ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ফিচার

আন্তর্জাতিক জনসেবা দিবস

মানুষের জন্য কিছু করাই প্রকৃত জনসেবা

মামুনূর রহমান হৃদয় | প্রকাশিত: ০৩:২৩ পিএম, ২৩ জুন ২০২৫

জনসেবা মানে কেবল সরকারি চাকরির কর্তব্য পালন নয়, বরং এটি হলো মানুষের জন্য, সমাজের জন্য, দেশের জন্য নিরলসভাবে কিছু করে যাওয়ার চেষ্টা। সমাজে অনেকেই আছেন যারা কোনো পদ-পদবির পেছনে না ছুটে নিয়মিত মানুষের উপকারে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। জনসেবা এমন একটি কাজ, যা ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত সব প্রেক্ষাপটেই দায়িত্বের সঙ্গে করা সম্ভব।

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে যদি দেখি, তবে জনসেবা মানেই হলো সৃষ্টির সেবা। ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ বা খ্রিস্ট সব ধর্মেই মানুষের সেবাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কেউ অসুস্থ, ক্ষুধার্ত বা বিপদে পড়লে তাকে সাহায্য করাই ধর্মের মূল শিক্ষা। রোজার মাসে ইফতার বিতরণ, শীতকালে গরম কাপড় দেওয়া, অসহায়দের জন্য জাকাত বা সদকা দেওয়া এসবই ধর্মীয় প্রেরণায় জনসেবার দৃষ্টান্ত।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

সামাজিকভাবে জনসেবা করা যায় নানা উপায়ে। সমাজের দরিদ্র শিশুদের বিনা পয়সায় পড়ানো, পথশিশুদের জন্য খাবার বিতরণ, এলাকায় গাছ লাগানো বা পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করা এসব উদ্যোগ সমাজকে শুধু সুন্দর করে না, বরং নতুন প্রজন্মকে দায়িত্ববান করে তোলে। অনেকেই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে রক্তদান ক্যাম্প করেন, হুইলচেয়ার বা ওষুধ বিতরণ করেন, এমনকি আত্মহত্যা প্রতিরোধে কাউন্সেলিং করেন। এসবই জনসেবার পরিধিকে বিস্তৃত করে।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও জনসেবার বিশাল সুযোগ আছে। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে এলাকার রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা বা শিক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা চিহ্নিত করে জনপ্রতিনিধিদের জানানোর মধ্য দিয়েও বড় ভূমিকা রাখা যায়। যুবসমাজকে কর্মসংস্থানের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া, এলাকায় মাদক বিরোধী প্রচারণা চালানো কিংবা তরুণদের নেতৃত্ব গড়ে তোলার চেষ্টা করাও একটি শক্তিশালী জনসেবা। এমনকি ছোট একটি প্রতিবাদ সভাও যদি গরিব কৃষকের ন্যায্য দামের দাবিতে হয়, তাও একটি জনসেবামূলক কাজ।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

এ যুগে প্রযুক্তির মাধ্যমে জনসেবা আরও সহজ হয়েছে। কেউ কেউ অনলাইনে মানুষের সাহায্য চেয়ে ক্রাউডফান্ডিং করছেন, আবার কেউ ফেসবুক বা ইউটিউবে সমাজ সচেতনতামূলক ভিডিও বানিয়ে গরিবদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। কেউ আবার গুজব বা ভুয়া খবর ঠেকাতে নির্ভরযোগ্য তথ্য প্রচারে ব্যস্ত। একজন প্রোগ্রামার স্থানীয় হাসপাতালের অবস্থান বা জরুরি নম্বর দিয়ে হেল্পলাইন অ্যাপ বানাতে পারেন, এটিও জনসেবা। আবার সাংবাদিকরাও সমাজের সমস্যা তুলে ধরে যেভাবে জনমত গড়ে তোলেন, তাও এক ধরনের জনসেবা।

মূলত জনসেবা করার জন্য বড় কোনো সুযোগের অপেক্ষা করতে হয় না। প্রতিদিনের ছোট ছোট কাজ দিয়েই আমরা এটি শুরু করতে পারি। বাসে একজন বৃদ্ধকে বসার জায়গা ছেড়ে দেওয়া, প্রতিবেশীর অসুস্থতার খোঁজ নেওয়া, দরিদ্র শিক্ষার্থীকে একটি বই উপহার দেওয়া, কিংবা রাস্তার কুকুরকে খাবার দেওয়া সবকিছুই মানুষের প্রতি দয়া ও সহানুভূতির প্রকাশ, যা একজন নাগরিক হিসেবে আমাদের সামাজিক দায়িত্বও। তাই পদ-পদবি নয়, মন-মানসিকতাই একজনকে প্রকৃত জনসেবক করে তোলে।

বিজ্ঞাপন

আজ ২৩ জুন, আন্তর্জাতিক জনসেবা দিবস। এই দিনে আমরা শ্রদ্ধা করি সেইসব মানুষকে, যারা নিরবচ্ছিন্নভাবে সমাজ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন। কখনো সরকারি পদে থেকে কিংবা কখনো নিঃস্বার্থ এক স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে। এই দিবস আমাদের শেখায়, মানবিকতার চেয়ে বড় কোনো কর্তব্য নেই। একজন শিক্ষার্থী, একজন কৃষক, একজন সাংবাদিক কিংবা একজন সাধারণ পথচারী যে কেউ তার অবস্থান থেকে সমাজের জন্য কিছু না কিছু করতে পারে। প্রয়োজন শুধু সচেতনতা, সদিচ্ছা ও মানবিক মনোভাব। তাই আজকের এই দিনে আমরা প্রতিজ্ঞা করি, মানুষকে ভালোবাসব, পাশে দাঁড়াব, আর জনসেবাকে নিজের জীবনের অংশ হিসেবে গড়ে তুলব।

আরও পড়ুন

কেএসকে/এমএস

আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন