ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ফিচার

ডিজিটাল যুগেও সিডি-ডিভিডির দোকান চালান, ক্রেতা দুবাইয়ের শেখ

ফিচার ডেস্ক | প্রকাশিত: ১২:৫৩ পিএম, ২৪ জুলাই ২০২৫

জীবন পাল

সময়ের পালাবদলে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় নব্বই দশকের রমরমা সিডি-ডিভিডি ক্যাসেটের বাজার যেখানে এখন অতীত, বিলুপ্তপ্রায়। সেই সিডি-ডিভিডির ব্যবসায় এখনো টিকিয়ে রেখেছেন সিলেটের তারেক আহমেদ। শুধু টিকিয়ে নয়, এই ব্যবসা পরিচালনা করেই তুলছেন দোকান খরচ, চালাচ্ছেন সংসার।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

২০০২ সাল থেকে লতিফ সেন্টারের ২য় তলার ২১৮ নম্বর দোকানে তিনি এই ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দোকান ছোট হলেও, নব্বই দশকে তার মামাতো ভাই লিটন আহমেদ পরিচালনা করার সময় এই দোকান ছিল অনেক বড়। তখন ২য় তলার আশেপাশের সব দোকানই ছিল এই সিডি-ডিভিডি ও অডিও ক্যাসেটের।

মামাতো ভাই লিটন লন্ডন পাড়ি জমানোর পর থেকেই এই দোকান পরিচালনা করে আসছেন তারেক। আশপাশের ক্যাসেটের দোকানগুলো নেই। সেখানে এখন গড়ে উঠেছে সেলুন, কসমেটিকস, ইলেক্ট্রনিক্সসহ বিভিন্ন পণ্যের দোকান। অথচ দুই যুগ পাড়ি দেওয়া সিডি-ডিভিডি ক্যাসেটের পুরোনো সেই দোকানই স্বযত্নে আগলে রেখেছেন তারেক।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

বিলুপ্তপ্রায় সিডি-ডিভিডি ক্যাসেটের যুগে এসেও কোভিড-১৯ পরিস্থিতির আগ পর্যন্ত ভালোই বেচাকেনার কথা জানালেন তিনি। কোভিড-১৯ এর পর বেচাকেনা আগের তুলনায় কমেছে বলেও জানান। তবে চলতি জুলাই-আগস্টে ভালো বেচাকেনার আশাবাদি তিনি।

ডিজিটাল যুগেও সিডি-ডিভিডির দোকান চালান, ক্রেতা দুবাইয়ের শেখ

বিজ্ঞাপন

আগে যে ডিভিডি ৬০ টাকায় বিক্রি করতেন এখন সেটা বিক্রি করতে হচ্ছে ৯০ টাকায়। একইভাবে ৫০ টাকার ভিডিও সিডি (রেকর্ডিং) ১৫০ টাকায়, ৫০ টাকার অডিও সিডি ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে ৩০ টাকার অডিও ক্যাসেট-৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এই দোকানে। এছাড়া আগের দিনের ভিসিআর থেকে ডিভিডি রেকর্ড করছেন ১৫০০ টাকায়। এখনো এই দোকানে লাখ টাকারও বেশি সিডি-ডিভিডির ক্যাসেট আছে বলে জানান তারেক। এখনো প্রতি ২ মাস পর পর ১০ হাজার টাকার ডিভিডি ক্যাসেট দোকানে তুলতে হয় বলেও জানান তিনি।

মেমোরি কার্ডের যুগেও কারা কিনছেন সিডি-ডিভিডি! দোকানের মালিক তারেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এখনো সিটি ডিভিডি ক্যাসেটের চাহিদা আছে লন্ডন প্রবাসী সিলেটিদের কাছে। যারা দেশে আসলে তাদের পছন্দ প্রিয় শিল্পীর গানের সিডি-ডিভিডি কিনে নিয়ে যান। লন্ডনে তাদের বাসাবাড়ি এবং গাড়িতে এসব বাজান। দেশে আসলে একেকজন ১৫-২০ টা করে ক্যাসেট কিনে নিয়ে যান। জুন-জুলাই-আগস্ট এই ৩ মাস লন্ডন প্রবাসীদর আসা যাওয়া বেশি থাকে। সেজন্য বিক্রিটাও বেড়ে যায়। বিশেষ করে দেশে আসা বয়স্কদের কাছে এখনো সিডি-ডিভিডি ক্যাসেটের চাহিদা রয়েছে।

শুধু লন্ডন প্রবাসী না, সিলেটের দূর-দূরান্তের অনেক এলাকার মানুষ এই দোকানের নিয়মিত ক্রেতা। কেউ ক্যাসেট কিনতে আসেন তার গাড়িতে বাজানোর জন্য, কেউবা বাড়িতে থাকা সিডি-ডিভিডিতে বাজিয়ে শোনার জন্য। তবে তরুণ প্রজন্মের চাইতে বয়স্কদের কাছে এসব সিডি-ডিভিডি ক্যাসেটের চাহিদা রয়ে গেছে। কোরআন তেলওয়াত, বাংলা গজল এবং বাউল গানের ক্যাসেটের বেশি চাহিদা থাকে।

বিজ্ঞাপন

পুরোনো ক্যাসেট বিক্রেতা তারেকের মতে, ‘কিছু বান্ধা কাস্টমার আছে। যারা এখনো আসেন। তবে কখনো ২-৩ সপ্তাহে একটা ক্রেতার দেখা পাওয়া যায় না, আবার কখনো সারা সপ্তাহেই ক্রেতার আসা যাওয়া চলতে থাকে, চলতে থাকে বেচাকেনাও।’

ডিজিটাল যুগেও সিডি-ডিভিডির দোকান চালান, ক্রেতা দুবাইয়ের শেখ

ফেলে আসা দিনের ক্যাসেট ব্যবসা নিয়ে তারেক বলেন, ‘এই দোকানটি ৯০ দশকের। তখন ক্যাসেটের বাজার রমরমা ছিল। ২০০৫ সালের দিকে জমজমাট ছিল। দৈনিক দেড় লাখ টাকাও বেচাকেনা হতো। লাভের পরিমাণ কম হলেও বিক্রি ছিল অনেক বেশি। সকাল ১০টায় দোকান খুলললেও ক্যাসেট কেনার জন্য কাস্টমার লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতেন। আর ঈদের সময় দম ফেলার সুযোগ থাকতো না। সকাল পর্যন্ত কাস্টমারের আসা যাওয়া ছিল, বেচাকেনা চলতো। লন্ডন প্রবাসীদের একেকজন ২০ পাউন্ডে ২০ টা ডিভিডি ক্যাসেট কিনে নিয়ে যেত। কারণ তখন লন্ডনে ১ টা ডিভিডি ক্যাসেট কিনতে তাদের ২০ পাউন্ড লেগে যেতো। সেই হিসেবে দেশে এসে ক্যাসেট কেনাটা তাদের কাছে লাভের ছিল। সেই সময় কোনো সিনেমা, গানের ক্যাসেট বাজারে আসামাত্র সংগ্রহ করাটাও একটা প্রতিযোগিতা ছিল। হোক সেটা বিদেশি কিংবা দেশি। সবার আগে সিনেমা দেখা, ক্যাসেট সংগ্রহ করার মধ্যে যেমন আগ্রহ ছিল, তেমনি ছিল আনন্দও। তবে হঠাৎ করে সিডি-ডিভিডি ক্যাসেটের ব্যবসা যে এরকম তলানিতে নেমে যাবে তা কল্পনা বাইরে’।

বিজ্ঞাপন

সিলেটের তারেক আহমেদের ভিডিও গ্যালারির ডিভিডি ক্যাসেটের এক কাস্টমার দুবাইয়ের শেখ। যিনি বছরে ২ বার তার ফাউন্ডেশনের কাজে সিলেট আসেন। ২০-২২ দিন থাকেন। যাওয়ার সময় এসব ক্যাসেট কিনে নিয়ে যান। যার মধ্যে থাকে গান, সিনেমার ডিভিডি। তারেক যেমন রাজধানী ঢাকা থেকে সিডি-ডিভিডি সংগ্রহ করেন। ঠিক তেমনি প্রয়োজনে ঢাকার কয়েকজন ব্যবসায়ীও তার থেকে ক্যাসেট সংগ্রহ করে থাকেন।

কেএসকে/এএসএম

আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন