ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ফিচার

চা দিবস

বিশ্বজুড়ে দৈনিক ২ বিলিয়ন কাপ চা পান করেন মানুষ

ফিচার ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৫:০২ পিএম, ২১ মে ২০২৩

আজ ২১ মে বিশ্ব চা দিবস। তবে চা প্রেমীদের কাছে প্রতিদিনই চা দিবস। অনেকের দিনটাই শুরু হয় ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে। এরপর সারাদিন আরও কয়েক দফা চলে চা পর্ব। কাজের ফাঁকে, বিকেলে বন্ধুদের আড্ডায়, সন্ধ্যায় বাড়িতে ফিরে বারান্দায় বসে প্রিয়জনের সঙ্গে গল্পের ফাঁকে চলে চা বিলাস।

সারাদিন নানান স্বাদের চায়ে তৃষ্ণা মেটান চা প্রেমীরা। দুধ, চিনি দিয়ে চা খান অনেকে। গোটা বিশ্বে প্রায় ৩০০০ রকমের চা পাওয়া যায়। একেক চায়ের একেক রকম বৈশিষ্ট্য। দিনে অনেকে ৪-৫ কাপ চা পান করেন। কেউবা এর চেয়েও বেশি। তবে জানেন কি? বিশ্বজুড়ে প্রতি সেকেন্ডে ২৫ হাজার কাপ চা পান করেন মানুষ। এই সংখ্যা দিন শেষে হয় ২০০ কোটি।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

দুধ, চিনি, বিভিন্ন মসলা দিয়ে তৈরি চা আমাদের রসনা মেটালেও চায়ের রেসিপি কিন্তু একেবারেই এমন ছিল না। চা আবিষ্কার হয়েছিল সাত সমুদ্র তের নদীর পাড় চীনে। সেখানে চায়ের ব্যবহার শুরু হয় ২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। তবে তা পানীয় হিসেবে নয়, সেসময় চায়ের পাতা ব্যবহার হতো কেক তৈরিতে। সেটাও আবার মৃতদের জন্য।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

মধ্য চীনের ইয়াং লিং সমাধিস্তম্ভে প্রাচীনকালে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াতে যেসব নৈবেদ্য দেওয়া হতো তার মধ্যে পাতা দিয়ে তৈরি শুকনো কেক দেখা যেতো। এইসব পাতার মধ্যে থাকা ক্যাফেইন এবং থিয়ানিন প্রমাণ করে যে, সেগুলো প্রকৃতপক্ষে ছিল চা পাতা যা কি না মৃতদের সঙ্গে দিয়ে দেওয়া হতো তাদের পারলৌকিক জীবনের অনুষঙ্গ হিসেবে।

আরও পড়ুন: উপমহাদেশে জাদুঘরের উৎপত্তি

বিজ্ঞাপন

তবে চীনের প্রচলিত একটি পৌরাণিক গল্প মতে, ১৭ শতাব্দীতে সেখানে বাস করতেন শেন মং নামের এক কৃষক। ঘুরে বেড়িয়ে নতুন ফসল আবিষ্কার করা ছিল তার নেশা। তখন বর্তমান প্রচলিত খাদ্য শস্য যেমন- ধান, গম, যব ইত্যাদির প্রচলন ছিল না। শেন মং একদিন খাবার উপযোগী শস্য এবং লতাপাতা আবিষ্কারের জন্য বনে বনে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। অপরিচিত কোনো শস্য বা লতাপাতা পেলে সেগুলো চেখে দেখছিলেন। যদিও সবগুলোই খাবার উপযোগী ছিল না। এভাবে সারাদিন বিভিন্ন ফসল আবিষ্কার অভিযানে নিজের অজান্তেই শরীরে ৭২ এরও বেশি প্রকারের বিষ প্রবেশ করিয়ে ফেলেন।

সন্ধ্যায় একটি গাছের তলায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন মং। বিষক্রিয়া দ্রুত তার শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে। বসে বসে মৃত্যুর প্রহর গুণছেন। তারপর হঠাৎ কোথা থেকে যেন একটি অপরিচিত পাতা এসে মুখে পড়লো। অবচেতন মনে পাতাটি চিবতে লাগলেন এবং সেই ভেষজ পাতার গুণে শরীর থেকে বিষক্রিয়া বিদায় নিল, পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠলেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

চীনারা দাবি করে, সেই পাতাটি ছিল মূলত চা পাতা। আর এভাবেই হয় সর্বপ্রথম চা এর আবিষ্কার। কিন্তু সত্যি বলতে এটি নিছক গল্প মাত্র। বৈজ্ঞানিক মতে, বিষক্রিয়া কমানোর কোনো ক্ষমতা চায়ের নেই। কিন্তু গল্পটি থেকে বোঝা যায়, প্রাচীনকাল থেকেই চীনে চায়ের কদর কত বেশি! তখন চায়ের কাঁচা পাতা ব্যবহার হতো ওষুধ হিসেবে।

চীনে প্রায় ছয় হাজার বছর আগে চায়ের চাষ শুরু হয়। আরও সুনির্ধারিত ভাবে বলতে গেলে মিশরের ফারাওরা যখন গিজা পিরামিড তৈরি করেন, তারও দেড় হাজার বছর আগে থেকে চীনে চায়ের চাষ হয়। চমৎকার বিষয় হলো, সেই প্রাচীন কালের চা গাছ এবং এখনকার চা গাছের মধ্যে বিন্দুমাত্র কোনো তফাৎ নেই। তবে চা খাওয়ার রীতি তখন ছিল একদমই ভিন্ন। চা তখন ব্যবহার হত এক ধরনের শাক হিসেবে।

আরও পড়ুন: বিশ্ব গাধা দিবস আজ

বিজ্ঞাপন

চা খাদ্য থেকে পানীয়ের রূপ পায় মাত্র পনেরশো বছর পূর্বে। চীনা সম্রাট শেন নুং প্রথম এই পানীয়টির স্বাদ গ্রহণ করেছিলেন। একবার যুদ্ধের ময়দানে তিনি এবং তার সৈন্যরা একটি গাছের নীচে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেসময় আশপাশে অনেক চা গাছ ছিল। সৈন্যরা যখন পানি ফুটাচ্ছিল তখন কয়েকটি চা পাতা পড়ে যায় পানির মধ্যে। কিছুক্ষণ পর পানির রং বদলে সুঘ্রাণ বেড়িয়ে আসে। সেখান থেকে তৈরি হয় চা এবং এরপরই চা সর্বাধিক ব্যবহৃত পানীয়তে পরিণত হয়েছে।

পানীয় হিসেবে চায়ের প্রস্তুত প্রণালীর ওপরও চলে দীর্ঘদিন গবেষণা। চা পাতাকে তাপ দিয়ে এক বিশেষ ধরনের কেক তৈরি করে, সেটিকে পাউডারের মত চূর্ণ করে গরম পানির সঙ্গে মিশিয়ে মো নামের এক ধরনের পানীয় তৈরির সংস্কৃতি চালু হয়। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই চায়ের জনপ্রিয়তা পুরো চীনে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে, চীনে একটি স্বতন্ত্র চা সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। এমনকি গল্প ও কবিতার বিষয় হিসেবে চা স্থান পায়। চিত্রশিল্পীদের জন্য চা একটি শিল্পমাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়। চায়ের উপর ফেনা তৈরি করে তারা অসাধারণ সব চিত্রকর্ম তৈরি করতেন, অনেকটা এখনকার কফির ওপরে যেমন ক্রিমআর্ট দেখা যায় তেমনটা।

বিজ্ঞাপন

চীন থেকে জাপানে আসে চা। খ্রিস্টীয় নবম শতকে এক জাপানী সন্ন্যাসী সর্বপ্রথম জাপানে চা গাছ নিয়ে আসেন। চায়ে জাপানীরা এতই মজে গিয়েছিল যে তারা নিজস্ব চা উৎসবের আয়োজন করে। চতুর্দশ শতাব্দীতে মিং রাজবংশের শাসনামলে চীনের সেরা তিন রপ্তানি পণ্য ছিল পোর্সেলিন, রেশম ও চা।

আরও পড়ুন: চায়ের গল্প

ষোড়শ শতকে ডাচরা প্রচুর পরিমানে চীন থেকে চা নিয়ে আসে ইউরোপের ব্যাপক প্রচলন শুরু হয়। পৃথিবীব্যাপী চায়ের ব্যাপক বিস্তৃতির জন্য অনেকেই একজন পর্তুগিজ নারীকে কৃতিত্ব দেন, তিনি রানি ক্যাথেরিন অব ব্রাগানজা। রানি ক্যাথেরিন ছিলেন চায়ের অসম্ভব ভক্ত। ১৬৬১ সালে তার সঙ্গে ব্রিটেনের রাজা দ্বিতীয় চার্লসের বিয়ে হয়। এবং ব্রিটিশ রাজপরিবারে চায়ের প্রবেশ ঘটে।

বিজ্ঞাপন

এরপর বিশ্বব্যাপী ব্রিটিশরা বিশাল উপনিবেশ সৃষ্টি করার পাশাপাশি সেসব স্থানে চায়ের প্রচলনও ঘটায়। ব্রিটিশরা প্রথমে রুপার বিনিময়ে চীন থেকে চা নিয়ে আসতো। বঙ্গ প্রদেশে কালো চায়ের চাষ ব্রিটিশ শাসনামলের সময় শুরু হয়েছিল। ইউরোপীয় ব্যবসায়ীরা ১৮৪০ সালে এই উপমহাদেশের সর্বপ্রথম চা বাগান বন্দর নগরী চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠা করে, যখন কলকাতা বোটানিক্যাল গার্ডেন থেকে চীনা চায়ের গাছ এনে চট্টগ্রাম ক্লাবের পাশে রোপণ করা হয়। বাংলাদেশে চায়ের উৎপাদন শুরু ১৮৪৩ সালে। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তীরে প্রথম চা তৈরি এবং পান করা হয়। বাণিজ্যিকভাবে প্রথম চা চাষ শুরু হয় ১৮৫৭ সালে সিলেটের মালনীছড়া চা বাগানে।

২১ মে আন্তর্জাতিক চা দিবস পালন করা হলেও বাংলাদেশের জাতীয় চা দিবস হচ্ছে ৪ জুন। যদিও প্রথমে ১৫ ডিসেম্বর ছিল বিশ্ব চা দিবস। ২০০৫ সালে, চা উৎপাদনকারী দেশগুলো আন্তর্জাতিক চা দিবস উদযাপনের জন্য একত্রিত হয়। এই দেশগুলো হলো শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, কেনিয়া, মালয়েশিয়া এবং উগান্ডা। ২০১৯ সালে, চা সংক্রান্ত আন্তঃসরকারি গোষ্ঠী ২১ মে আন্তর্জাতিক চা দিবস উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়।

বিশ্বের এই দ্বিতীয় সর্বাধিক ব্যবহৃত পানীয়ের পুষ্টিগত গুরুত্বের প্রতি সচেতনতা বাড়াতে জাতিসংঘের উদ্যোগে এ দিবসটি পালিত হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে এ দিবসটি উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে চা-শিল্পে জাতির পিতার অবদান এবং চা বোর্ডে যোগদানের তারিখকে স্মরণীয় করে রাখার লক্ষ্যে।

সূত্র: ন্যাশনাল টুডে

কেএসকে/এএসএম

আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন