ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ফিচার

যে কারণে শরতের দুর্গাপূজা এবার হেমন্তে

ডা. হিমেল ঘোষ | প্রকাশিত: ০৮:১৫ এএম, ১৮ অক্টোবর ২০২০

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে অন্যতম প্রধান ও পবিত্র একটি ধর্মানুষ্ঠান হলো দুর্গাপূজা তথা শারদীয় দুর্গোৎসব। দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার আরাধনাকে ঘিরেই আবর্তিত হয় সনাতন হিন্দু সমাজের প্রাণের এ দুর্গোৎসব। দেবী দুর্গার এ উপাসনা ও ধর্মীয় আচার সমগ্র হিন্দুসমাজেই প্রচলিত। তবে বাঙালি হিন্দু সমাজে এটি অন্যতম বিশেষ ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব হিসাবে পরিগণিত। এ ছাড়াও ওড়িশা, মৈথিলী, অসমীয়া প্রভৃতি সমাজেও এটি অন্যতম প্রধান ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক উৎসব।

সাধারণত আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন পর্যন্ত শারদীয়া দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এ পাঁচ যথাক্রমে ‘দুর্গাষষ্ঠী’, ‘মহাসপ্তমী’, ‘মহাষ্টমী’, ‘মহানবমী’ ও ‘বিজয়াদশমী’ নামে পরিচিত। আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষকে বলা হয় ‘দেবীপক্ষ’। দেবীপক্ষের সূচনার অমাবস্যাটির নাম মহালয়া। মহালয়ার দিন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তর্পণ করে তাদের পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধানিবেদন করে এবং ভোরে মহালয়ার ঘট স্থাপন, বিশেষ পূজা আর মন্দিরে মন্দিরে শঙ্খের ধ্বনি ও চণ্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে দেবীকে আবাহন জানানো হয় মহালয়ার এ তিথিতে।

আর দেবীপক্ষের শেষ দিনটি হলো কোজাগরী পূর্ণিমা। এদিন দেবী লক্ষ্মীর পূজা-অর্চনা করা হয়। কোনো কোনো স্থানে পনেরো দিন ধরেও শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপিত হয়। সেক্ষেত্রে মহালয়ার আগের নবমী তিথিতে পূজা শুরু হয়। পশ্চিমবঙ্গের বিষ্ণুপুর শহরের মৃন্ময়ী মন্দির এবং অনেক পরিবারে এ রীতি প্রচলিত রয়েছে। আবার চৈত্র মাসের শুক্ল পক্ষেও দেবী দুর্গা পূজিত হন। চৈত্র মাসে অনুষ্ঠিত এ দুর্গাপূজা ‘বাসন্তী দুর্গাপূজা’ নামে পরিচিত। তবে শারদীয় দুর্গাপূজারই জনপ্রিয়তা বেশি।

সাধারণত মহালয়ার ছয় দিন পরই হয় দেবী দুর্গার বোধন। সেভাবেই সনাতন ধর্মাবলম্বীগণ পূজার প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন। কিন্তু এ বছর ১৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় মহালয়া। তার ৩৫ দিন পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মহাষষ্ঠী। অর্থাৎ এ বছর দেবীর বোধন হবে আগামী ২২ অক্টোবর। পঞ্জিকামতে, মহালয়ার প্রায় একমাস পর দুর্গাপূজার কারণ হলো দুটি অমাবস্যাই এবার একইমাসে পড়েছে। আর সেজন্যই এবার দুর্গাপূজা প্রায় একমাস পিছিয়ে আশ্বিনের জায়গায় কার্তিক মাসে তথা হেমন্তকালে হবে।

শাস্ত্রমতে, একই মাসে দুটি অমাবস্যা থাকলে তাকে মলোমাস বলে। দুটি অমাবস্যা থাকায় ১৪২৭ বঙ্গাব্দের আশ্বিন মাস হলো মলোমাস। মলোমাসে কোনো পূজা অনুষ্ঠিত হয় না। শুধু পূজাই নয়, কোনো শুভ অনুষ্ঠানও মলোমাসে করা যায় না। স্বাভাবিক নিয়মে পিতৃপক্ষ শেষ হওয়ার পরই দুর্গাপূজা শুরু হতো, কিন্তু এ বছর তা আর হচ্ছে না। কারণ পিতৃপক্ষ শেষ হওয়ার পরই আশ্বিন মাসের অধিকমাস বা মলোমাস শুরু হয়েছে। তাই এ বছর দেবী দুর্গা আসছেন কার্তিক মাসে অর্থাৎ হেমন্তে। ‘শারদীয়’ দুর্গোৎসব হলেও এ বছর তা আক্ষরিক অর্থে হবে ‘হৈমন্তিক’।

প্রতি তিন বছর অন্তর অন্তর একটি করে এরকম অধিকমাস আসে। সৌর ও চান্দ্র মাসের তিথি গণনার ওপর ভিত্তি করে হিন্দু পঞ্জিকা চালিত হয়। একটি সূর্যবর্ষ ৩৬৫ দিন ও প্রায় ৬ ঘণ্টার হয়ে থাকে। আবার চন্দ্রবর্ষ ৩৫৪ দিনের হয়। এ দুই বর্ষের মধ্যে থাকে ১১ দিনের পার্থক্য। টানা তিন বছরে এটি একমাসের সমান হয়ে যায়। এ অতিরিক্ত মাসের পার্থক্য দূর করার জন্যই প্রতি তিন বছরে একবার অতিরিক্ত মাস আসে। একেই অধিকমাস বলা হয়। এ বছর আশ্বিন মাসই হলো সেই অধিকমাস। অধিকমাসকে মলোমাস বলা হয়, কারণ গোটা মাসে কোনো সূর্য সংক্রান্তি থাকে না।

আবার প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, একই মাসে দুটি অমাবস্যাকেও মলোমাসের অন্যতম কারণ মনে করা হয়। তাই এ বছর মহালয়ার দিন নিয়ম মেনেই পিতৃতর্পণসহ অন্যান্য ধর্মীয় আচার পালিত হয়েছে। কেবল অন্যান্য বছরের মতো মহালয়া থেকে ৬ দিনের দূরত্বে দুর্গাষষ্ঠী উদযাপিত না হয়ে এ বছর মহালয়া থেকে ৩৫ দিন দূরত্বে দেবী দুর্গার অকালবোধন অনুষ্ঠিত হবে। অনুরূপভাবে পরবর্তীতে আবার ২০৩৯ সালেও এরকম পরিস্থিতি তৈরি হবে। তবে এবারই যে প্রথম এমনটি হচ্ছে তা কিন্তু নয়, এর আগে ১৯৮২ ও ২০০১ সালেও একই কারণে মহালয়া ও দুর্গাপূজা শুরুর ব্যবধান প্রায় একমাস হয়েছিল।

এ বছরের দুর্গাপূজা দুটি প্রধান কারণে অন্যান্য বারের তুলনায় একটু আলাদাভাবে পালিত হচ্ছে। একটি তো এই মহালয়া ও মহাষষ্ঠীর মাঝে দীর্ঘ ব্যবধান, অপরটি হলো করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে সৃষ্ট পরিবর্তিত পরিস্থিতি। করোনাভাইরাস সংক্রমণের জন্য পারিপার্শ্বিক উৎসাহ-উদ্দীপনা, উৎসবমুখর পরিবেশ ইত্যাদি কিছুটা হলেও এবার একটু স্তিমিত। তা সত্ত্বেও দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে আহ্বানের জন্য অধীর আগ্রহে প্রহর গুনছেন শত কোটি সনাতন ধর্মাবলম্বী ভক্তবৃন্দ।

অশুভ শক্তির বিনাশ ও শুভ শক্তির প্রতিষ্ঠা লাভ হয়ে সব ধরনের হিংসা-হানাহানিকে দূরে ঠেলে শান্তির বার্তা পৌঁছে যাক সমস্ত সৃষ্টির মাঝে। এ প্রত্যাশা রইলো।

এসইউ/এএ/পিআর

আরও পড়ুন