নিঃশব্দ এক বিপ্লবী শাকিরের বৃক্ষ ভালোবাসার গল্প
মো. লিয়াকত আলী
২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর, প্রিয় এক মানুষের জন্মদিনে উপহার হিসেবে হাতে নিলেন ১৩টি কদম চারা। হ্যাঁ, ঠিক তখনই শুরু হয়েছিল শাকির নামের এক তরুণের এক অন্যরকম পথচলা। যা ছিলো নিছক কোনো বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি নয়, বরং প্রকৃতির প্রতি এক অদম্য প্রেম, একটি গভীর দায়বোধ, আর মানবতার নিঃস্বার্থ এক চর্চা।
সেই শুরুটা আজ গড়িয়েছে ১২ বছরের দীর্ঘ যাত্রায়। এই সময়ে তিনি একাই রোপণ করেছেন প্রায় ৩৪ হাজার ৯৫টি গাছ। যা কেবল সংখ্যা নয়, প্রতিটিই যেন একটি প্রাণ, একটি স্বপ্ন, একটি ভবিষ্যৎ।
শাকিরের গাছ লাগানোর স্থানগুলো যেমন বিচিত্র, তেমনি মানবিক। স্কুল মাঠ, মাদ্রাসা প্রাঙ্গণ, কবরস্থান, রাস্তাঘাট, পাহাড়ি এলাকা, কৃষিজমি কিংবা সাধারণ মানুষের আঙিনা। তিনি বিশ্বাস করেন, ‘গাছ লাগানো মানেই কেবল পরিবেশ রক্ষা নয়, এটি হলো এক মহান মানবিক দায়িত্ব।’
তার লাগানো গাছগুলো শুধু অক্সিজেন দেয় না- দেয় ছায়া, দেয় ফল, পাখির আবাসস্থল, আর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাঁচার নতুন পথ। এমনকি তিনি নিয়ম করে গাছগুলোর খোঁজও রাখেন, পরিচর্যার জন্য নিজের উপার্জন থেকে ব্যয় করেন অর্থ ও সময়। তার লাগানো গাছগুলো এখন বড় হয়ে ছায়া দিচ্ছে পথচারীকে, অক্সিজেন দিচ্ছে অসংখ্য প্রাণীকে, আর আশার বার্তা দিচ্ছে তরুণ সমাজকে।
শুধু গাছ লাগালেই হবে না, সেই গাছকে বড় করতে হবে দায়িত্ব আর ভালোবাসায়- এই বাক্যটি শুধু কথার জোর নয়, শাকিরের জীবনদর্শনের বাস্তব অনুশীলন।
সিলেটের শাহ সিকান্দার শাকির বর্তমানে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল সিলেটে সহকারী হিসাবরক্ষক পেশায় জড়িত হলেও, তার আসল পরিচয় সে একজন ‘সবুজ যোদ্ধা’। সে কারো প্রশংসা বা পুরস্কারের আশায় নয়, বরং একান্ত আত্মতৃপ্তির জন্য প্রকৃতির পাশে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমি চাই এমন একটি পৃথিবী রেখে যেতে, যেখানে আমার পরবর্তী প্রজন্ম নিঃশ্বাস নিতে পারবে স্বস্তিতে, যেখানে গাছেরা থাকবে মানুষের বন্ধু হয়ে।’
শাকিরের এই নিঃস্বার্থ কর্মযজ্ঞ এখন ছড়িয়ে পড়ছে সমাজে, তরুণদের অনুপ্রেরণা দিচ্ছে। কেবল ব্যক্তি নয়, প্রতিষ্ঠান, স্কুল, কলেজ এমনকি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনও তাকে অনুসরণ করছে। একটি গাছের চারা দিয়ে শুরু হওয়া এই সবুজ বিপ্লব একদিন হয়তো বদলে দেবে আমাদের ভাবনার পথ, রচনা করবে একটি টেকসই ভবিষ্যৎ। কারণ এক শাকির জেগে উঠলেই গাছেরা হাসে, ছায়া দেয়-আর পৃথিবীটা হয়ে ওঠে একটু বেশি বাসযোগ্য।
কেএসকে/জেআইএম