া উচিত প্রতিদিন মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার উপলক্ষ।

তাকে উৎসর্গ করি না, অনুভব করি প্রতিদিন। কারণ মা হচ্ছেন সেই আলো, যিনি ছায়ায় দাঁড়িয়ে থেকেও আমাদের পথ দেখিয়ে দেন। চোখে না পড়লেও তিনি আছেন, ছিলেন, থাকবেন।

জেএস/এএসএম

বিজ্ঞাপন